দুই সপ্তাহের মধ্যেই নতুন একটি পরীক্ষামূলক অভিযান শুরু করতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা। অভিযানটির লক্ষ্য হলো পৃথিবীকে বিপজ্জনক গ্রহাণুর আঘাত থেকে সুরক্ষিত রাখা।
পরীক্ষামূলক এ অভিযানের নাম ‘ডাবল অ্যাস্টারয়েড রিডাইরেকশন টেস্ট’, বা সংক্ষেপে ডার্ট।
বিশ্বে, কিংবা হয়তো গোটা বিশ্বব্রহ্মাণ্ডেই, এ ধরনের পরিকল্পনা এটাই প্রথম। ডিমরফস নামের একটি ঝুঁকিমুক্ত গ্রহাণুতে একটি মহাকাশযান দিয়ে ধাক্কা দেবে নাসা। ডিমরফস আদতে চাঁদের চেয়ে ছোট একটি উপগ্রহ, যার ব্যাস প্রায় ১৬০ মিটার।
অস্ট্রেলিয়ার নাইননিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়, মহাকাশযান দিয়ে ধাক্কা দেয়ার মাধ্যমে ডিমরফসকে তার কক্ষপথ থেকে সরানো সম্ভব কি না, সেটাই এ পরীক্ষার মাধ্যমে দেখতে চান বিজ্ঞানীরা।
ইউনিভার্সিটি অফ কুইন্সল্যান্ডের গ্রহবিষয়ক বিজ্ঞানী ট্রেভার আয়ারল্যান্ড জানান, সম্ভাব্য বিপজ্জনক মহাজাগতিক বস্তুর আঘাত থেকে মানবজাতিকে রক্ষার দুটি উপায় রয়েছে। এর মধ্যে একটি হলো কৃত্রিমভাবে মহাজাগতিক বস্তুটিকে এর কক্ষপথ থেকে বিচ্যুত করা; দ্বিতীয় উপায় হলো গ্রহাণুর ওপর পারমাণবিক বিস্ফোরণ ঘটানো।
অধ্যাপক আয়ারল্যান্ড বলেন, ‘গত কয়েক বছরে পৃথিবীর কাছাকাছি অনেকগুলো গ্রহাণু আবিষ্কার করেছি আমরা। প্রায় সবগুলোই মূলত আবর্জনার স্তুপ। তাই শক্তি প্রয়োগ করা হলে সেগুলো হয়তো স্রেফ উড়ে যাবে। স্তুপ হয়ে থাকবে না।’
বিপুল ময়লা উৎপন্ন হবে বলে পৃথিবীর কাছের কোনো গ্রহাণুতে এ আঘাত করতে চান না বিজ্ঞানীরা।
ডার্ট পদ্ধতির মাধ্যমে বিপজ্জনক গ্রহাণুর গতিপথ বদলে দেয়া পৃথিবীকে রক্ষার সেরা উপায় বলে মনে করেন অধ্যাপক আয়ারল্যান্ড। সময় বা পৃথিবী থেকে গ্রহাণুর দূরত্ব কম না হলে গ্রহাণুর ওপর পাল লাগিয়ে দিয়েও সেটিকে কক্ষপথ থেকে বিচ্যুত করা সম্ভব।
অধ্যাপক আয়ারল্যান্ডের মতে, ‘গ্রহাণুর সঙ্গে ঠিকঠাকভাবে একটি প্যারাশুট যুক্ত করে দেয়া গেলে সেটি সৌর বাতাস ব্যবহার করে গ্রহাণুকে ঠেলতে পারবে। কিন্তু ভারী কিছুর ধাক্কা দিয়ে সরানো বাদে বাকি পদ্ধতিগুলোতে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অনেক সময়ের প্রয়োজন।’
বিপজ্জনক কোনো গ্রহাণুর ঝুঁকিতে কি পৃথিবী আছে?
নাসার গ্রহবিষয়ক প্রতিরক্ষা সমন্বয় কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক ও গ্রহবিষয়ক প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞ কেলি ফাস্টের মতে, নিশ্চিতভাবেই পৃথিবীতে আবারও কোনো গ্রহাণু আঘাত করবে।
নাসার ওয়েবসাইটে তার উদ্ধৃতি দিয়ে লেখা আছে, ‘পৃথিবীতে ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন গ্রহাণুর আঘাত করার ইতিহাস আছে। এটা আবারও ঘটবে।
‘ময়লার স্তুপ, উল্কাখণ্ড, এমনকি ছোট ছোট গ্রহাণু তো সারাক্ষণই পৃথিবীকে আঘাত করছে। তবে ভূপৃষ্ঠে গ্রহাণুর আঘাতের ছাপ বিরল ঘটনা এবং কয়েক শ থেকে হাজার, এমনকি শতকোটি বছরের বিরতিতে একবার এ ধরনের ঘটনা ঘটে।’
পৃথিবীর জন্য বিপজ্জনক বিবেচিত একটি গ্রহাণু হলো বেনু। মহাজাগতিক এই পাথুরে খণ্ডটির ব্যাস ৪৯২ মিটার।
তবে ১০০ বছরের মধ্যে বেনু পৃথিবীতে আঘাত হানছে না।
এরপর এটি ভূপৃষ্ঠে আঘাত হানলে সৃষ্ট গর্তটি হবে বেনুর আয়তনের চেয়ে ১০ থেকে ২০ গুণ পর্যন্ত বড়। আর এর ধ্বংসযজ্ঞ হবে গর্তের আয়তনের চেয়েও ১০০ গুণ বেশি।
অধ্যাপক আয়ারল্যান্ড বলেন, মানবজাতিকে ধ্বংস করে দেয়ার মতো গ্রহাণুর আঘাত বিরল। গ্রহাণুর ব্যাস কমপক্ষে এক কিলোমিটার না হলে এ ধরনের আঘাত সম্ভব নয়।
উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, চিক্সালাব গ্রহাণুর আঘাতের কথা। এটিই সেই গ্রহাণু যার আঘাতে ডাইনোসর বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল। গ্রহাণুটির ব্যাস ছিল নয় দশমিক ছয় কিলোমিটার।
এ পর্যন্ত যত গ্রহাণু নাসা শনাক্ত করতে পেরেছে, সেগুলোর ৪০ শতাংশের ব্যাস ১৪৯ মিটারের বেশি। কিন্তু এগুলোও পৃথিবীর জন্য ঝুঁকিপূর্ণ নয়।
বিজ্ঞানীদের মতে, বড় গ্রহাণুগুলো খুঁজে বের করা জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের জন্য সহজ। তাই এসব গ্রহাণুর বাইরে হঠাৎ কোনো বড় গ্রহাণু এসে পৃথিবীর বুকে আঘাত করবে, তেমন সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।
সৌরজগতে মঙ্গল ও বৃহস্পতি গ্রহের মাঝামাঝিতে বিশাল বৃত্তাকার সারিতে প্রায় ১০ লাখ গ্রহাণু আছে। সেগুলোর কোনোটি পথ হারিয়ে হুট করে পৃথিবীতে আঘাত হানবে, তেমন সম্ভাবনাও দেখছেন না বিজ্ঞানীরা।