আফগানিস্তানের শাসকদল তালেবানের শীর্ষ পদে ‘ছদ্মবেশীদের অনুপ্রবেশ’ ঘটতে পারে বলে সতর্ক করেছেন ধর্মভিত্তিক গোষ্ঠীটির সর্বোচ্চ নেতা হাইবাতুল্লাহ আখুনজাদা।
টার্কিশ রেডিও অ্যান্ড টেলিভিশনের (টিআরটি) প্রতিবেদনে বলা হয়, ছদ্মবেশীদের অনুপ্রবেশের বিপদ মারাত্মক হতে পারে বলে তালেবান নেতাদের প্রতি সতর্কবার্তা দিয়েছেন আখুনজাদা।
লোকচক্ষুর অন্তরালে থাকা সর্বোচ্চ তালেবান নেতা আখুনজাদা অধীনস্তদের উদ্দেশ্যে আহ্বান জানান, ‘শীর্ষ পদধারীদের বিষয়ে নিয়মিত খোঁজখবর করার’ এবং ‘ছদ্মবেশীদের অস্তিত্ব মুছে দেয়ার’।
এ সতর্কবার্তা কতটা গুরুত্বপূর্ণ, তা বোঝাতে বৃহস্পতিবার একটি লিখিত বিবৃতি দেন তিনি, যা নজিরবিহীন।
বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘সংগঠনের বয়োজ্যেষ্ঠ নেতাদের অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ পদধারীদের ওপর চোখ রাখতে হবে। দেখতে হবে যে তালেবান সরকারের ইচ্ছের বিরুদ্ধে কাজ করা কোনো অপরিচিত মুখ রয়েছে কি না।
‘এমন কারো খোঁজ পেলে যত দ্রুত সম্ভব তাকে নির্মূল করে দিতে হবে।’
আখুনজাদা আরও বলেন, ‘যদি কোনো ধরনের অপ্রত্যাশিত কিছু ঘটে, তাহলে তালেবানের বয়োজ্যেষ্ঠ এই নেতাদেরই পৃথিবীতে এবং পরকালে নিজেদের কর্মকাণ্ডের ফল ভোগ করতে হবে।’
আখুনজাদার লিখিত বিবৃতিটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টুইটারে তালেবানের বেশ কয়েকটি অ্যাকাউন্ট থেকে প্রকাশ করা হয়েছে।
চলতি বছরের আগস্টে রাজধানী কাবুল দখলের মাধ্যমে আফগানিস্তানের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেয় তালেবান। যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত বেসামরিক আফগান সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে আফগানিস্তানকে ‘ইসলামিক আমিরাত’ ঘোষণা করে গোষ্ঠীটি।
২০ বছরের গেরিলা যুদ্ধের পর দ্বিতীয় দফায় আফগানিস্তানের শাসনব্যবস্থা তালেবানের নিয়ন্ত্রণে। দেশ পরিচালনায় বেশ তাড়াহুড়ো করেই সাবেক মিত্র, সমর্থক যোদ্ধা ও তরুণ মাদরাসা ছাত্রদের বিভিন্ন পদে নিয়োগ দিয়েছে নতুন শাসকদল।
তালেবানের অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর থেকেই আফগানিস্তানের বিভিন্ন অঞ্চলে চোরাগোপ্তা হামলা চলছে। এসব হামলার দায় স্বীকার করেছে প্রতিদ্বন্দ্বী, তবে তালেবানের মতোই কট্টর ইসলামপন্থি, নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেটের (আইএস) আঞ্চলিক শাখা আইএস-কে (খোরাসান)।
দুটি সংগঠনের মধ্যে চরম বৈরিতা থাকলেও অনেক বছর ধরেই তালেবান ও আইএস সদস্যদের মধ্যে দল পাল্টাপাল্টি চলছে। সাবেক সরকারকে ক্ষমতা থেকে উৎখাতের চেষ্টায় দুটি দলই আত্মঘাতী বোমা হামলা ও বেসামরিক গণহত্যার মতো মানবতাবিরোধী কৌশলের আশ্রয় নিয়েছে।
আগস্টে আফগান সরকারকে উৎখাত করে তালেবান ক্ষমতা দখলের পর থেকেই দেশটিতে মসজিদসহ বিভিন্ন স্থাপনায় ধারাবাহিক হামলা জোরদার করেছে আইএস।
দুইদিন আগেই কাবুলে দেশের সর্ববৃহৎ সামরিক হাসপাতালে আত্মঘাতী বোমা হামলা ও বন্দুকধারীদের গুলিতে নিহত হয় তালেবান কমান্ডারসহ কমপক্ষে ১৯ জন। হামলার দায় স্বীকার করেছে আইএস-কে।
আফগানিস্তানে শান্তি, স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তা ফেরাতে নিজেদের সক্ষমতা জনগণের কাছে তুলে ধরার চেষ্টা করছে তালেবান। এমন পরিস্থিতিতে এ ধরনের হামলার জন্য দায়ী করা হচ্ছে দলত্যাগী তালেবান নেতা বা উগ্রবাদী অনুপ্রবেশকারীদের।
উদাহরণ হিসেবে বলা যায় গত সপ্তাহের একটি হামলার কথা। নিজেদের তালেবানের সদস্য দাবি করে অজ্ঞাত বন্দুকধারীরা একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে ঢুকে তিন অতিথিকে গুলি করে হত্যা করে। বিয়ের অনুষ্ঠানে গানবাজনা বন্ধ করা নিয়ে বিতর্কের জেরে ওই হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়।
হামলাকারীরা তালেবানের সদস্য নয় বলে দাবি করেছেন গোষ্ঠীটির মুখপাত্র এবং দোষীদের শাস্তি দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।