নিজেকে ‘ঈশ্বরের নিযুক্ত পুত্র’ দাবি করেন ফিলিপিনো ধর্মযাজক অ্যাপোলো কুইবোলয়। টেলিভিশনে সম্প্রচারিত গির্জার বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তার প্রশংসায় তরুণীদের গলা ছেড়ে গান গাওয়ার পর্ব বেশ নিয়মিত। ভূমিকম্পকে থেমে যাওয়ার আদেশ দিয়েছিলেন তিনি। ২০১৬ সালে প্রেসিডেন্ট রদ্রিগো দুতের্তেকে নির্বাচনী প্রচারের জন্য নিজের প্রাইভেট জেট আর হেলিকপ্টারও ধার দিয়েছিলেন কুইবোলয়।
দুতের্তের আধ্যাত্মিক উপদেষ্টা অ্যাপোলো কুইবোলয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, গির্জার নারী কর্মীদের অশালীন প্রস্তাব দিতেন তিনি। প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলে ওই নারীদের ‘অনন্ত অভিশাপ’ দিয়ে ভয়ও দেখাতেন।
ভাইস নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়, ফিলিপাইনের দক্ষিণাঞ্চলীয় ডাভাও শহরে অবস্থিত ‘কিংডম অফ জেসাস ক্রাইস্ট, দ্য নেইম অ্যাবাভ এভ্রি নেইম’ গির্জার প্রধান অ্যাপোলো কুইবোলয়। তার বিরুদ্ধে করা হয়েছে নারী পাচারের মামলা।
অভিযোগপত্রে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রে গোপনে গির্জার নারী সদস্যদের পাঠানো, সেখানে তাদের ভুয়া দাতব্য কাজের জন্য অনুদান সংগ্রহে বাধ্য করা এবং বাকিদের সঙ্গে যৌন সম্পর্ক স্থাপনসহ নিজের ব্যক্তিগত প্রয়োজন মেটাতেন কুইবোলয়।
কুইবোলয় ও তার ফিলিপাইনভিত্তিক মেগাচার্চের পাঁচজন শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের কৌঁসুলিরা। এ বিষয়ে গত বৃহস্পতিবার একটি বিবৃতি দেয় যুক্তরাষ্ট্রের আইন বিভাগ।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আজীবনের জন্য অভিশপ্ত’ করে দেয়ার ভয় দেখিয়ে কুইবোলয় তার সঙ্গে কিশোরী ও তরুণীদের যৌন সম্পর্ক স্থাপনে বাধ্য করতেন।
এর আগে ২০২০ সালেও কুইবোলয়ের মেগাচার্চের আরও তিন কর্মকর্তার বিরুদ্ধেও একই অভিযোগে মামলা করা হয়।
কুইবোলয় বাদে মামলায় বাকি অভিযুক্তের সবাই নারী।
এ বিষয়ে এখনও কোনো প্রতিক্রিয়া জানাননি এই ধর্মযাজক।
অভিযোগপত্রে বলা হয়, ৭১ বছর বয়সী কুইবোলয় এবং তার সঙ্গে অভিযুক্ত দুই আসামি ১২ থেকে ২৫ বছর বয়সী শিশু, কিশোরী ও তরুণীদের ব্যক্তিগত সহকারী হিসেবে নিয়োগ দিতেন।
এরপর ভুক্তভোগীরা কুইবোলয়ের নাশতা প্রস্তুত করতেন, তার ঘরদোর পরিষ্কার করতেন এবং তার শরীর ম্যাসাজ করে দিতেন। ‘নৈশকালীন দায়িত্ব’ হিসেবে তাদের কুইবোলয়ের সঙ্গে যৌন সম্পর্ক স্থাপনে বাধ্য করা হতো।
অভিযোগপত্রে সুনির্দিষ্টভাবে পাঁচ নারী ভুক্তভোগীর নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এদের মধ্যে তিনজন অভিযোগ করার সময় অপ্রাপ্তবয়স্ক ছিলেন। তাদের বলা হতো, ‘নৈশকালীন দায়িত্ব ঈশ্বরের ইচ্ছা, বিশেষ সুবিধা এবং ঈশ্বরের পুত্র হিসেবে কুইবোলয়ের প্রতি আস্থার প্রদর্শন।’
বিষয়টি নিয়ে অসম্মতি জানালে নারীদের বলা হতো যে ‘তাদের ওপর শয়তান ভর করেছে এবং কথা না শুনলে তারা সারা জীবনের জন্য অভিশপ্ত হয়ে যাবে।’
কোনো কিশোরী বা তরুণী চার্চ ছেড়ে চলে যেতে চাইলে কিংবা রাতে কুইবোলয়ের কাছে যেতে না চাইলে তাদের শারীরিক নির্যাতনও করতেন তিনি। উল্টোদিকে কুইবোলয়কে সন্তুষ্ট করতে পারলে মিলত উপহার।
কোনো ভুক্তভোগী পালিয়ে গেলে তার বিরুদ্ধে সমন জারি করতেন কুইবোলয়। সমনে ভুক্তভোগীদের বিরুদ্ধে অশ্লীল আচরণের অভিযোগ আনা হতো এবং তারা সারা জীবনের জন্য অভিশপ্ত বলে উল্লেখ করা হতো।
তদন্তে উঠে এসেছে, এসব অপকর্মের শুরু ২০০২ সালে। কমপক্ষে ২০১৮ সাল পর্যন্ত অব্যাহত ছিল।
কুইবোলয়সহ আসামিদের তিনজন বর্তমানে পলাতক। কুইবোলয় ফিলিপাইনেই রয়েছেন বলে ধারণা করা হয়।
অভিযোগপত্রে উল্লেখিত তথ্য অনুযায়ী, ফিলিপাইন ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া, নেভাডা ও হাওয়াইয়ে কুইবোলয়ের বাড়ি আছে।
২০১৮ সালে হনলুলুর বিমানবন্দরে স্বল্প সময়ের জন্য আটক করা হয়েছিল কুইবোলয়কে। মোজার ভেতরে নগদ সাড়ে তিন লাখ ডলার ভরে সেগুলো নিয়ে নিজের ব্যক্তিগত বিমানে ওঠার সময় আটক হন তিনি। আগ্নেয়াস্ত্রের সরঞ্জামও উদ্ধার হয় তার কাছ থেকে।
ফিলিপাইনের ডাভাও শহরে কুইবোলয়ের সাবেক এক অনুসারী ২০১৯ সালে তার বিরুদ্ধে ধর্ষণ, শিশু নির্যাতন ও আদম পাচারের অভিযোগ আনেন। সেসব অভিযোগ অস্বীকার করেন কুইবোলয়।
কুইবোলয়ের গির্জা কর্তৃপক্ষের দাবি, বিশ্বজুড়ে গির্জাটির সদস্যের সংখ্যা ৭০ লাখ।