২০৩০ সালের মধ্যে বন ধ্বংস বন্ধে ঐক্যের ঘোষণা দিয়েছেন শতাধিক রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান। বনায়নে গতি আনতে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ারও আশ্বাস দিয়েছেন তারা।
স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোতে চলমান ২৬তম জলবায়ু শীর্ষ সম্মেলনে মঙ্গলবার এ ঘোষণা দেন বিশ্বনেতারা। একে আখ্যায়িত করা হচ্ছে ‘বন ও ভূমি ব্যবহারে গ্লাসগো নেতাদের ঘোষণাপত্র’ হিসেবে।
বিবিসির প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, জলবায়ুবিষয়ক এ বছরের সম্মেলনে প্রথম গুরুত্বপূর্ণ চুক্তিটিতে সই করেছে ১০০টির বেশি দেশ। বনাঞ্চল ধ্বংসে সমালোচিত ব্রাজিল, রাশিয়া, ইন্দোনেশিয়াও চুক্তিতে সম্মত হয়েছে।
গত দুই বছরে বিশ্বের সর্ববৃহৎ চিরহরিৎ বনাঞ্চল আমাজনের বড় অংশ আগুনে পুড়ে গেছে। বিষয়টি নিয়ে বারবার আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে শিরোনাম হয়েছে ব্রাজিল; পরিবেশবিদদের ব্যাপক তোপের মুখে পড়েছে বাণিজ্যবান্ধব প্রেসিডেন্ট জায়ার বলসোনারোর সরকার।
গ্লাসগো ঘোষণাপত্র অনুযায়ী সারা পৃথিবীর এক কোটি ৩০ লাখ বর্গমাইলের বেশি বনাঞ্চল রক্ষায় ব্যবস্থা নেবে বিশ্ব সম্প্রদায়। এ জন্য সরকারি ও বেসরকারি খাত থেকে খরচ করা হবে প্রায় দুই হাজার কোটি ডলার।
চুক্তি অনুযায়ী যুক্তরাজ্যসহ ১২টি দেশের সরকার ২০২১ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত এক হাজার ২০০ কোটি ডলার অনুদান দেবে। উন্নয়নশীল দেশগুলোকে সহযোগিতায় ব্যয় হবে এ অর্থ। এ ছাড়া দাবানল নিয়ন্ত্রণ ও বৃক্ষরোপণ প্রচেষ্টাতেও নতুন মাত্রা যোগ করা হবে।
যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রসহ পাঁচটি দেশ বিভিন্ন আদিবাসী গোষ্ঠীর সহায়তায় ১৭০ কোটি ডলার অনুদান দেবে। বন সংরক্ষণ, আদিবাসীদের বাসস্থান রক্ষা ও তাদের ভূমি অধিকার জোরদারে ব্যয় হবে এ অর্থ।
পরিবেশবাদীদের মতে, বন রক্ষায় সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করতে পারে আদিবাসীরা। কিন্তু তারাই ভূমিদস্যু ও অবৈধ শিকারী আর সহিংস কাঠ পাচারকারীদের সবচেয়ে বড় লক্ষ্য।
এ ছাড়া আট দশমিক সাত ট্রিলিয়ন ডলারের বেশি অর্থের সম্পদ থাকা ৩০টির বেশি বেসরকারি বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান আশ্বাস দিয়েছে, ২০২৫ সাল পর্যন্ত বনধ্বংসে সম্পৃক্ত যে কোনো কার্যক্রমে বিনিয়োগ বন্ধ রাখবে তারা।
গ্লাসগো চুক্তিকে স্বাগত জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে ২০১৪ সালের জলবায়ু চুক্তিই এখনও বাস্তবায়ন হয়নি বলেও সতর্ক করেছেন তারা।
২০১৪’র নিউইয়র্ক জলবায়ু সম্মেলনেও ৪০টি দেশ প্রায় একই ধরনের একটি চুক্তি করেছিল।
চুক্তিটিতে বনধ্বংস বন্ধের কথা থাকলেও পরবর্তী বছরগুলোতে বনধ্বংস হয়েছে সবচেয়ে বেশি। ২০২০ সালেই পৃথিবীর বুক থেকে হারিয়েছে দুই লাখ ৫৮ হাজার বর্গকিলোমিটারের বেশি বনাঞ্চল, যা আয়তনে পুরো যুক্তরাজ্যের চেয়ে বেশি।
অলাভজনক প্রতিষ্ঠান ওয়ার্ল্ড রিসোর্স ইনস্টিটিউটের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বজুড়ে বিষাক্ত কার্বন নিঃসরণের ৩০ শতাংশই শুষে নেয় বনাঞ্চলগুলো।
পরিবেশ থেকে কার্বন শুষে নিয়ে পৃথিবীকে নাতিশীতোষ্ণ রাখতে সহযোগিতা করে গাছ এবং বৈশ্বিক উষ্ণতার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে।