করোনাভাইরাস মহামারির জেরে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর যখন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলতে শুরু করেছে, তখনই আবার বন্ধের নোটিশ দিতে হলো বায়ু দূষণের দাপটে।
দিল্লির বাতাসে ক্রমশ বেড়েই চলেছে বিষের মাত্রা। দীপাবলির ১০ দিন পরও দিল্লিতে দূষণের মাত্রা কমার কোনো লক্ষণ দেখা না যাওয়ায় অনির্দিষ্টকালের জন্য দিল্লি-জাতীয় রাজধানী অঞ্চলের (এনসিআর) সমস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আপাতত অনলাইন মাধ্যমেই ফের পড়াশোনা চালু করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
দীপাবলির সময়ে বাজি পোড়ানো, শিল্পাঞ্চল ও গাড়ি থেকে দূষণ এবং পাশ্ববর্তী রাজ্যগুলোতে ফসলের অবশিষ্ট অংশ পোড়ানোর জেরে যে মাত্রাতিরিক্ত দূষণের সৃষ্টি হয়েছে, তার জেরে বিগত ১০ দিন ধরেই বিষাক্ত ধোঁয়াশার চাদরে ঢাকা পড়েছে দিল্লি-এনসিআর অঞ্চল।
মঙ্গলবারও দিল্লিতে বাতাসের গুণমান বিপজ্জনক পর্যায়েই ছিল। আগামী তিনদিনও দূষিত বাতাসে কোনো প্রকার উন্নতির সম্ভাবনা নেই বলেই জানানো হয়েছে।
মঙ্গলবার রাতে কমিশন ফর এয়ার কোয়ালিটি ম্যানেজমেন্টের তরফে বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে একাধিক নির্দেশিকা জারি করা হয়।
দিল্লি ছাড়া হরিয়ানা, রাজস্থান ও উত্তর প্রদেশ সরকারকেও এই নির্দেশ মানতে হবে বলে জানানো হয়েছে।
দিল্লি-এনসিআর অঞ্চলে দূষণ নিয়ন্ত্রণে অনুষ্ঠিত জরুরি বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। একইসঙ্গে উল্লেখিত প্রত্যেকটি রাজ্য সরকারকে আগামী ২২ নভেম্বরের মধ্যে একটি রিপোর্ট জমা দেয়ার নির্দেশও দেয়া হয়েছে।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার পাশাপাশি বায়ুর গুণমান নিয়ন্ত্রক কমিশন জানায়, ২১ নভেম্বর অবধি দিল্লির সব সরকারি অফিসের অন্তত ৫০ শতাংশ কর্মীকে বাড়ি থেকে কাজ করার সুবিধা দিতে হবে।
বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্ষেত্রেও একই নির্দেশিকা অনুসরণের অনুরোধ করা হয়েছে।
অত্যাবশ্যকীয় পণ্যবাহী ট্রাক ছাড়া অন্য কোনো ট্রাককে ২১ নভেম্বর অবধি দিল্লিতে প্রবেশ করতে দেয়া হবে না।
দিল্লি ও সংলগ্ন অঞ্চলগুলোয় ২১ নভেম্বর অবধি সমস্ত ধরনের নির্মাণকাজে স্থগিতাদেশ জারি করা হয়েছে। তবে এক্ষেত্রে, রেল পরিষেবা বা স্টেশন তৈরির কাজ, মেট্রো রেল করপোরেশনের কাজ, বিমানবন্দর ও আন্তরাজ্য বাস টার্মিনাস তৈরি এবং জাতীয় সুরক্ষা বা প্রতিরক্ষা বিষয়ক প্রকল্পের কাজে ছাড় দেয়া হয়েছে।
দূষণ রোধে দিল্লিতে দীর্ঘদিন ধরেই মেয়াদ উত্তীর্ণ গাড়ি ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল। বর্তমানে দিল্লি ও তার পাশের রাজ্যগুলোকে দৃশ্যমান দূষণকারী গাড়ি ও দূষণ নিয়ন্ত্রণ সার্টিফিকেট ছাড়া গাড়িগুলোকে আটক করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
একইসঙ্গে ট্রাফিক বিভাগকেও নির্দেশ দেয়া হয়েছে, যাতে যথাসম্ভব কম যানজট হয় এবং গাড়ির যাতায়াত সুগম হয়।
এরফলে দূষণের মাত্রা আরও কিছুটা কমানো যাবে, কারণ ট্রাফিক সিগনালেও একাধিক গাড়ির ইঞ্জিন চালু থাকায় দূষণ ছড়ায়।
দিল্লির সীমানার ৩০০ কিলোমিটারের মধ্যে যে ১১টি বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী প্ল্যান্ট রয়েছে, তাদের মধ্যে ৬টি প্ল্যান্ট আপাতত দূষণ নিয়ন্ত্রণে বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এগুলো আগামী ৩০ নভেম্বর অবধি বন্ধ থাকবে বলে জানা গেছে।
বুধবার বায়ুদূষণ সম্পর্কিত একটি মামলার শুনানি হবে সুপ্রিম কোর্টে। আদালত আরও কিছু নির্দেশ দিতে পারে দূষণ নিয়ন্ত্রণে।
বায়ুর মান সেখানে ৫০০ স্কোর ছাড়ায়। যাকে খুবই শোচনীয় অবস্থা বলে জানায় এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স।
বিষয়টি নিয়ে গত শনিবার সুপ্রিম কোর্ট স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় সরকারের ওপর চরম ক্ষিপ্ত হয়। প্রয়োজনে লকডাউন দিয়ে বাতাসের মানের উন্নতি করতে ব্যবস্থা নিতে বলে।
সাধারণত এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্সে ১ থেকে ৫০ অবস্থানে থাকা এলাকাকে ভালো বলা হয়। ১০০ পর্যন্ত সন্তোষজনক, ১০১-২০০ মাঝারি, ২০১-৩০০ খারাপ, ৪০০ পর্যন্ত বেশি খারাপ এবং ৫০০ মাত্রার ওপরে উঠলে সেটাকে বলা হয় গুরুতর।