ভারতের মহারাষ্ট্রে পুলিশের সঙ্গে এনকাউন্টারে নিহত ২৬ নাকশালের মধ্যে মোস্ট ওয়ান্টেড মিলিন্দ তেলতুম্বেও রয়েছেন। ভারত সরকার তার মাথার দাম নির্ধারণ করেছিল ৫০ লাখ রুপি।
মিলিন্দের আরেকটি পরিচয় হলো- তিনি ভারতীয় পণ্ডিত আনন্দ তেলতুম্বের ভাই। মাওবাদী গেরিলাদের সঙ্গে যোগসূত্রের কারণে বেশ কিছুদিন ধরেই মুম্বাইয়ের তালোজা জেলে বন্দী আছেন আনন্দ।
ভারতীয় গণমাধ্যম জি নিউজ জানিয়েছে, মহারাষ্ট্রের গাডচিরৌলি জেলায় নিষিদ্ধ মাও আদর্শে বিশ্বাসী একদল নকশালকে লক্ষ্যবস্তু করে অভিযান চালায় ভারতীয় পুলিশের সি-সিক্সটি কমান্ডো ফোর্স। পরে ওই জেলার মার্দিনতলা এলাকার গহীন অরণ্যে দুই পক্ষের মধ্যে গোলাগুলি শুরু হয়।
রোববার মহারাষ্ট্র পুলিশের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, দুই পক্ষের যুদ্ধ শেষে ঘটনাস্থল থেকে ২৬ জন নকশালের মরদেহ উদ্ধার করে কমান্ডো পুলিশ। নিহত এই নকশালদের মধ্যে মোস্ট ওয়ান্টেড মিলিন্দ তেলতুম্বেকেও দেখতে পান তারা।
তেলতুম্বে মাওবাদী সিপিআই-এর কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এবং বিদ্রোহী দলটির মহারাষ্ট্র-মধ্যপ্রদেশ-ছত্তিশগড় অঞ্চলের প্রধান। ওই অঞ্চলটিকে মাওবাদীদের জন্য একটি নিরাপদ আবাসে পরিণত করাই ছিল তার লক্ষ্য। সশস্ত্র দেহরক্ষী এবং মাওবাদীদের একটি প্লাটুন নিয়ে বনের মধ্যে চলাফেরা করতেন তিনি।
সাম্প্রতিক সময়ে রাষ্ট্রবিরোধী সন্ত্রাসবাদের অভিযোগে ‘এলগার পরিষদ-মাও সংযোগ’ মামলায় মিলিন্দকে ধরার জন্য ৫০ লাখ রুপি পুরস্কার ঘোষণা করেছিল ভারত সরকার। একই মামলায় এর আগেই গ্রেপ্তার হয়েছেন তার বড় ভাই পণ্ডিত আনন্দ তেলতুম্বে।
মিলিন্দের বড় ভাই পণ্ডিত আনন্দ তেলতুম্বে
‘এলগার পরিষদ-মাও সংযোগ’ মামলায় মিলিন্দের সম্পর্কে লেখা ছিল- ‘ভয়ঙ্কর মাওবাদী’। ১৯৯৬ সাল থেকে তিনি নকশাল আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত। সন্ত্রাসবাদী কর্মকাণ্ডের জন্য ভারতের নিরাপত্তা সংস্থাগুলো তাকে হন্যে হয়ে খুঁজছিল।
এলগার পরিষদ মামলার এক সাক্ষী সম্প্রতি এক বিবৃতিতে দাবি করেছিলেন, মহারাষ্ট্রের নাগপুর জেলায় ধম্মদিপ নামে একটি এলাকায় আত্মগোপনে থেকে সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালাতেন মিলিন্দ। ৭ লাখ রুপি দিয়ে নিজের এক সহকর্মীর নামে ওই এলাকায় একটি বাড়ি কিনেছিলেন। ২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৮ সালের এপ্রিল পর্যন্ত ওই বাড়িতেই তিনি ছিলেন। আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় অনিল, দীপক, শাহিয়ার্দি, কমরেড এম-এর মতো বেশ কিছু ছদ্মনাম ব্যবহার করেছেন মিলিন্দ।
শনিবারের সংঘর্ষের পর ঘটনাস্থল থেকে ২৯টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করে ভারতীয় পুলিশ। এর মধ্যে ৯টি ১২ বোরের বন্দুক, ৯টি স্বয়ংক্রিয় রাইফেল এবং পাঁচটি একে-৪৭ রাইফেলও রয়েছে। আর নিহত নকশালদের মধ্যে ২০ জন পুরুষ ও ৬ জন নারী। এদের মধ্যে মিলিন্দের দেহরক্ষী এক পুরুষ ও এক নারীও রয়েছেন।
সংঘর্ষে চার ভারতীয় কমান্ডো পুলিশও মারাত্মক আহত হন। তাদের উদ্ধারের পর হেলিকপ্টারে করে নাগপুরে নিয়ে যাওয়া হয় চিকিৎসার জন্য।