পাকিস্তানভিত্তিক কট্টর ডানপন্থি ইসলামিক ও উগ্রবাদী রাজনৈতিক সংগঠন তেহরিক-ই-লাব্বাইক পাকিস্তানের (টিএলপি) ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করেছে ইসলামাবাদ। এ-সংক্রান্ত প্রস্তাবটিতে রোববার অনুমোদন দেয় পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা।
জিও নিউজের প্রতিবেদনে জানানো হয়, প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সরকারের সঙ্গে টিএলপির একটি গোপন চুক্তির পর আসে এ ঘোষণা।
সূত্রের বরাতে বলা হয়, সংগঠনটি ভবিষ্যতে কোনো সহিংস বিক্ষোভের উদ্যোগ নেবে না- এমন মর্মে সরকারকে আশ্বস্ত করেছে। মন্ত্রিসভায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পাঠানো একটি সংক্ষিপ্ত বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা উল্লেখ ছিল। এরপরই নিষেধাজ্ঞার তালিকা থেকে টিএলপির নাম বাদ দেয় মন্ত্রিসভা।
টিএলপির ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে প্রথম প্রস্তাবটি দেয় পাঞ্জাবের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। দুই দিন আগে এতে প্রাথমিক অনুমোদন দেন রাজ্য মুখ্যমন্ত্রী উসমান বুজদার।
এরপর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণে সেটি ইসলামাবাদে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে পাঠান বুজদার।
চুক্তি অনুযায়ী চতুর্থ ধাপে ৪৮ টিএলপিকর্মীর নাম কালোতালিকা থেকে সরিয়ে নিয়েছে পাঞ্জাব রাজ্য সরকার। রাজ্যের বিভিন্ন কারাগারে আটক শতাধিক কর্মীকে মুক্তি দেয়া হবে বলেও জানিয়েছে লাহোর।
গত ২ নভেম্বর থেকে টিএলপির সঙ্গে হওয়া চুক্তিটি বাস্তবায়ন শুরু করে পাঞ্জাব সরকার। এ কয়েক দিনে আট শতাধিক টিএলপিকর্মী মুক্তি পেয়েছে বলেও গুঞ্জন ছড়িয়েছে।
দীর্ঘদিন নিষিদ্ধ থাকা টিএলপির সঙ্গে গত ৩১ আগস্ট রাজনৈতিক সমঝোতায় পৌঁছায় পাকিস্তান সরকার। কোনো আনুষ্ঠানিক অভিযোগ ছাড়া আটক থাকা টিএলপিকর্মীদের মুক্তির শর্ত রয়েছে চুক্তিতে।
চুক্তি অনুযায়ী দলটির শীর্ষ নেতা সাদ রিজভির ওপরেও সাধারণ ক্ষমার শর্ত প্রযোজ্য হবে। টিএলপির প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত খাদিম রিজভির ছেলে সাদ হোসেন রিজভি। চলতি বছরের এপ্রিল থেকে পাঞ্জাবের কারাগারে বন্দি তিনি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবিষয়ক অধ্যাদেশের অধীনে গ্রেপ্তার হন সাদ রিজভি।
গত বছর ফ্রান্সের একটি রম্য পত্রিকা মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর ব্যঙ্গচিত্র প্রকাশ করেছিল। ওই ঘটনায় ইসলাম ধর্মের অবমাননার অভিযোগে গণবিক্ষোভের আয়োজন করেছিল টিএলপি। দাবি জানিয়েছিল পাকিস্তানে নিযুক্ত ফরাসি রাষ্ট্রদূতকে দেশে ফেরত পাঠানোর এবং ফ্রান্স থেকে সব ধরনের পণ্য আমদানি নিষিদ্ধের।
শুধু পাকিস্তানেই নয়, মহানবী (সা.)-এর ব্যঙ্গচিত্র প্রকাশকে ধর্মীয় অবমাননা হিসেবে নিয়েছিল বিভিন্ন দেশের মুসলিমরা। এর জেরে ২০২০ সালের অক্টোবরে বিশ্বব্যাপী ‘ফরাসি পণ্য বর্জন’ কর্মসূচির মুখে পড়ে ফ্রান্স সরকার।
পরে মহানবী (সা.)-এর ব্যঙ্গচিত্র পুনরায় প্রকাশে রম্য পত্রিকাটির নেয়া সিদ্ধান্তে সমর্থন জানিয়েছিলেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইম্যানুয়েল মাখোঁ। এতে ক্ষুব্ধ টিএলপি পাকিস্তানজুড়ে ফ্রান্সবিরোধী কর্মসূচি গ্রহণ করেছিল।
চলতি বছরের এপ্রিলে টিএলপির ফ্রান্সবিরোধী কর্মসূচির সময় অচল হয়ে পড়ে লাহোর। সহিংসতায় প্রাণ যায় কমপক্ষে ছয় পুলিশ কর্মকর্তার।
গত মাসেও ইসলামাবাদে টিএলপি পদযাত্রা কর্মসূচির ঘোষণা দিলে প্রদেশজুড়ে ধরপাকড় শুরু করে পাঞ্জাব পুলিশ। এরপর এক সপ্তাহে গ্রেপ্তার হন সংগঠনটির শত শত নেতা-কর্মী। তার পরও পাঞ্জাবের মুরিদকে শহরে জড়ো হয়ে সংলগ্ন কয়েকটি জাতীয় মহাসড়ক অচল করে দেন সংগঠনটির লাখো সদস্য।
সে সময় অচলাবস্থা নিরসনে টিএলপির সঙ্গে বৈঠকের উদ্যোগ নেয় ইসলামাবাদ। টিএলপির সঙ্গে বৈরিতা এড়াতে পাঞ্জাবের বিভিন্ন কারাগার থেকে তাৎক্ষণিক মুক্তি দেয়া হয় টিএলপির সাড়ে তিন শ নেতা-কর্মীকে।
সে সময় পাকিস্তানের শীর্ষ দৈনিক ডনের একটি প্রতিবেদনে পুরো বিষয়টিকে আখ্যায়িত করা হয়েছিল ‘সহিংস বিক্ষোভকারীদের সামনে ইমরান সরকারের আরেকটি পূর্ণাঙ্গ আত্মসমর্পণ’ হিসেবে।