ভারতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়ক ভিরাট কোহলি ও বলিউড অভিনেত্রী আনুশকা শর্মা দম্পতির ৯ মাস বয়সী মেয়েকে ধর্ষণের হুমকি দেয়া যুবককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। পেশায় প্রকৌশলী ২৩ বছর বয়সী ওই যুবকের নাম রমনাগেশ শ্রীনিবাস আকুবাথিনি।
গ্রেপ্তার হওয়া রমনাগেশ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টুইটারে ঘৃণ্য ওই হুমকি দিয়েছিলেন। পরে পুলিশের ভয়ে টুইটার হ্যান্ডেল বদলে তিনি মিথ্যা পাকিস্তানি পরিচয় ব্যবহার করছিলেন।
এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়, হায়দ্রাবাদের বাসিন্দা রমনাগেশকে স্থানীয় সময় বুধবার বিকেলে গ্রেপ্তার করেছে মুম্বাই পুলিশের একটি বিশেষ দল। গ্রেপ্তারের পর তাকে মুম্বাইয়ে পাঠানো হয়েছে।
পেশায় সফটওয়্যার প্রকৌশলী রমনাগেশ একটি ফুড ডেলিভারি অ্যাপভিত্তিক প্রতিষ্ঠানে কাজ করতেন বলে জানা গেছে। তবে বর্তমানে তিনি কর্মহীন।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে গত ২৪ অক্টোবরের ম্যাচে পাকিস্তানের কাছে ভারত হেরে যাওয়ার পর ভিরাট কোহলির মেয়ের বিরুদ্ধে বিদ্বেষপূর্ণ মন্তব্যের ছড়াছড়ি শুরু হয় টুইটার-ফেসবুকে। এরই মধ্যে একটি ছিল অনলাইনে কোহলির মেয়েকে ধর্ষণের হুমকি।
পুলিশ জানিয়েছে, হুমকির স্ক্রিনশট নিয়ে পুলিশ তদন্ত শুরু করার পর টুইটার হ্যান্ডেল বদলে পাকিস্তানি ব্যবহারকারীর ভান ধরেন রমনাগেশ।
মাত্র ৯ মাস বয়সী শিশুটিকে ধর্ষণের হুমকি দেয়ার ঘটনায় ক্ষোভ ছড়িয়েছিল সারা ভারতে। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমেও উঠে আসে বিষয়টি।
এর ধারাবাহিকতায় ভিরাট-আনুশকা যে শহরে থাকেন, সেই মুম্বাইয়ের পুলিশ টুইটারের বিভিন্ন হ্যান্ডেল লক্ষ্য করে অনুসন্ধান শুরু করে।
অনলাইনে ধর্ষণের হুমকির ঘটনায় দিল্লি পুলিশকে নোটিশ দিয়েছিল দিল্লির নারীবিষয়ক কমিশন ডিসিডব্লিউ। এ ঘটনায় অভিযুক্তকে চিহ্নিত ও গ্রেপ্তারের পর এফআইআরের (ফার্স্ট ইনফরমেশন রিপোর্ট) অনুলিপিসহ তার বিস্তারিত পরিচয় দিল্লি পুলিশের কাছে চেয়ে পাঠায় ডিসিডব্লিউ।
ডিসিডব্লিউ চেয়ারপারসন স্বাতী মালিওয়াল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টুইটারে লিখেছিলেন, ‘যেভাবে ৯ মাস বয়সী একটি শিশুকে টুইটারে ধর্ষণের হুমকি দেয়া হয়েছে, তা লজ্জাজনক।
‘ভারতীয় ক্রিকেট দল আমাদের হাজারবার আনন্দ উদযাপনের উপলক্ষ এনে দিয়েছে। তাহলে পরাজয়ের প্রতিক্রিয়া কেন এমন মূর্খের মতো?’
পুলিশকে তদন্তের ফল প্রকাশের অনুরোধও জানান স্বাতী। তিনি লেখেন, ‘যদি কোনো অভিযুক্ত গ্রেপ্তার হয়ে না থাকে, তাহলে দিল্লি পুলিশ তাকে গ্রেপ্তারে কী কী পদক্ষেপ নিয়েছে, সে বিষয়ে আমাদের বিস্তারিত জানান।’
৮ নভেম্বরের মধ্যে এসব তথ্য সরবরাহের পুলিশকে অনুরোধ করে ডিসিডব্লিউ।
শুধু মেয়েই নয়, কোহলি নিজেও গত সপ্তাহ থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে আক্রমণের শিকার। ভারতীয় ক্রিকেট দলের একমাত্র মুসলিম খেলোয়াড় মোহাম্মদ শামিকে নিয়ে বিদ্রুপের প্রতিবাদ করে তোপের মুখে পড়েন কোহলি।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারীরা অভিযোগ তুলেছিলেন, মুসলিম হওয়ার কারণে শামি ইচ্ছা করে ইসলামিক রাষ্ট্র পাকিস্তানের ক্রিকেট দলের বিপরীতে খারাপ খেলেছেন ও রান দিয়েছেন। শামিকে ‘বিশ্বাসঘাতক’ আখ্যাও দেয় অনেকে।
জবাবে কোহলি বলেন, ‘কারও ধর্মবিশ্বাসের জন্য তার ওপর হামলার অর্থ হলো মানুষ হিসেবে নিজেকে সবচেয়ে নিকৃষ্ট প্রমাণ করা। ধর্ম অত্যন্ত পবিত্র ও ব্যক্তিগত বিষয়। মানুষ এভাবে তাদের হতাশা ঢেলে দেয়, কারণ তারা বোঝেই না যে আমরা কী করছি।’
সামাজিক মাধ্যমের অপব্যবহার করা ব্যক্তিদের ‘মেরুদণ্ডহীন’ আখ্যা দিয়ে মোহাম্মদ শামির পক্ষে নিজের শক্ত অবস্থান স্পষ্ট করেছিলেন কোহলি।
তিনি বলেছিলেন, ‘আমরা মাঠে খেলি। আমরা সামাজিক মাধ্যমের একদল মেরুদণ্ডহীন মানুষের মতো নই। এসব মাধ্যম যেভাবে হতাশাগ্রস্ত মানুষের অসুস্থ বিনোদনের মঞ্চ হয়ে উঠছে, তা দুঃখজনক। তবে তাদের কারণে আমাদের দলের ভ্রাতৃত্বে কোনো আঘাত আসবে না।’
কোহলিকে সে সময় সমর্থন জানান কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীও।
দক্ষিণ এশিয়ার প্রতিবেশী দুই দেশ ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সম্পর্ক বরাবরই শীতল। ক্রিকেট খেলা নিয়ে দুই দেশের মানুষের মধ্যে উত্তাপও নিয়মিত ঘটনায় পরিণত হয়েছে। বিশেষ করে ভারতে ক্রিকেটপ্রেমীদের সহিংস আচরণ অনেকবারই আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে উঠে এসেছে।