সেনাশাসিত মিয়ানমারে বন্দি যুক্তরাষ্ট্রের সাংবাদিক ড্যানি ফেনস্টারকে ১১ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে ইয়াঙ্গুনের একটি আদালত।
ফ্রন্টিয়ার মিয়ানমারের ব্যাবস্থাপনা সম্পাদক ছিলেন ফেনস্টার। ইয়াঙ্গুন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে চলতি বছরের মে মাসে আটক হন তিনি।
আল জাজিরার প্রতিবেদনে জানানো হয়, ৩৭ বছর বয়সী এই সাংবাদিককে নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান ফ্রন্টিয়ার মিয়ানমার একটি বিবৃতি প্রকাশ করেছে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে যে তিনটি অভিযোগের সবগুলোতে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন ফেনস্টার।
অভিযোগ তিনটি হলো- সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে জনমত উসকে দেয়া, বেআইনি সম্পৃক্ততা ও অভিবাসন আইন লঙ্ঘন।
সংবাদভিত্তিক ইংরেজি ম্যাগাজিন ফ্রন্টিয়ার মিয়ানমারের সঙ্গে কাজ করতে প্রায় এক বছর ধরে ইয়াঙ্গুনে অবস্থান করছিলেন ড্যানি ফেনস্টার। পত্রিকাটি সেনা অভ্যুত্থানের বিষয়ে বিস্তৃত পরিসরে খবর সংগ্রহ ও প্রতিবেদন প্রকাশ করছিল।
পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে দেশের উদ্দেশে রওনা দেয়ার সময় আটক হন ফেনস্টার। বর্তমানে ইয়াঙ্গুনের কুখ্যাত ইনসেইন কারাগারে বন্দি তিনি।
ফ্রন্টিয়ার জানিয়েছে, ইনসেইন কারাগারের বাইরে স্থানীয় সময় শুক্রবার সকালে আদালতের রায়টি প্রকাশ্যে ঘোষণা করা হয়।
ফেনস্টারের রুদ্ধদ্বার বিচারের কোনো তথ্য আদালতের বাইরে আসতে দেয়া হয়নি। ফলে সংবাদমাধ্যম বা জনগণের সামনে ততটা তথ্যই এসেছে, যতটা মিয়ানমারের জান্তা সরকার প্রকাশ করেছে।
বিদ্যমান আইনে ফেনস্টারের এই সাজাকে ‘সম্ভাব্য কঠোরতম শাস্তি’ আখ্যা দিয়েছে ফ্রন্টিয়ার। জানিয়েছে, তার বিরুদ্ধে আনা মূল প্রমাণের সত্যতা না পাওয়া গেলেও বিষয়টি উপেক্ষা করে তাকে শাস্তি দেয়া হয়েছে।
যেসব অভিযোগে ড্যানি ফেনস্টারকে শাস্তি দেয়া হয়েছে, তার সঙ্গে মিয়ানমার নাও নামের একটি অনলাইন সংবাদমাধ্যমে তার কাজের যোগসূত্র টানা হয়েছে। কিন্তু ২০২০ সালের জুনের পর ওই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আর কাজ করেননি আমেরিকান এই সাংবাদিক। পরের মাসেই যোগ দেন ফ্রন্টিয়ারে।
ফ্রন্টিয়ারের প্রধান বার্তা সম্পাদক থমাস কিয়ান বলেন, ‘এসব অভিযোগে ড্যানি ফেনস্টারের শাস্তি পাওয়ার কোনো কারণই নেই।
‘তার আইনজীবী আদালতকে স্পষ্ট জানিয়েছেন যে তিনি অনেক আগেই মিয়ানমার নাও থেকে পদত্যাগ করেছিলেন এবং গত বছরের শেষার্ধ্ব থেকে ফ্রন্টিয়ারের সঙ্গে কাজ করছেন।
‘ফেনস্টারের শাস্তির ঘটনায় ফ্রন্টিয়ার হতাশ ও ক্ষুব্ধ।’
চলতি সপ্তাহে ফেনস্টারের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতা ও সন্ত্রাসবাদের অভিযোগও গঠন করা হয়েছে।
দোষী সাব্যস্ত হলে এসব মামলায় সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে যাবজ্জীবন হতে পারে তার। সর্বোচ্চ শাস্তি বিবেচনায় নতুন দুটি মামলাই এখন পর্যন্ত সবচেয়ে গুরুতর। দোষী সাব্যস্ত হলে এসব মামলায় সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে যাবজ্জীবন হতে পারে তার।
এই দুই মামলায় ফেনস্টারের বিচার শুরু হবে আগামী মঙ্গলবার (১৬ নভেম্বর)। কোন ঘটনার প্রেক্ষিতে তার বিরুদ্ধে এসব মামলা দায়ের করা হয়েছে, তা বলা হয়নি।
এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানা যায়নি। ফেনস্টারকে অবিলম্বে মুক্তি দিতে ছয় মাস ধরে মিয়ানমারের জান্তা সরকারের প্রতি যুক্তরাষ্ট্র আহ্বান জানিয়ে আসলেও তাতে সাড়া দেয়নি নেইপিদো।