বলিউডের গজনি সিনেমায় স্মৃতি ভুলে যাওয়ার রোগে ভুগতে দেখা যায় আমির খানকে। একটি মর্মান্তিক দুর্ঘটনার জের ধরে তার এমন পরিণতি হয়। কিছুক্ষণ আগের স্মৃতিও বেমালুম ভুলে যেতেন তিনি। তাই ছোট ছোট নোট রেখে অতীতের কিছু ঘটনা সংরক্ষণ করতেন। সিনেমায় এই রোগটির নাম দেয়া হয় ‘শর্ট টাইম মেমোরি লস’।
দুর্ঘটনাজনিত কারণে কারও স্মৃতিশক্তি হারিয়ে ফেলার ঘটনা তো অহরহই ঘটে। এ ক্ষেত্রে তাদের মাথা থেকে কোনো সুনির্দিষ্ট সময়ের আগের সব স্মৃতি মুছে যায়। এমনও অনেকে আছেন যারা কোনো দুর্ঘটনা ছাড়াই কয়েক দিন আগের স্মৃতিও মনে রাখতে পারেন না। আবার এমনও আছেন, যারা এক মুহূর্ত আগের স্মৃতিও ভুলে যান।
তবে ‘শর্ট টাইম মেমোরি লস’-এর ব্যাপারটি বেশ ব্যতিক্রম। চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় ‘অ্যানটারোগ্রেড অ্যামনেসিয়া’ নামে এই রোগটিতে যারা ভোগেন তারা একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত স্মৃতি ধরে রাখতে পারেন। তারপরই মাথা থেকে সব হাওয়া হয়ে যায়। গজনি সিনেমার কারণেই এই রোগটি অনেকের কাছে কৌতূহলের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। অনেকে জানারও চেষ্টা করেন, বাস্তবে এমন রোগ আছে কি না।
যারা বাস্তবে এমন রোগের নজির খোঁজেন- তাদের কাছে উৎকৃষ্ট উদাহরণ হতে পারেন ড্যানিয়েল স্মিট। মাথায় বড়জোর ছয় ঘণ্টার স্মৃতি ধরে রাখতে পারেন এই জার্মান।
ইন্ডিয়া টাইমস-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়, সিনেমার আমির খানের মতো ড্যানিয়েলের এমন পরিণতির পেছনেও রয়েছে এক মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। ‘লিভিং উইদাউট মেমোরি’ নামে একটি তথ্যচিত্রে নিজের জীবনে ঘটে যাওয়া সেই দুর্ঘটনার কথা বর্ণনা করেছেন তিনি। তবে যেহেতু ছয় ঘণ্টার আগের স্মৃতি তিনি মনে রাখতে পারেন না, তাই অতীতের ঘটনা বলার জন্য তিনি একটি নোটবুকের সহায়তা নিয়েছেন।
তথ্যচিত্রটিতে দেখা যায়, ছয় বছর আগে ছোট বোনের সঙ্গে দেখা করতে যাওয়ার পথে এক মারাত্মক সড়ক দুর্ঘটনার কবলে পড়েন ড্যানিয়েল। এতে তিনি মাথা এবং শরীরের অন্যান্য জায়গায় মারাত্মক আঘাত পান।
নোটবুক পড়ে সেই দিনটি সম্পর্কে ড্যানিয়েল বলেন, ‘আমি একটি হাইওয়েতে ছিলাম। তবে সেখানে ট্রাফিক জ্যাম বেঁধে গিয়েছিল।’
তিনি জানান, জ্যামের কারণে জড়ো হয়ে থাকা গাড়িগুলোর পেছনে গিয়ে দাঁড়ায় তার বাহনটিও। এ সময় পেছন থেকে তুলনামূলক বড় আকারের একটি গাড়ি অন্তত ৮০ মাইল বেগে এসে আঘাত হানে তার গাড়িটিতে।
সেই গাড়িটিতে শিশুসহ একটি পরিবার ছিল। গাড়িটি যিনি চালাচ্ছিলেন তিনি জ্যামের বিষয়টি খেয়ালই করেননি। ওই দুর্ঘটনায় অনেকেই আঘাত পেয়েছিলেন। তবে ড্যানিয়েলের আঘাতটি ছিল সবচেয়ে গুরুতর। প্রাণ বাঁচানোর জন্য তাকে হেলিকপ্টারে করে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। চিকিৎসকরা তার আগের জীবন ফিরিয়ে দিতে সচেষ্ট হন।
সৌভাগ্যক্রমে বেঁচে গেলেও এবং শরীরের ধকল কাটিয়ে উঠলেও স্মৃতিশক্তি আর কখনোই ফিরে পাননি ড্যানিয়েল। ছয় ঘণ্টার আগের ঘটনা বর্ণনা করার জন্য তাই তাকে একটি নোটবুক ব্যবহার করতে হয়।
শর্ট টাইম মেমোরি লস দারুণভাবে প্রভাব ফেলেছিল ড্যানিয়েলের সম্পর্কগুলোর ওপর। মনে রাখতে না পারার কারণে হারিয়ে যায় তার তখনকার বান্ধবীসহ অনেক বন্ধু।
তবে সাবেক সঙ্গী ক্যাথারিনার সঙ্গে দেখা হওয়ার পর ড্যানিয়েল তাকে তার দুর্ঘটনার কথা জানান এবং অন্তত তিন দিনের বেশি তার কাছ থেকে দূরে না থাকার কথা বলেন। কারণ তিন দিনের বেশি কারও সঙ্গে দেখা না হলে ড্যানিয়েল তাকে একেবারেই ভুলে যান।
ক্যাথারিনার সঙ্গে ড্যানিয়েল
কয়েক বছর আগে ড্যানিয়েল আর ক্যাথারিনা একটি শিশুরও জন্ম দেন। এ অবস্থায় তাদের জীবন আরও বড় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। কারণ নিজের সন্তানের কথাই বারবার ভুলে যান ড্যানিয়েল।
এমন ভুলোমন নিয়েও যারা এ ধরনের সমস্যায় ভুগছেন, তাদের নিয়েই এখন কাজ করছেন ড্যানিয়েল।