অস্ট্রেলিয়ার পার্লামেন্টে বৃহস্পতিবার ধর্মীয় বৈষম্যবিরোধী একটি বিল উপস্থাপন করেছেন প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন। বিতর্কিত বিলটি পাস হলে ধর্মীয় বিশ্বাসভিত্তিক বিভিন্ন সংগঠন জনবল নিয়োগ ও সদস্য নিবন্ধনের ক্ষেত্রে সমগোত্রীয়দের অগ্রাধিকার দিতে পারবে।
অনেক বছর ধরেই অস্ট্রেলিয়ায় ধর্মীয় স্বাধীনতার বিষয়টি বহুল আলোচিত। গির্জা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কর্মক্ষেত্রে প্রাসঙ্গিক ধর্মবিশ্বাস নিয়ে নিজেদের মনোভাব প্রকাশ করতে পারেন না বলে অভিযোগ রয়েছে অনেকের।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, এমন পরিস্থিতিতে সাধারণ নির্বাচনের কয়েক মাস আগে পার্লামেন্টে কথিত ধর্মীয় বৈষম্যবিরোধী বিলটি আনা হলো। প্রস্তাবিত এ বিলকে ধর্মপ্রাণ ভোটারদের সমর্থন আদায়ের কৌশল হিসেবে দেখছেন অনেকে।
অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী জানান, কর্মক্ষেত্রে যারা নিজেদের ধর্মবিশ্বাস প্রকাশ করতে চান, তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে বিলটি আনা হয়েছে। নিয়োগদাতা যেন কোনো রকম আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন না হয়, তা নিশ্চিত করা সাপেক্ষে কর্মীরাও নিজেদের বিশ্বাস নিয়ে কথা বলতে পারবেন।
পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষে বিলটি উপস্থাপনের সময় ধর্মপ্রাণ খ্রিষ্টান স্কট মরিসন বলেন, ‘শুধু ধর্মবিশ্বাস আলাদা বলে কেউ বাতিলের খাতায় চলে যাবে, নিপীড়নের শিকার হবে কিংবা অপমানিত হবে- এমন হওয়া উচিত নয়।’
তবে আইনটির আওতায় ‘ধর্মবিশ্বাস প্রকাশের নামে’ নাগরিকরা কাউকে হুমকি দিতে, ভয়ভীতি দেখাতে, হয়রানি বা অপমান করতে পারবে না বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
অস্ট্রেলিয়ায় বিদ্যমান লিঙ্গবৈষম্য আইনে সমকামী শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের বহিষ্কার ও বরখাস্ত করার অনুমতি দেয়া হয়েছে। ২০১৮ সালে আইনটি সংশোধনের আহ্বান জানিয়েছিলেন মরিসন।
অস্ট্রেলিয়ার এলজিবিটি (লেসবিয়ান, গে, বাইসেক্সুয়াল ও ট্রান্সজেন্ডার) সম্প্রদায়ও আইনটি সংস্কারের পক্ষে। কিন্তু নতুন বিলটির বিরোধিতা করছে তারা।
তাদের অভিযোগ, প্রস্তাবিত আইনে ধর্মবিশ্বাসের ভিত্তিতে নিয়োগ ও সদস্য নিবন্ধনে অনুমতি দেয়ায় সমকামী শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের প্রতি বৈষম্য আরও বাড়বে।
বিতর্কিত বিলটি নিয়ে বিভক্তি তৈরি হয়েছে পার্লামেন্টেও। সরকারদলীয় রক্ষণশীল কয়েকজন আইনপ্রণেতা বিলের বিরুদ্ধে ভোট দেয়ার হুমকি দিয়েছেন। আগে করোনাভাইরাস প্রতিরোধী টিকাবিষয়ক রাষ্ট্রীয় বিধিনিষেধ প্রত্যাহারে দাবি জানিয়েছেন তারা।
পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষে আগামী সপ্তাহে ভোটের জন্য উঠতে পারে বিলটি। কোনোভাবে এ ধাপ উতরে যেতে পারলেও আইন হিসেবে কার্যকরে অনেক ধাপ পেরোতে হবে বিলটিকে।
দীর্ঘ পর্যবেক্ষণের পর ২০২২-২৩ সালের কোনো সময়ে পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ সিনেটে ভোটের জন্য তোলা হতে পারে বিলটি।
অস্ট্রেলিয়ার পার্লামেন্টে চলতি বছরের শেষ পাক্ষিক অধিবেশন চলছে। ২০২২ সালে নতুন অধিবেশনের আগেই নির্বাচনের ডাক দিতে পারেন মরিসন। কথিত ধর্মীয় বৈষম্যবিরোধী আইনটি নিয়ে এগোতে হলে ২০২২ সালে মে মাসের আগেই নতুন সরকার গঠন করতে হবে তাকে।