বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ভৌতিক কণ্ঠ কেন শোনা যায়

  •    
  • ৩১ অক্টোবর, ২০২১ ২০:৩৬

গবেষকরা বলছেন, আশপাশের মানুষ বা সঙ্গীদের প্রভাবে সাধারণ কেউ ‘মৃতদের কণ্ঠ’ শোনে না। এটি কোনো ইতিবাচক সামাজিক ধারণা বা ভুতুড়ে গল্পে বিশ্বাসের ফলও নয়। বরং এই ব্যক্তিরা আধ্যাত্মিকতায় বিশ্বাস করেন, কারণ এটি তাদের অভিজ্ঞতার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ এবং ব্যক্তিগতভাবে এ বিশ্বাস তাদের কাছে অর্থপূর্ণ।

মৃত মানুষের কণ্ঠ শোনার দাবি করেন অনেকে। কেন এমনটা ঘটে, তার যৌক্তিক ব্যাখ্যা বের করতে গবেষণা চলছে অনেকদিন ধরে। যেসব কারণে জীবিত ব্যক্তিরা মৃতদের কণ্ঠ শুনতে পান বলে দাবি করেন, সেগুলো সম্প্রতি শনাক্তের দাবি করেছেন বিজ্ঞানীরা।

চলতি বছর প্রকাশিত একটি গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কাজের চাপ, শৈশবে শ্রবণসংক্রান্ত কোনো অস্বাভাবিক অভিজ্ঞতা এবং শ্রবণসংক্রান্ত বিভ্রমে অতি সংবেদনশীলতার শিকার ব্যক্তিদের মধ্যে ভৌতিক শব্দ শুনতে পাওয়ার প্রবণতা বেশি।

গবেষকদের বরাত দিয়ে সায়েন্স অ্যালার্টের প্রতিবেদনে বলা হয়, মনকে অস্থির করে তোলা শ্রবণ বিভ্রমের সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে সিজোফ্রেনিয়ার মতো গুরুতর মানসিক ব্যাধির।

মূল গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়েছে মেন্টাল হেলথ, রিলিজিওন ও কালচার নামের একটি মানসিক স্বাস্থ্য শিক্ষাবিষয়ক সাময়িকীতে।

দৃশ্যত কোনো উৎস বা কারণ ছাড়াই কোনোকিছু দেখা বা শোনা এবং এর সঙ্গে অশরীরী আত্মার যোগসূত্র তৈরির ফলে অনেকেই ভৌতিক অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হন। যুক্তরাজ্যের নর্দামব্রিয়া ইউনিভার্সিটির মনোবিজ্ঞানী পিটার মোজলি বলেন, ‘আধ্যাত্মিক ব্যক্তিদের মধ্যে অস্বাভাবিক শ্রবণ অভিজ্ঞতাকে ইতিবাচক হিসেবে মনে করার প্রবণতা দেখা যায়। জীবনের শুরুর দিক থেকেই তারা এমন অভিজ্ঞতা লাভ করতে শুরু করেন এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তারা আত্মনিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা রাখেন।

‘এই পুরো বিষয়টি কীভাবে ঘটে, তা বোঝা জরুরি। কারণ এর মাধ্যমে আমরা অজানা উৎস থেকে কণ্ঠস্বর শোনা কখন ও কেন মানসিক পীড়াদায়ক হয়, সেটি বুঝতে পারব।’

তিনি ও তার সহকর্মী যুক্তরাজ্যের ডারহাম ইউনিভার্সিটির মনোবিজ্ঞানী অ্যাডাম পাওয়েল দুই শতাধিক মানুষের ওপর জরিপ চালিয়েছেন।

তাদের মধ্যে ৬৫ জন যুক্তরাজ্যের স্পিরিচুয়ালিস্টস’ ন্যাশনাল ইউনিয়নের সদস্য। তাদের সবার ‘ক্লেয়ারঅডিয়েন্ট মিডিয়াম’, অর্থাৎ সঙ্গত কারণ বা বস্তুগত উৎস ছাড়াই শব্দ শোনার ‘ক্ষমতা’ আছে এবং তারা একে বাস্তব বলে মনে করেন।

জরিপে অংশ নেয়া স্বেচ্ছাসেবকদের মধ্যে বাকি ১৪৩ জন সাধারণ জনতার অংশ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের সাহায্যে তাদের বাছাই করে গবেষণায় যুক্ত করা হয়। তারা সাধারণত মৃতদের কণ্ঠ শুনতে পান বলে জানাননি।

সাধারণ মানুষের তুলনায় কথিত আধ্যাত্মিক ক্ষমতার অধিকারীরা কোন দিক থেকে এগিয়ে- সেটি খোঁজার চেষ্টা করেছেন বিজ্ঞানীরা।

আধ্যাত্মিক ব্যক্তিদের ৪৪ দশমিক ছয় শতাংশ জানিয়েছেন, তারা প্রতিদিন অস্বাভাবিক আওয়াজ শোনেন। ৭৯ শতাংশ জানিয়েছেন, এ ধরনের অভিজ্ঞতা তাদের দৈনন্দিন জীবনের অংশ হয়ে গেছে। বেশিরভাগই নিজেদের মাথার ভেতরে কণ্ঠ শুনতে পান বলে জানিয়েছেন; আর ৩১ দশমিক সাত শতাংশ মনে করেন, তারা নিজ দেহের বাইরে থেকেও আওয়াজ শুনতে পান।

জরিপের ফল ছিল চমকে ওঠার মতো।

সাধারণ মানুষের সঙ্গে তুলনা করে দেখা গেছে, আধ্যাত্মিকতায় বিশ্বাসীরা অস্বাভাবিক বা ভুতুড়ে কাণ্ডে (প্যারানরমাল) বেশি বিশ্বাস করেন। অন্যরা কী ভাবছে, তা নিয়েও খুব একটা মাথাব্যথা থাকে না আধ্যাত্মিকতায় বিশ্বাসীদের।

এ ধরনের ব্যক্তিরা প্রথমবার অস্বাভাবিক শ্রবণ অভিজ্ঞতা লাভ করেছেন অল্প বয়সে, গড়ে ২১ বছর সাত মাস বয়সে। আবার মানসিক এই অবস্থার সঙ্গে খুব দ্রুত তারা খাপ খাইয়ে নিতে পারায় দৈনন্দিন কাজে খুব একটা ব্যাঘাত ঘটেনি।

এই দলটির মধ্যে বিভ্রমজাতীয় অভিজ্ঞতাই বেশি বলে খুঁজে পেয়েছেন গবেষকেরা।

তারা বলছেন, এই দলটির বেশিরভাগ মানুষ এ ধরনের অভিজ্ঞতা অর্জনের আগে আধ্যাত্মিকতা সম্পর্কে কিছু জানতেন না। বরং ব্যতিক্রমী অভিজ্ঞতার ফলে সৃষ্ট প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে তারা আধ্যাত্মিকতার বিষয়ে জেনেছেন।

সাধারণ মানুষের মধ্যেও প্যারানরমাল বা ভৌতিকতায় বিশ্বাসের সঙ্গে শ্রবণ বিভ্রমের সম্পর্ক পাওয়া গেছে। ভৌতিকতায় বিশ্বাস যাদের বেশি, তাদের শ্রবণ বিভ্রম হলেও দ্রুত বিষয়টির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিয়েছেন। অন্যদিকে যারা এতে সামান্য কিংবা একেবারেই বিশ্বাস করেন না, তাদের ক্ষেত্রে মানসিক ব্যাঘাত ঘটতে দেখা গেছে বেশি।

দুটি দলের মধ্যে ভৌতিকতায় বিশ্বাস ও দৃষ্টিবিভ্রমের মাত্রা একই ছিল।

এসব ফল বিশ্লেষণ করে গবেষকরা বলছেন, আশপাশের মানুষ বা সঙ্গীদের প্রভাবে সাধারণ কেউ ‘মৃতদের কণ্ঠ’ শোনে না। এটি কোনো ইতিবাচক সামাজিক ধারণা বা ভুতুড়ে গল্পে বিশ্বাসের ফলও নয়। বরং এই ব্যক্তিরা আধ্যাত্মিকতায় বিশ্বাস করেন, কারণ এটি তাদের অভিজ্ঞতার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ এবং ব্যক্তিগতভাবেই এ বিশ্বাস তাদের কাছে অর্থপূর্ণ।

এ বিভাগের আরো খবর