বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

করোনার নতুন ধরন সবচেয়ে মারাত্মক?

  •    
  • ২৬ নভেম্বর, ২০২১ ১২:২৪

কোভিডের কয়েকটি ধরন গবেষণাপত্রে অনেক ভয়ংকর হিসেবে উঠে এলেও বাস্তবে তেমন আহামরি ক্ষমতাধর নয়- এমন উদাহরণ কম নয়। চলতি বছরের শুরুতেই বিশ্বে মানুষের উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল করোনার বেটা প্রজাতি। কারণ মানবদেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে ফাঁকি দেয়ায় সেরা ছিল বেটা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বেটাকে ছাড়িয়ে যায় ডেল্টা; বিশ্বজুড়ে করোনা শনাক্তদের বেশির ভাগই আক্রান্ত হয়েছিল ডেল্টায়। বি.ওয়ান.ওয়ান.ফাইভটুনাইনের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর সময় না এলেও সুনির্দিষ্ট কিছু কারণ উদ্বেগ বাড়াচ্ছে বিজ্ঞানীদের।

করোনাভাইরাসের রূপ পরিবর্তিত নতুন ধরনে আবারও উদ্বেগ ছড়িয়েছে সারা বিশ্বে। বলা হচ্ছে- এখন পর্যন্ত করোনার যত পরিবর্তিত রূপ চিহ্নিত হয়েছে, তাদের মধ্যে সাউথ আফ্রিকায় প্রথম শনাক্ত বি.ওয়ান.ওয়ান.ফাইভটুনাইন ভাইরাসটি সবচেয়ে বেশি পরিবর্তিত।

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, এযাবৎকালে আবিষ্কৃত করোনার পরিবর্তিত রূপগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণও এই নতুন ধরনটি। এটিতে এত বেশিবার পরিবর্তন ঘটেছে যে একজন বিজ্ঞানী বিষয়টিকে আখ্যায়িত করেছেন ‘ভয়ংকর’ বলে। আরেক বিজ্ঞানী নতুন ধরনটিকে এখন পর্যন্ত দেখা করোনার সবচেয়ে মারাত্মক ধরন বলে উল্লেখ করেছেন।

নতুন ধরনটি এখনও প্রাথমিক পর্যায়েই আছে। যাদের দেহে এটি শনাক্ত হয়েছে, তাদের প্রায় সবাই সাউথ আফ্রিকার একটি প্রদেশের বাসিন্দা। কিন্তু অন্যান্য অঞ্চলেও এটি ছড়িয়েছে বলে আভাস মিলেছে।

আপাতত নতুন ধরনটির বিষয়ে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যেসব প্রশ্নের উত্তর বিজ্ঞানীরা খুঁজছেন, সেগুলো হলো- এটি কত দ্রুত ছড়ায়, টিকার কার্যকারিতাকে ফাঁকি দিতে কতটা সক্ষম এটি এবং একে প্রতিরোধের উপায় কী।

ভাইরাসটি নিয়ে নানা ধারণা থাকলেও স্পষ্ট উত্তর নেই বললেই চলে।

করোনার নতুন ধরন নিয়ে আমরা কী জানি

করোনার বি.ওয়ান.ওয়ান.ফাইভটুনাইন ধরনটিকেও আলফা, ডেল্টার মতো কোনো গ্রিক প্রতীকী নাম দেয়া হতে পারে। শুক্রবারই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) থেকে আসতে পারে এ-সংক্রান্ত ঘোষণা।

বি.ওয়ান.ওয়ান.ফাইভটুনাইন ধরন নাটকীয় মাত্রায় পরিবর্তিত; এতটাই যে ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের উহানে প্রথম শনাক্ত করোনার সঙ্গে সাউথ আফ্রিকায় সবশেষ আবিষ্কৃত নতুন ধরনের কোনো মিলই নেই।

সাউথ আফ্রিকার সেন্টার ফর এপিডেমিক রেসপন্স অ্যান্ড ইনোভেশনের পরিচালক অধ্যাপক তুলিও ডি অলিভেইরা বলেন, ‘করোনার অন্য যেসব ধরন ছড়িয়েছে, সেগুলোর তুলনায় নতুন ধরনটি একেবারেই আলাদা এবং এটি অস্বাভাবিক মাত্রায় পরিবর্তিত।

‘নতুন ধরনটি চমকে দিয়েছে আমাদের। এক লাফে বড় ধরনের বিবর্তনের মধ্য দিয়ে গেছে ভাইরাসটি। আবার সদ্য আবিষ্কৃত এই ধরনটিতেও আরও অনেক পরিবর্তন যোগ হতে পারে বলে ধারণা করছি।’

সংবাদ সম্মেলনে অধ্যাপক অলিভেইরা জানিয়েছেন, এখন পর্যন্ত ৫০টি পরিবর্তন শনাক্ত হয়েছে নতুন ধরনে। এর বহিঃ আবরণীতে থাকা আমিষের যে অংশটি ভাইরাসকে কোষের সঙ্গে যুক্ত থাকতে সাহায্য করে, সেই ‘স্পাইক প্রোটিন’-এর সংখ্যা ৩০টি।

করোনা প্রতিরোধী টিকা মূলত ভাইরাসের এই ‘স্পাইক প্রোটিন’-কেই আক্রমণ করে। কারণ ‘স্পাইক প্রোটিন’ ব্যবহার করেই ভাইরাসটি দেহের কোষে প্রবেশের পথ উন্মুক্ত করে।

ভাইরাস তার যে অংশ ব্যবহার করে প্রথমবার মানবদেহের কোষের সংস্পর্শে আসে, করোনার নতুন ধরনেই সেই অংশে ১০টি পরিবর্তন শনাক্ত করেছেন বিজ্ঞানীরা। বিশ্বজুড়ে আতঙ্ক ছড়ানো আগের ধরনটি, অর্থাৎ করোনার ডেল্টা ভাইরাসে এ পরিবর্তনের সংখ্যা ছিল মাত্র দুই।

একজন রোগীর দেহে প্রাপ্ত ভাইরাসেই এ পরিমাণ পরিবর্তন দেখা গেছে। নতুন এ ধরনটিতে আক্রান্ত ওই রোগী শেষ পর্যন্ত হার মেনেছেন মৃত্যুর কাছে।

ভাইরাসে অনেক পরিবর্তন মানেই যে সেটি খারাপ, তা নয়। এই পরিবর্তনের ফলে কী ঘটছে, তা জানা জরুরি।

বিজ্ঞানীদের উদ্বেগের কারণ হলো করোনার নতুন ধরনটি উহান থেকে ছড়ানো কোভিড নাইনটিনের প্রজাতি হলেও আদি ভাইরাস থেকে নতুনটি একেবারেই ভিন্ন। এর অর্থ হলো কোভিড নাইনটিন প্রতিরোধে তৈরি টিকা নতুন ধরনটির বিস্তার ঠেকাতে একই রকম কার্যকর নাও হতে পারে।

বি.ওয়ান.ওয়ান.ফাইভটুনাইনে শনাক্ত কয়েকটি পরিবর্তন কোভিডের আগের ধরনগুলোতেও দেখেছিলেন বিজ্ঞানীরা। তুলনামূলক বিশ্লেষণে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে যে বি.ওয়ান.ওয়ান.ফাইভটুনাইন সহজে সংক্রমণযোগ্য। অ্যান্টিবডি যেন ভাইরাসটিকে চিনতে না পারে, তেমন কিছু বৈশিষ্ট্যও যুক্ত হয়েছে নতুন ধরনে; ফলে টিকার কার্যকারিতা এর ওপর কম হওয়াই স্বাভাবিক।

উল্টোদিকে বি.ওয়ান.ওয়ান.ফাইভটুনাইনে শনাক্ত কয়েকটি পরিবর্তন একেবারেই নতুন, অর্থাৎ কোভিডের আগের বিভিন্ন ধরনে এসব পরিবর্তন ছিল না। এসব পরিবর্তনের ফল অজানা।

সাউথ আফ্রিকার ইউনিভার্সিটি অফ কোয়াজুলু-নাতালের অধ্যাপক রিচার্ড লেসেলস বলেন, ‘সংক্রমণে আগের চেয়েও বেশি সক্ষমতা অর্জন করেছে নতুন ধরনটি। মানুষ থেকে মানুষে ছড়ানোর ক্ষমতা তো বেড়েছেই, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকেও আক্রান্ত করার সক্ষমতা থাকতে পারে এর।’

অবশ্য কোভিডের কয়েকটি ধরন গবেষণাপত্রে অনেক ভয়ংকর হিসেবে উঠে এলেও বাস্তবে তেমন আহামরি ক্ষমতাধর নয়- এমন উদাহরণ কম নয়।

চলতি বছরের শুরুতেই বিশ্বে মানুষের উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল করোনার বেটা প্রজাতি। কারণ মানবদেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে ফাঁকি দেয়ায় সেরা ছিল বেটা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বেটাকে ছাড়িয়ে যায় ডেল্টা; বিশ্বজুড়ে করোনা শনাক্তদের বেশির ভাগই আক্রান্ত হয়েছিল ডেল্টায়।

ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রবি গুপ্তা বলেন, ‘বেটার একটা শক্তি ছিল, তা হলো রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে ফাঁকি দেয়া। বাকি সবদিক থেকেই দুর্বল ছিল ভাইরাসটি। আর ডেল্টার সংক্রমণ ক্ষমতা বেশি ছিল; রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে ফাঁকি দেয়ার দিক থেকে মৃদু থেকে শক্তিশালী মাত্রায়।

তাই বৈজ্ঞানিক গবেষণায় স্পষ্ট চিত্র মিললেও প্রকৃত পরিস্থিতি কী, তা জানা যাবে বিশ্বজুড়ে ভাইরাসটির গতিবিধি পর্যবেক্ষণের পর।

চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর সময় না এলেও বি.ওয়ান.ওয়ান.ফাইভটুনাইনে সুনির্দিষ্ট কিছু কারণ উদ্বেগ বাড়াচ্ছে বিজ্ঞানীদের।

সাউথ আফ্রিকার গউতেং প্রদেশে বি.ওয়ান.ওয়ান.ফাইভটুনাইনে নিশ্চিত আক্রান্ত ৭৭ জন রোগী শনাক্ত হয়েছে; চারজন বতসোয়ানায় আর হংকংয়ে একজন- যিনি সাউথ আফ্রিকা ভ্রমণ করে দেশে ফিরেছেন।

কিন্তু ভাইরাসটি আরও অনেক অঞ্চলে, আরও বড় পরিসরে ছড়িয়েছে বলে ইঙ্গিত পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা।

শনাক্তকরণ পরীক্ষায় করোনার নতুন ধরনটিতে আক্রান্তদের ক্ষেত্রে ‘এস-জিন ড্রপআউট’ নামে পরিচিত অদ্ভুত একটি বৈশিষ্ট্যের দেখা মিলছে। জিনগত বিশ্লেষণ সম্পন্ন ছাড়াই এই ‘এস-জিন ড্রপআউট’ বৈশিষ্ট্য শনাক্তের মাধ্যমেই মানবদেহে বি.ওয়ান.ওয়ান.ফাইভটুনাইনের উপস্থিতি নিশ্চিত করা সম্ভব।

এই পদ্ধতিতে ধারণা মিলছে যে গউতেংয়ে সাম্প্রতিক সময়ে করোনা শনাক্ত ব্যক্তিদের ৯০ শতাংশই বি.ওয়ান.ওয়ান.ফাইভটুনাইনে আক্রান্ত। সাউথ আফ্রিকার বেশির ভাগ প্রদেশে করোনার নতুন ধরনটি পৌঁছে গেছে বলেও মনে করা হচ্ছে।

কিন্তু এসব তথ্যে এটা স্পষ্ট নয় যে বি.ওয়ান.ওয়ান.ফাইভটুনাইন ভাইরাসটি ডেল্টার চেয়েও দ্রুতগতিতে ছড়ায় কি না; টিকার মাধ্যমে অর্জিত রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে ফাঁকি দিতে এটি আগের অন্য ধরনগুলোর বেশি সক্ষম কি না।

সাউথ আফ্রিকার মোট জনগোষ্ঠীর বড় অংশ কোনো না কোনো সময় করোনায় আক্রান্ত হয়েছে; ২৪ শতাংশেরই করোনা প্রতিরোধী টিকা গ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। এর চেয়েও বেশি হার যেসব দেশে, সেসব দেশে বি.ওয়ান.ওয়ান.ফাইভটুনাইন ছড়াবে কি না কিংবা কীভাবে ছড়াবে- সে বিষয়টিও স্পষ্ট নয়।

সবমিলিয়ে বি.ওয়ান.ওয়ান.ফাইভটুনাইনের বিষয়ে মানুষের জ্ঞানভাণ্ডারে বিশাল ফাঁক থেকে গেলেও নিশ্চিন্ত থাকার উপায় নেই। বি.ওয়ান.ওয়ান.ফাইভটুনাইনকে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ এবং একে নিয়ে করণীয় ও কখন কী করতে হবে- সেসব প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করছেন বিজ্ঞানীরা।

কারণ বৈশ্বিক মহামারির মূল শিক্ষাই হলো- সব প্রশ্নের উত্তর পাওয়া পর্যন্ত সব সময় বসে থাকার উপায় নেই মানুষের।

এ বিভাগের আরো খবর