পৃথিবী ও সূর্যের মাঝামাঝি অবস্থানে এবং পৃথিবীর কক্ষপথে থাকা গ্রহাণুটির পরিচয় শনাক্ত করেছেন বিজ্ঞানীরা। জানিয়েছেন, পৃথিবীর কাছে ঘূর্ণায়মান গ্রহাণুটি চাঁদের ভেঙে যাওয়া টুকরো।
দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে জানানো হয়, ২০১৬ সালে আবিষ্কৃত গ্রহাণুটির নাম কামো ওয়ালেয়া। প্রায় পাঁচ বছর আগে বিজ্ঞানীরা এটির দেখা পেলেও এতদিন গ্রহাণুটির বিষয়ে খুব বেশি কিছু জানতেন না তারা।
নতুন গবেষণায় প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণের মাধ্যমে ধারণা করা হচ্ছে, এটি চাঁদের ভাঙা অংশ। বহুকাল আগে মহাজাগতিক কোনো সংঘর্ষে অংশটি চাঁদ থেকে আলাদা হয়ে গিয়েছিল।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা জানিয়েছে, অ্যাপোলো অভিযানে সংগৃহীত চাঁদের পাথরের সঙ্গে কামো ওয়ালেয়া থেকে প্রতিফলিত আলোর মিল রয়েছে।
পৃথিবীর কাছাকাছি অবস্থানরত আধা-উপগ্রহগুলোর একটি কামো ওয়ালেয়া। পৃথিবীর সঙ্গে এই গ্রহাণুটিও সূর্যকে প্রদক্ষিণ করছে। পৃথিবী থেকে এটির দূরত্ব মাত্র নয় মাইল।
তবে জ্যোতির্বিজ্ঞানের হিসাবে পৃথিবী ও কামো ওয়ালেয়ার দূরত্ব খুব কম হলেও এটি পৃথিবীর জন্য ঝুঁকিপূর্ণ নয়। কারণ এটি আকারে চক্রাকার নাগরদোলার চাকতির মতো। দুর্বলতম তারার চেয়েও বহুগুন বেশি দুর্বল কামো ওয়ালেয়া, ফলে খালি চোখেও এটি দেখা যায়।
তবে এটি পর্যবেক্ষণে পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী টেলিস্কোপের প্রয়োজন হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনা অঙ্গরাজ্যের গ্রাহাম পর্বত থেকে লার্জ বাইনোকুলার টেলিস্কোপের সাহায্যে প্রাপ্ত তথ্যে আভাস মিলেছে, চাঁদের বুক থেকে সংগৃহীত পাথুরে নমুনার সঙ্গে কামো ওয়ালেয়ার সাদৃশ্য আছে। এ থেকেই ধারণা করা হচ্ছে যে গ্রহাণুটির উৎস চাঁদ।
মহাকাশে পৃথিবীর কাছাকাছি ছুটে চলা অন্য গ্রহাণুগুলো থেকে প্রতিফলিত আলোর সঙ্গে কামো ওয়ালেয়া থেকে প্রতিফলিত আলো মিলিয়ে দেখেছেন বিজ্ঞানীরা। কিন্তু কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেননি।
পর্যবেক্ষণে আরও দেখা গেছে, কামো ওয়ালেয়ার কক্ষপথও অন্যরকম। মঙ্গল ও বৃহস্পতি গ্রহের মাঝামাঝিতে দলবদ্ধ গ্রহাণুদের থেকে আলাদা হয়ে পৃথিবীর দিকে ছুটে আসা অন্য মহাজাগতিক বস্তুর সঙ্গেও মিল নেই কামো ওয়ালেয়ার।
চাঁদ থেকে কিভাবে কামো ওয়ালেয়ার বিচ্যুতি ঘটেছে, সে বিষয়েও নিশ্চিত নয় বিজ্ঞানীদের দলটি। কারণ এর আগে এমন কোনো গ্রহাণুর সন্ধান কখনও মেলেনি।
তবে ধারণা করা হচ্ছে, এক লাখ থেকে ৫০০ বছর আগ পর্যন্ত কোনো এক সময়ে কোনো সংঘর্ষের ফলে ভাঙন ধরেছিল চাঁদের বুকে।
কমিউনিকেশনস আর্থ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট জার্নালে প্রকাশ করা হয়েছে গবেষণা প্রতিবেদনটি।