এতদিন যেসব কাজ করতে হতো সময় ও অর্থ খরচ করে আর অন্যের সাহায্য নিয়ে, ভিডিও শেয়ারিং অ্যাপ ইউটিউবের কল্যাণে সে ঝক্কি এখন বেশ কম। রান্নাবান্না, লেখাপড়া থেকে শুরু করে বিবিধ জটিল বিষয় ও কাজ ঘরে বসে নিজ হাতে করতে অনেকেই ধারণা নেন ইউটিউব দেখে।
কিন্তু তাই বলে ইউটিউব ভিডিও দেখে কেউ সন্তান প্রসবের মতো কাজও করে ফেলবে, এমনটা অকল্পনীয়ই বলা যায়। শুনতে অবিশ্বাস্য বলে মনে হলেও বাস্তবেই এমন ঘটনা ঘটেছে ভারতের দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্য কেরালায়।
সন্তান প্রসবের পর নাড়ি কাটার কাজটিও ইউটিউব দেখে নিজের হাতেই করেছে সদ্য মা হওয়া এক কিশোরী।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ২০ অক্টোবর নিজ বাড়িতে সন্তানের জন্ম দিয়েছে ১৭ বছর বয়সী স্কুলপড়ুয়া। সন্তান প্রসবের বিষয়ে কোনো রকম পূর্ব ধারণা না থাকা ওই কিশোরী পুরো কাজটি করেছে ইউটিউব থেকে ধারণা নিয়ে।
মালাপপুররাম জেলার কোন্দোত্তি থানার এক পুলিশ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, এ ঘটনায় ওই সন্তানের পিতা একই এলাকার ২১ বছর বয়সী এক যুবককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর পরই জানাজানি হয়েছে বিষয়টি।
তিনি আরও জানান, কিশোরীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক ছিল ওই যুবকের। দুইজনের পরিবারই তাদের বিয়ের বিষয়েও সম্মত ছিল। কিন্তু ভারতের আইনে মেয়েদের বিয়ের ন্যূনতম বয়সের চেয়ে কিশোরীর বয়স কম বলে অপেক্ষা করার সিদ্ধান্ত নেন তাদের অভিভাবকরা।
কোন্দোত্তির পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘গত মাসে সন্তান জন্ম দেয়ার কয়েক দিন পর সদ্য মা হওয়া ওই কিশোরী অসুস্থ হয়ে পড়ে। অসুস্থতা গুরুতর রূপ নিলে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
‘বিষয়টি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের গোচরে এলে তারা পুলিশকে এ বিষয়ে অবহিত করে। এরপর মেয়েটির বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে ওই যুবককে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে যায় পুলিশ।’
পুলিশ জানিয়েছে, কীভাবে সন্তান প্রসব করতে হয়, সে বিষয়ে ইউটিউব থেকে ধারণা নিয়ে সন্তানের নাড়ি কাটার পরামর্শ হবু মাকে দিয়েছিল ওই যুবকই। সন্তানের বিষয়টি পরিবারের কাছ থেকে দুইজনই গোপন রাখতে চেয়েছিল।
গর্ভাবস্থার তৃতীয় মাসে ওই কিশোরী পেট ব্যথা নিয়ে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়ে গ্যাসট্রিকের চিকিৎসা নিয়েছিল। তদন্তের অংশ হিসেবে নবজাতক সন্তানের সঙ্গে গ্রেপ্তারকৃত যুবকের পিতৃত্ব নিশ্চিতে ডিএনএ পরীক্ষাও করবে পুলিশ।
মালাপপুরাম জেলা শিশুকল্যাণ পরিষদ সিডব্লিউসির চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট শাজেস বাস্কার জানান, নতুন মা সুস্থ হয়ে উঠছে। নবজাতক শিশুটি নিরাপদে আছে।
সিডব্লিউসি চেয়ারম্যান বলেন, কিশোরীর মা নিজের মেয়ের গর্ভাবস্থার বিষয়ে কিছুই জানতেন না। এটা বিস্ময়কর। এমনকি সন্তান প্রসবের দুই দিন পর্যন্তও তিনি ঘরে নতুন সদস্যের উপস্থিতিও টের পাননি।
তিনি জানান, সদ্য সন্তানের জন্ম দেয়া ওই কিশোরীর মায়ের বয়স ৫০ বছর। তিনি চোখে দেখতে পান না। মেয়েটির বাবা নৈশপ্রহরীর কাজ করেন।
মেয়েটি সারাক্ষণ মোবাইল ফোন নিয়ে নিজের ঘরে দরজা আটকে থাকত। তার মা ভাবতেন যে মেয়ে অনলাইন ক্লাস আর পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত।