হিউম্যান প্যাপিলোমাভাইরাসের (এইচপিভি) টিকা নেয়া নারী ও কিশোরীদের জরায়ুমুখের ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কম। যুক্তরাজ্যভিত্তিক নতুন এক গবেষণায় উঠে এসেছে এ তথ্য।
ল্যানসেট মেডিক্যাল জার্নালে বৃহস্পতিবার প্রকাশ করা হয়েছে গবেষণা প্রতিবেদনটি। এতে বলা হয়, কিশোর বয়সে এইচপিভি টিকা নেয়া ব্রিটিশ নারীদের মধ্যে জরায়ুমুখের ক্যানসার হওয়ার ঘটনা উল্লেখযোগ্য হারে কমে গেছে।
বিশ্বজুড়ে প্রতি বছর তিন লাখের বেশি নারী প্রাণ হারান জরায়ুমুখের ক্যানসারে। সারা বিশ্বে নারীদের মৃত্যুর চতুর্থ বৃহৎ কারণ এটি। জরায়ুমুখের ক্যানসার শনাক্তের ব্যবস্থা সীমিত বলে ৯০ শতাংশ মৃত্যু ঘটে স্বল্প ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, ১২ থেকে ১৩ বছর বয়সের মধ্যে এইচপিভি টিকা নেয়া নারী, যারা বর্তমানে বিশোর্ধ্ব, তাদের জরায়ুমুখের ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি টিকা না নেয়া নারীদের তুলনায় ৮৭ শতাংশ কম।
গবেষকরা জানান, ১৪ থেকে ১৬ বছর বয়সের মধ্যে টিকাটি নিলে ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি ৬২ শতাংশ কমে যায়; ১৬ থেকে ১৮ বছর বয়সের মধ্যে টিকাটি নিলে এ হার কমে ৩৪ শতাংশ।
গবেষণায় আরও জানা যায়, ১২ থেকে ১৩ বছর বয়সের কিশোরীরা এইচপিভি টিকা নিলে পরবর্তীতে তাদের জরায়ুমুখের ক্যানসারের পূর্ববর্তী অসুস্থতার হার কমে ৯৭ শতাংশ।
গবেষকরা জানান, এইচপিভি টিকা নিলে কী লাভ- এমন প্রশ্ন যাদের মনেই আছে, তাদের দ্বিধা কাটাতে সাহায্য করবে এ গবেষণা।
যুক্তরাজ্যের ক্যানসার গবেষণা সংস্থার অর্থায়নে গবেষণাটি করা হয়েছে। গবেষকরা ২০০৬ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত ২০ বছর থেকে ৬৪ বছর বয়সী নারীদের তথ্য বিশ্লেষণ করেছেন। এই নারীদের সবাই জরায়ুমুখের ক্যানসার পরীক্ষা করিয়েছিলেন।
দেখা গেছে, শুধু ইংল্যান্ডেই ১৩ বছরে প্রায় ২৮ হাজার নারীর জরায়ুমুখে ক্যানসার শনাক্ত হয়েছে। তিন লাখ নারী ক্যানসার পূর্ববর্তী অসুস্থতায় ভুগছিলেন।
কিশোর বয়সে এইচপিভি টিকা নিয়েও জরায়ুমুখের ক্যানসারে আক্রান্ত হয়েছেন ৪৫০ জনের কম নারী। আর টিকাটি নিয়ে ক্যানসার পূর্ববর্তী অসুস্থতায় ভুগেছেন ১৭ হাজারের কিছু বেশি নারী। টিকা না নেয়া একই বয়সী নারীদের মধ্যে এ সংখ্যা অনেক বেশি।
কমবয়সী নারীদের জরায়ুমুখের ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা কম। তাই বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নিয়মিত স্বাস্থ্যপরীক্ষা ও টিকার কার্যকারিতা বিশ্লেষণের ওপর জোর দেন গবেষকরা।
এইচপিভি ঠেকাতে বর্তমানে বিশ্বে সবচেয়ে জনপ্রিয় মার্ক অ্যান্ড কোর গার্ডাসিল টিকা। এটি চার ধরনের হিউম্যান প্যাপিলোমাভাইরাস থেকে দেহকে সুরক্ষিত রাখে। এই চারটি ভাইরাস জরায়ুমুখ, মাথা ও ঘাড়ের ক্যানসারের জন্য দায়ী।
বহুজাতিক ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি গ্ল্যাক্সোস্মিথক্লাইনের (জিএসকে) উদ্ভাবিত সেরাভিক্স দুই ধরনের হিউম্যান প্যাপিলোমাভাইরাসের বিরুদ্ধে দেহে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। জরায়ুমুখের সব ধরনের ক্যানসারের ৭০ থেকে ৮০ শতাংশের জন্য দায়ী এই দুটি ভাইরাস। চাহিদা কম থাকায় যুক্তরাষ্ট্রে সেরাভিক্স বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছে জিএসকে।
জরায়ুমুখ ক্যানসার নির্মূলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) পরিকল্পনা বাস্তবায়নে শতাধিক দেশে এ টিকা দেয়া শুরু হচ্ছে।
যুক্তরাজ্য ১১ থেকে ১৩ বছর বয়সেই মেয়েদের টিকাটি নেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়। ২০১৯ সাল থেকে ছেলেদেরও টিকাটি নিতে উৎসাহ দেয়া হচ্ছে।