যুক্তরাষ্ট্রে মিসৌরির ক্যানসাসের বাসিন্দা কেভিন স্ট্রিকল্যান্ডের বয়স এখন ৬২ বছর। গত ৪৩ বছর ধরেই তিনি দাবি করে আসছেন- ল্যারি ইনগ্রাম, জন ওয়াকার ও শেরি ব্ল্যাক নামে তিন তরুণ যখন খুন হন- তখন তিনি টেলিভিশন দেখছিলেন। সেই সময়টিতে কেভিন ছিলেন, সদ্য কৌশোর পেরোনো টগবগে যুবক।
কিন্তু বিচারে তিনজনকে হত্যার দায়ে দোষী সাব্যস্ত করা হয় কেভিনকে। এই রায় দেয়া হয়েছিল একজনের সাক্ষ্যর ওপর ভিত্তি করে। নিজেকে প্রত্যক্ষদর্শী দাবি করে সেই সাক্ষী বলেছিলেন, যে চার ব্যক্তি ওই তিন তরুণকে গুলি করে হত্যা করেছিলেন তাদের মধ্যে কেভিনও ছিলেন।
স্কাই নিউজ জানিয়েছে, কেভিনকে দোষারোপ করা সেই নারী ২০১৫ সালে মৃত্যুর আগে নিজের সাক্ষ্য প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন। শুধু তাই নয়, তিনি দাবি করেন- বিচার চলার সময় কেভিনকে দোষী হিসেবে সাক্ষ্য দিতে পুলিশই তাকে চাপ দিয়েছিল।
বিচারে হত্যাকাণ্ডের স্থানে কেভিনের শারীরিক উপস্থিতির কোনো প্রমাণ পায়নি আদালত। এমনকি এই হত্যাকাণ্ডে দণ্ডিত অন্য দুই খুনিও দাবি করেছিলেন, হত্যাকাণ্ডের সময় কেভিন তাদের সঙ্গে ছিলেন না।
তারপরও সেই হত্যাকাণ্ডের দায়ে ১৯৭৯ সালে দুটি বিচারের মুখোমুখি হন কেভিন। প্রথমবার একজন কৃষ্ণাঙ্গ নারী বিচারক তার খালাসের জন্য সুপারিশ করেছিলেন। কিন্তু পরবর্তী ধাপে বিচারকদের সবাই ছিলেন শ্বেতাঙ্গ। তারা কৃষ্ণাঙ্গ কেভিনকে তিনটি হত্যার জন্যই দোষী সাব্যস্ত করেছিলেন এবং ৫০ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছিলেন।
৪৩ বছর পর যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় গত মঙ্গলবার নিজের মুক্তির খবরটি জেলে বসেই পেয়েছেন কেভিন। সেই সময়টিতেও তিনি টেলিভিশন দেখছিলেন। আর ওই টেলিভিশনেই তার মুক্তির খবরটি প্রচারিত হয়।
মুক্তির অনুভূতি বর্ণনা করতে গিয়ে কেভিন বলেন, ‘আনন্দ, দুঃখ আর ভয়। আমি বোঝার চেষ্টা করছি, এই তিনটিকে একত্রে কিভাবে রাখা যায়।’
মুক্তির পর জেল থেকে বেরিয়ে সবার আগে মায়ের কবর দেখতে যান তিনি। প্যারোলের সুযোগ না থাকায় মায়ের শেষকৃত্যানুষ্ঠানেও অংশ নিতে পারেননি তিনি।
কেভিনের মুক্তির জন্য সবচেয়ে বড় উদ্যোগটি ছিল মিসৌরি অঙ্গরাজ্যের জ্যাকসন কাউন্টির বিচারক জিন পিটারস বেকারের। বেকারই প্রথম তাকে নির্দোষ দাবি করে মামলাটি পুনর্বিবেচনার আবেদন করেছিলেন। কিন্তু মিসৌরির সুপ্রিম কোর্ট তার এই আবেদন প্রত্যাখ্যান করেন।
গত আগস্টে একটি নতুন আইনের আওতায় জ্যাকসন কাউন্টির একটি আদালতে মামলা পুনর্বিবেচনার আবেদন করেন বেকার। এই আদালতেই ৪৩ বছর আগে দোষী সাব্যস্ত হয়েছিলেন কেভিন।
মজার ব্যপার হলো- নতুন আইনের আওতায় কেভিনই প্রথম এবং একমাত্র জেল খাটা ব্যক্তি- যিনি নির্দোষ প্রমাণীত হয়েছেন।