চীনের প্রেসিডেন্ট শি চিনপিংয়ের ক্ষমতা আরও এক ধাপ বাড়িয়েছে ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিসি)। কর্তৃত্ব বাড়াতে বৃহস্পতিবার বিরল প্রস্তাব পাস করে সিপিসি।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রস্তাবটি পাসের ফলে চিনপিংয়ের ক্ষমতার বলয় আরও সম্প্রসারিত ও সুদৃঢ় হবে বলে মনে করা হচ্ছে। একই সঙ্গে আগামী বছর রাষ্ট্রপ্রধান চিনপিংয়ের টানা তৃতীয় মেয়াদ নিশ্চিত হতে পারে, চীনের ইতিহাসে যা নজিরবিহীন।
সিপিসির ১০০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে দলের ‘অর্জন ও ঐতিহাসিক অভিজ্ঞতা’র কথা তুলে ধরা হয় প্রস্তাবটিতে। চার দিনের রুদ্ধদ্বার বৈঠকের শেষ দিনে প্রস্তাবটি পাস করা হয়। এতে অংশ নেন সিপিসির কেন্দ্রীয় কমিটির তিন শতাধিক শীর্ষ নেতা।
চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম সিসিটিভি জানিয়েছে, প্রস্তাবে মাও সেতুং ও দেং শিয়াওপিংয়ের সমপর্যায়ের নেতা হিসেবে মর্যাদায় ভূষিত করা হয়েছে চিনপিংকে।
প্রয়াত এই দুই নেতাও একই রকম দুটি প্রস্তাব পাসের মাধ্যমে চীনের সর্বশ্রেষ্ঠ রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে নিজেদের অবস্থান সুদৃঢ় করেছিলেন। যথাক্রমে ১৯৪৫ ও ১৯৮১ সালে পাস হয়েছিল প্রস্তাব দুটি।
সিক্সথ প্লেনাম হিসেবে পরিচিত চলতি সপ্তাহের বৈঠকে সিপিসি নিজেদের একটি মতাদর্শের আওতায় চিনপিংয়ের মর্যাদা উন্নীত করেছে। সরকারি নথিতে প্রথমবারের মতো ‘নতুন যুগের সূচনায় চীনা বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ সমাজতন্ত্রের বিষয়ে শি চিনপিং ধারণা’র নেপথ্যে চিনপিংকে ‘প্রধান উদ্ভাবক’ আখ্যা দেয়া হয়েছে।
এর আগে এই মতবাদকে সিপিসি ‘দল ও জনতার অভিজ্ঞতা ও জ্ঞানের সমন্বিত’ পণ্য হিসেবে আখ্যায়িত করেছিল।
বিশ্লেষকরা বলছেন, আগামী বছরের দ্বিতীয়ার্ধে সিপিসির দলীয় কংগ্রেসে ‘নতুন যুগের সূচনায় চীনা বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ সমাজতন্ত্রের বিষয়ে শি চিনপিং ধারণা’ কথাটি সংক্ষিপ্ত হয়ে ‘শি চিনপিং মতবাদ’ হয়ে যেতে পারে। দেশের ইতিহাসে প্রথম রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে চিনপিংয়ের তৃতীয় মেয়াদ নিশ্চিতের পর ঘটতে পারে এমন কিছু।
ওয়াশিংটনভিত্তিক থিংক ট্যাংক সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের চীনা রাজনীতিবিষয়ক বিশেষজ্ঞ জুডি ব্ল্যানশেটের মতে, দল চিনপিংকে এক ধরনের ঐশ্বরিক আসনে বসাচ্ছে।
সিসিটিভির প্রকাশিত ফুটেজে দেখা গেছে, বৈঠকে চিনপিংয়ের দিকে মুখ করে বসা দলীয় প্রতিনিধিরা প্রস্তাবটির পক্ষে সর্বসম্মতি জানিয়ে হাত তুলেছেন।
চীনের পিকিং ইউনিভার্সিটির রাষ্ট্রবিজ্ঞানের প্রভাষক ইয়াং চাওহুই বলেন, ‘দলীয় শৃঙ্খলা ও বিশ্বস্ততার প্রতি সিপিসি যেরকম কঠোর, তাতে কোনো সদস্য প্রস্তাবে সমর্থন না দিলে তার পরিণতি খুব খারাপ হতে পারত।’
মাও সেতুংয়ের পর চীনের সবচেয়ে ক্ষমতাধর রাষ্ট্রপ্রধান মনে করা হয় শি চিনপিংকে।