দক্ষিণ আমেরিকার দেশ ইকুয়েডরের একটি কারাগারে সহিংস দাঙ্গায় প্রাণ গেছে কমপক্ষে ৬৮ জন বন্দির। আহত হয়েছেন ২৫ জন।
দেড় মাস আগে একই কারাগারে বিভিন্ন অপরাধীচক্রের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সহিংসতায় নিহত হয়েছিলেন শতাধিক কয়েদি। চলতি মাসের শুরুতেও কারাগারটিতে সশস্ত্র সংঘাতে নিহত হন তিন বন্দি।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, বন্দরনগরী গুয়াইয়াকুইল শহরে অবস্থিত দেশের সবচেয়ে বিপজ্জনক বিবেচিত লিটোরাল কারাগারে স্থানীয় সময় শুক্রবার সন্ধ্যায় হয় এই দাঙ্গা।
সহিংসতা নিয়ন্ত্রণে কারাগারের ভেতরে প্রবেশ করার পর পুলিশের বিশেষ দল প্রচুর পরিমাণ বন্দুক ও বিস্ফোরকের উপস্থিতি পেয়েছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টুইটারে সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে শোক জানিয়েছেন ইকুয়েডরের প্রেসিডেন্ট গুইলারমো লাসো। নিহত বন্দিদের পরিবারের প্রতি সমবেদনাও জানান তিনি।
‘কারাগারে নৈরাজ্য সৃষ্টির মাধ্যমে লাভবান হওয়া মাফিয়াদের ঠেকাতে’ নতুন পদক্ষেপ নেয়া জরুরি বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
চলতি বছর ইকুয়েডরের বিভিন্ন কারাগারে দাঙ্গা ও সহিংসতার ঘটনায় নিহত হয়েছেন প্রায় ৩০০ বন্দি। তবে লিটোরাল কারাগারে সেপ্টেম্বরের সহিংসতায় প্রাণ যায় কমপক্ষে ১১৮ জনের, আহত হন আরও ৮০ জন; যা ইকুয়েডরে কারা সহিংসতার ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি।
সে সময় কারাগারের একটি অংশের বন্দিরা দেয়ালের একটি ফুটো থেকে হামাগুড়ি দিয়ে বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে পড়ে। এরপর তারা প্রতিদ্বন্দ্বী চক্রগুলোর ওপর হামলা চালাতে শুরু করে। কয়েকজনকে শিরশ্ছেদ ও বাকিদের গুলি করে হত্যা করা হয়। কারা ভবনের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে মোতায়েন করা হয়েছিল কয়েক শ পুলিশ কর্মকর্তা ও সেনা সদস্যকে।
কারাগারে নজিরবিহীন ওই রক্তপাতের ঘটনায় আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের শিরোনামে উঠে আসে ইকুয়েডর। নতুন করে আলোচনা শুরু হয় বিভিন্ন প্রভাবশালী অপরাধীচক্রের কার্যক্রম নিয়ে।
ইকুয়েডরের কারাগারগুলোতে বর্তমানে ধারণক্ষমতার চেয়ে ৯ হাজার বেশি কয়েদি রয়েছেন। এর মধ্যে পাঁচ হাজার তিন শ কয়েদির ধারণক্ষমতাসম্পন্ন লিটোরাল কারাগারে রয়েছে সাড়ে আট হাজার কয়েদি।
লিটোরালে যেসব অপরাধী চক্রের সদস্যরা বন্দি, তাদের সঙ্গে মেক্সিকোর কুখ্যাত মাদক কারবারিদের যোগসূত্র রয়েছে বলে ধারণা করা হয়।
বিশেষ করে সাম্প্রতিক সহিংসতার পেছনে কলকাঠি নাড়ার জন্য দায়ী করা হচ্ছে মাদক চোরাচালানে জড়িত কয়েকটি প্রভাবশালী মেক্সিকান চক্রের একটিকে। এসব চক্র বর্তমানে ইকুয়েডরেও সক্রিয়। এর মধ্যে আছে সবচেয়ে কুখ্যাত সিনালোয়া, আছে জালিস্কো নিউ জেনারেশন নামের আরেকটি শক্তিশালী গোষ্ঠীও।
এসব চক্রকে নিয়ন্ত্রণে প্রতিবেশী কলম্বিয়া, যুক্তরাষ্ট্র আর ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিশ্বসম্প্রদায়ের সহযোগিতা চেয়েছেন ইকুয়েডরের প্রেসিডেন্ট।