দীর্ঘ ২০ বছরের যুদ্ধের ইতি টেনে চলতি বছরের আগস্টে আফগানিস্তান থেকে বিদায় নেয় যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন জোট। বিদেশি সেনাদের প্রস্থানে একসময় তাদের সহযোগিতা করা সাবেক আফগান গোয়েন্দা কর্মকর্তারা এখন মৃত্যুভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। শাসক দল তালেবানের প্রতিহিংসার শিকার হওয়ার আতঙ্ক প্রতিনিয়ত তাড়া করছে তাদের।
এ অবস্থায় আন্তর্জাতিকভাবে নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটের (আইএস) দিকে ঝুঁকছেন সাবেক আফগান গোয়েন্দারা। কারণ আফগান ভূখণ্ডে তালেবানের বিপরীতে টিকে থাকা একমাত্র প্রতিপক্ষ আইএস।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের একটি বিশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কয়েকজন আফগান সামরিক গোয়েন্দা আইএসের স্থানীয় শাখায় যোগ দিয়েছেন। কারণ ক্ষমতা দখলের পরই তাদের খোঁজে বাসাবাড়িতে তল্লাশি শুরু করেছিল শাসক দলের যোদ্ধারা।
বলা হচ্ছে, আইএসে যোগ দেয়া আফগান সেনাদের সংখ্যা এখন পর্যন্ত খুব বেশি নয়। কিন্তু সন্ত্রাসী সংগঠনটির সঙ্গে যে কজনই হাত মিলিয়েছেন, তারা সবাই বিশেষজ্ঞ গোয়েন্দা এবং নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রে অত্যন্ত দক্ষ। গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ থেকে শুরু করে যুদ্ধের কৌশলসহ নানা বিষয়ে পর্যাপ্ত জ্ঞান, অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা রয়েছে তাদের।
আফগান গোয়েন্দা সংস্থা জাতীয় নিরাপত্তা অধিদপ্তরের সাবেক প্রধান রহমতউল্লাহ নাবিল বলেন, ‘তালেবানবিরোধী যুদ্ধে দীর্ঘদিন সহযোগিতা দেয়া যেসব আফগান সেনাকে অবহেলায় পেছনে ফেলে যাওয়া হয়েছে, আইএসে যোগ দেয়াই এখন সেরা বিকল্প বলে মনে করছেন তারা।’
তালেবান ও আইএস- দুটিই কট্টর সুন্নি মুসলিম সশস্ত্র সংগঠন। দুটি দলই নিজেদের ইসলাম ধর্মের প্রকৃত পতাকাবাহী বলে দাবি করে এবং ইসলামের নিজস্ব কট্টর সংস্করণ ও চরম রক্ষণশীল জীবনবিধান আরোপে বিশ্বাসী। ধর্মীয় মতাদর্শ ও রাজনৈতিক কৌশলের দিক থেকেও গোষ্ঠী দুটির পার্থক্য সামান্য। কিন্তু তাও কয়েক বছর ধরেই প্রতিপক্ষের ভূমিকায় রয়েছে গোষ্ঠী দুটি।
নাবিল আরও বলেন, ‘তালেবানবিরোধী প্রতিরোধ গড়ে উঠলে এই সেনারা তাতেই যোগ দিতেন। এখনও যেহেতু তেমন কিছু গড়ে ওঠেনি, আইএসই এখন একমাত্র সশস্ত্র গোষ্ঠী, যা তাদের সাহায্য করতে পারে।’
একরকম বিনা প্রতিরোধেই আফগানিস্তানের প্রায় সব অঞ্চল দখল করেছে তালেবান। কেবল পাঞ্জশির উপত্যকায় প্রতিরোধের মুখে পড়লেও তা গুঁড়িয়ে দিতে সময় লাগেনি নতুন শাসকগোষ্ঠীর। মাত্র কয়েক সপ্তাহের আগ্রাসনে পাঞ্জশিরসহ পুরো দেশের নিয়ন্ত্রণ নেয় তালেবান যোদ্ধারা।
তখন থেকেই বেকার বসে আছেন লাখ লাখ সাবেক আফগান সেনা ও পুলিশ সদস্য। তাদের মধ্যে হাতে গোনা কিছু মানুষ নতুন শাসক দলের অধীনে কাজ করতে সম্মত হয়েছে। তবে দেশজুড়ে চলমান চরম অর্থনৈতিক সংকটের কারণে অন্য আফগান সরকারি কর্মীদের মতো তাদের বেতন-ভাতাও আটকে আছে মাসের পর মাস।
ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল বলছে, এই পরিস্থিতিরই সুযোগ নিচ্ছে আইএস। মোটা অঙ্কের অর্থের লোভ দেখিয়ে দলে টানছে সাবেক আফগান সেনাদের।
ফলে ইরাক ও সিরিয়ায় স্বঘোষিত খেলাফত কায়েম করা এবং পরে পশ্চিমা অভিযানে পরাজিত আইএস আবারও শক্তিশালী হয়ে উঠছে।
এমন বাস্তবতার মুখে আইএস আবারও গোটা বিশ্বের জন্য ত্রাস হয়ে উঠতে পারে বলে শঙ্কা ঘনিয়ে আসছে।
যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা বিশ্লেষণে আভাস, আফগানিস্তানে সক্রিয়া আইএস হয়তো ছয় মাসের মধ্যেই আমেরিকান ভূখণ্ডে হামলার সক্ষমতা অর্জন করবে। তেমন লক্ষ্য নিয়ে তারা এগোতে শুরু করেও দিয়েছে বলে গত সপ্তাহে সতর্ক করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগনের এক কর্মকর্তা।