ভারতে বিতর্কিত তিনটি কৃষি আইন প্রত্যাহারের লক্ষ্যে পার্লামেন্টে বিল আনতে যাচ্ছে কেন্দ্রীয় সরকার। কৃষকদের কাছ থেকে সরকারিভাবে কৃষিপণ্য ক্রয়ের ক্ষেত্রে ন্যূনতম মূল্য (এমএসপি) নির্ধারণ ইস্যুতে দোটানায় আছে দিল্লি।
সরকারি সূত্রের বরাত দিয়ে এনডিটিভির প্রতিবেদনে জানানো হয়, তিনটি কৃষি আইন বাতিলে সরকারের বিল প্রণয়নের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে বিলটি।
কৃষিবিষয়ক তিনটি পৃথক আইন বাতিলে একটি সামগ্রিক বিল প্রণয়ন করেছে মোদি সরকার।
কৃষকদের কাছ থেকে পণ্য ক্রয়ে সরকারের মিনিমাম সাপোর্ট প্রাইস বা এমএসপির বিষয়টি সাধারণ বিধিমালা হিসেবে বিলে উল্লেখ করা হবে; নাকি কৃষকদের দাবি অনুযায়ী এমএসপির বিষয়ে সুনির্দিষ্ট বিধিমালা থাকবে- সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার অপেক্ষায় রয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়।
প্রস্তাবিত বিলে বাতিল হতে যাওয়া তিনটি কৃষি আইন সংশ্লিষ্ট সব ধরনের সরকারি প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়ার কথা বলা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলোর নেয়া সব সিদ্ধান্তও অকার্যকর হিসেবে গণ্য হবে।
গত ১৯ নভেম্বর জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে আইন তিনটি প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। বছরের বেশি সময় ধরে রাজপথে কৃষকদের অনড় অবস্থান, বিক্ষোভ-প্রতিবাদের পর আসে ঘোষণাটি।
মোদি জানান, কৃষি আইনগুলো কার্যকরের বিষয়ে কৃষকদের সম্মত করাতে পারেনি বলে শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত পাল্টাতে বাধ্য হয় সরকার।
তবে কৃষকদের কল্যাণই এসব আইনের লক্ষ্য ছিল দাবি করে মোদি বলেন, কৃষকদের ছোট একটি অংশ এসব আইনের বিরুদ্ধে ছিল। তাদের আইনগুলোর বিষয়ে যথাযথ ধারণা দিতে দীর্ঘদিন চেষ্টা চালিয়ে গেছে সরকার।
জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে মোদি আরও বলেন, ‘আমাদের তপস্যায় হয়তো কোনো ঘাটতি ছিল, যে কারণে কৃষকদের আইনগুলোর প্রয়োজন সম্পর্কে বোঝাতে পারিনি আমরা। তবে আমরা কাউকে দোষ দিই না। যা আমি করছিলাম, তা কৃষকদের কল্যাণে ছিল। সারা দেশের জন্য সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করছি।’
গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনের আগে আকস্মিক এ ঘোষণা দেন মোদি।
মোদির এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানালেও এখনই বাড়ি ফিরছেন না বলে জানিয়েছেন কৃষক নেতারা। পার্লামেন্টে পাস হওয়া আইন পার্লামেন্টে প্রত্যাহার না হওয়া এবং এমএসপিসহ কৃষকদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট অন্য বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনায় না বসা পর্যন্ত রাজপথে বিক্ষোভ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তারা।
তিন কৃষি আইন বাতিলের দাবিতে ২০২০ সালের নভেম্বর থেকে কৃষকদের আন্দোলন চলছে। প্রায় এক বছর ধরে বাড়ি ফেরেননি বিক্ষোভরত কৃষকরা। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সরকারের বিরুদ্ধে দীর্ঘতম সময় ধরে চলা আন্দোলন কৃষকদের এ বিক্ষোভ।
পাঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তর প্রদেশ ও রাজস্থান থেকে আসা লাখো কৃষক রাজধানী নয়াদিল্লিসংলগ্ন প্রধান মহাসড়কগুলোর ছয়টি স্থানে তাঁবু খাটিয়ে থাকছেন। তীব্র শীত, দাবদাহ, ঝড়-বৃষ্টি এমনকি করোনাভাইরাস মহামারিসহ যাবতীয় প্রতিকূলতা উপেক্ষা করে দাবি আদায়ে অনড় থেকেছেন তারা।
দীর্ঘ এ সময়ে প্রাণ গেছে আন্দোলনরত প্রায় ৭০০ কৃষকের।
২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে পার্লামেন্টে কৃষি আইন তিনটি পাস করে নরেন্দ্র মোদির সরকার। কৃষকদের দাবি, এসব আইনের ফলে বস্তুত কৃষি খাতের বেসরকারীকরণ ঘটবে এবং খাতটি নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়বে। কারণ আইনগুলোতে সরকার নিয়ন্ত্রিত পাইকারি বাজারের চেয়েও কম দামে পণ্য কেনার সুযোগ দেয়া হয়েছে ক্রেতাদের। এতে উৎপাদক পর্যায়ে ন্যূনতম দামও মিলবে না বলে শঙ্কা কৃষকদের।
ক্ষুদ্র চাষিদের মতে, বড় বড় বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে দৌড়ে পিছিয়ে পড়বেন তারা। এতে গম ও চালের মতো প্রধান শস্যগুলো অনেক কম দামে বিক্রি করতে হবে তাদের।
যদিও মোদি সরকারের দাবি ছিল, কৃষি আইন সংস্কারের ফলে কৃষকদের জন্য নতুন সুযোগ ও ভালো দাম পাওয়ার পথ উন্মুক্ত হবে।
১৩০ কোটি জনসংখ্যার দেশ ভারতের অর্ধেক বাসিন্দাই জীবিকা অর্জনের জন্য কৃষিকাজের ওপর নির্ভরশীল। দেশটির ২ দশমিক ৭ ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতির প্রায় ১৫ শতাংশই কৃষিনির্ভর।