ভারতে চলমান সশস্ত্র মাওবাদী তৎপরতা মাত্র ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে বড় ধরনের ধাক্কা খেয়েছে। শুক্রবার ভোরে ঝাড়খন্ড রাজ্যের জামশেদপুর থেকে গ্রেপ্তার হন নিষিদ্ধ সংগঠন সিপিআই (মাওবাদী) পলিটব্যুরোর সদস্য বর্ষীয়ান প্রশান্ত বসু ওরফে কিষান দা ও তার স্ত্রী কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শীলা মারান্ডি।
পরদিন শনিবার সকালে মহারাষ্ট্রের গড়চিরৌলির জঙ্গলে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত হয় ২৬ মাওবাদী। তাদের মধ্যে পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মিলিন্দ তেলতুম্বদেও রয়েছেন বলে রোববার নিশ্চিত করেছে পুলিশ। ৫৮ বছর বয়সী তেলতুম্বদেকে ধরতে ৫০ লাখ রুপি পুরস্কার ছিল সরকারের।
গড়চিরৌলিতে সংঘর্ষে নিহতদের মধ্যে সবচেয়ে হাই-প্রোফাইল মাওবাদী ছিলেন মিলিন্দ তেলতুম্বদে। তিনি ছাড়াও শীর্ষ দুই মাওবাদী নেতা ওই সংঘর্ষে নিহত হয়েছেন বলে দাবি করেছে পুলিশ। তারা হলেন গড়চিরৌলি জেলার ইটাপল্লি তহসিলের রেনাদিগুত্তা গ্রামের বাসিন্দা মহেশ ওরফে শিবাজি রাওজি গোট্টা এবং ছত্তিশগড়ের দান্তেওয়াড়া জেলার জাগারগুন্ডা গ্রামের বাসিন্দা লোকেশ ওরফে মাঙ্গু পডিয়াম। দুজনই সিপিআইয়ের (মাওবাদী) গড়চিরৌলি বিভাগীয় কমিটির সদস্য ছিলেন। গোঁট্টার জন্য ১৬ লাখ রুপি এবং পোডিয়ামের জন্য ২০ লাখ রুপি পুরস্কার ঘোষণা করেছিল পুলিশ।
শনিবার ১০ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে চলা সংঘর্ষ ছিল গড়চিরৌলির ইতিহাসে সবচেয়ে বড় এবং দীর্ঘতম। প্রশাসনিক সূত্র জানায়, বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সি-৬০ কমান্ডোদের ১৬টি দল এই অভিযানে অংশ নেয়। এতে মোট ৫০০ জনের বেশি জওয়ান ছিল।
সংঘর্ষে নিহতদের মধ্যে পাঁচজন নারী রয়েছেন। তাদের মধ্যে চারজনের পরিচয় রোববার সকাল পর্যন্ত জানা যায়নি। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত এনকাউন্টারে নিহত ছয়জনের পরিচয় পাওয়া যায়নি। গড়চিরৌলির পুলিশ সুপার অঙ্কিত গোয়েল সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘ইতোমধ্যে আত্মসমর্পণ করা নকশালরা তেলতুম্বদেসহ অন্যদের মরদেহগুলো শনাক্ত করেছে।’
অন্যদিকে কলকাতার যাদবপুরের বাসিন্দা প্রশান্ত বোস মাওবাদী সংগঠনের অন্যতম প্রবীণ নেতা। সিপিআইয়ের (মাওবাদী) পলিটব্যুরো ও কেন্দ্রীয় মিলিটারি কমিশনের সদস্য প্রশান্ত বসু আগে মাওয়িস্ট কমিউনিস্ট সেন্টার অব ইন্ডিয়ার (এমসিসিআই) প্রধান ছিলেন। ২০০৪ সালে এমসিসিআইয়ের সঙ্গে মিশে যায় সিপিআই-এমএল (জনযুদ্ধ)। তৈরি হয় ভারতের মাওবাদী কমিউনিস্ট পার্টি।
প্রশান্ত মাওবাদীদের তাত্ত্বিক নেতা হিসেবে পরিচিত ছিলেন। মাওবাদীদের ইস্টার্ন রিজিওনাল ব্যুরোর সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছিলেন তিনি। ৭৫ বছরের প্রশান্ত বসু শারীরিকভাবে গুরুতর অসুস্থ ছিলেন। তাকে ধরার জন্য দুই কোটি টাকা পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছিল। ঝাড়খন্ড পুলিশের পক্ষ থেকেও তাকে ধরতে এক কোটি টাকা নগদ পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছিল।
প্রশান্ত বসু ওরফে কিষান দার স্ত্রী শীলা মারান্ডিও সক্রিয়ভাবে মাওবাদী সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। সিপিআই (মাও) সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির একমাত্র মহিলা সদস্য ছিলেন তিনি। বিগত পাঁচ বছর ধরে তিনি মাওবাদী মহিলা সংগঠনের দায়িত্বভার সামলাচ্ছিলেন। চিকিৎসার জন্য তারা জামসেদপুরে এসেছিলেন বলে জানা গেছে। সেখানেই একটি বাড়ি থেকে তাদের দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।