ফাইজার ও অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার বিরুদ্ধে করোনাভাইরাসের পুরোনো এক ভ্যারিয়েন্ট প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সক্ষম বলে জার্মানির একদল বিজ্ঞানী সতর্ক করেছেন।
গত কয়েক মাসে এ.৩০ নামের করোনার ওই ভ্যারিয়েন্টের দেখা পাননি গবেষকরা। চলতি বছরের মে ও জুন মাসে এ.৩০ ভ্যারিয়েন্টের শেষ নমুনা পাওয়া যায়।
কোভিড ভ্যারিয়েন্ট ট্র্যাকিং নেটওয়ার্ক জিআইএসএআইডির তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বজুড়ে কেবল পাঁচ ব্যক্তির দেহে এ.৩০ ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া যায়। এদের মধ্যে তিনজন অ্যাঙ্গোলা, একজন সুইডেন ও শেষজন যুক্তরাজ্যের নাগরিক।
ওয়েব পোর্টাল এমএসএনে বলা হয়, এত কম শনাক্ত হওয়ায় বিজ্ঞানীরা ভেবেছিলেন, করোনার এই ভ্যারিয়েন্ট আর নেই, এটির বিলুপ্তি ঘটেছে।
সোমবার সেলুলার অ্যান্ড মলিকিউলার ইমিউনোলজি সাময়িকীতে প্রকাশিত গবেষণা প্রতিবেদনে জার্মানির বিজ্ঞানীরা বলেন, ‘ভবিষ্যতে করোনার এ.৩০ ভ্যারিয়েন্টের সম্ভাব্য সংক্রমণের বিষয়ে নিবিড় পর্যবেক্ষণ ও দ্রুত পাল্টা পদক্ষেপ নেয়ার প্রয়োজন রয়েছে।’
গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, এ.৩০ ভ্যারিয়েন্টের স্পাইক প্রোটিনে বেশ কয়েকটি মিউটেশন রয়েছে, যেগুলোকে মানবকোষে দৃঢ়ভাবে সংযুক্ত থাকার জন্য ভাইরাসটি ব্যবহার করে।
এ.৩০ ভ্যারিয়েন্টের এমন এক মিউটেশনের নাম ই৪৮৪কে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, টিকা বা প্রাকৃতিক সংক্রমণ থেকে পাওয়া অ্যান্টবডির বিরুদ্ধে এই মিউটেশন কিছু প্রতিরোধ গড়ে তোলে।
জার্মানির বিজ্ঞানীদের সাম্প্রতিক এই গবেষণা টুইটারে বেশ আলোড়ন তুলেছে।
ইউনিভার্সিটি অফ নিউ মেক্সিকোর প্যাথলজি বিভাগের অধ্যাপক ব্রায়ান হেলে বলেন, ‘করোনার এই ভ্যারিয়েন্ট পর্যবেক্ষণ করা দরকার।
‘এটির মিউটেশনের ক্ষমতা অসাধারণ। এ ছাড়া রোগ প্রতিরোধক্ষমতার বিরুদ্ধেও শক্ত অবস্থান নিতে সক্ষম এই ভ্যারিয়েন্ট।’
অবশ্য আলোচিত গবেষকরা করোনার এ.৩০ ভ্যারিয়েন্টের প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে খুব একটা নিশ্চিত নন।
ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের জেনেটিক্স বিভাগের বিজ্ঞানী অধ্যাপক ফ্রাসোয়া বেলক্স জিআইএসএআইডির ডেটা উল্লেখ করে বলেন, ‘করোনার এ.৩০ ভ্যারিয়েন্ট এখন অস্তিত্বহীন।’
এ ছাড়া লুইজিয়ানা স্টেট ইউনিভার্সিটি হেলথ শ্রিভপোর্টের মাইক্রোবায়োলজি ও ইমিউনোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক জেরেমি কামিল টুইটারে ফ্রাসোয়া বেলক্সের মতো একই মন্তব্য করেন।
জার্মান প্রাইমেট সেন্টার অ্যানিমেল রিসার্চ ল্যাবের ইনফেকশন বায়োলজি ইউনিটের গবেষক ও গবেষণা প্রতিবেদনের মূল লেখক মারকাস হফম্যান বলেন, ‘জিআইএসএআইডির ডেটা আমাদের এটাই বলছে, করোনার এ.৩০ ভ্যারিয়েন্ট বৈশ্বিক পর্যায়ে এখন সংক্রমণ ঘটাচ্ছে না।’
তবে হফম্যান উদ্বেগ জানিয়ে বলেন, ‘বিশ্বের যেসব অঞ্চলে করোনা পরীক্ষা পর্যাপ্ত পরিমাণে হচ্ছে না, সেসব অঞ্চলে এ.৩০ ভ্যারিয়েন্ট অশনাক্তই থেকে যাচ্ছে।’
এ.৩০ ভ্যারিয়েন্ট এরই মধ্যে বিলুপ্তির পথে- বিজ্ঞানীদের এমন মন্তব্যের জবাবে হফম্যান বলেন, ‘আফ্রিকার অনেক দেশে এ.৩০ ভ্যারিয়েন্ট স্থানীয়ভাবে সংক্রমণ ঘটাতে পারে, যা পর্যাপ্ত নজরদারি ক্ষমতার অভাবে জানা যায়নি। সংক্রমিত ব্যক্তি যখন অন্য দেশে যান, তখনই বিষয়টি সামনে আসে।’
হফম্যান বলেন, ‘ওই ভ্যারিয়েন্টের বিরুদ্ধে টিকা কার্যকর নয়, তা আমাদের গবেষণা বলছে না। করোনা মহামারির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে টিকাই এখন পর্যন্ত একমাত্র কার্যকর বিকল্প।’
তিনি বলেন, ‘এ.৩০ ভ্যারিয়েন্ট অ্যান্টিবডিকে পুরোপুরি নিষ্ক্রিয় করতে পারে না। যদি এই ভ্যারিয়েন্টের মাধ্যমে ব্যাপক সংক্রমণ হয়, তারপরও উপসর্গযুক্ত করোনা বা জটিল অসুস্থতার ক্ষেত্রে টিকা কিছুটা সুরক্ষা দিতে সক্ষম।
‘আমাদের পর্যবেক্ষণ বলছে, অন্যান্য সার্স-কোভ-২ ভ্যারিয়েন্টের চেয়ে এ.৩০ ভ্যারিয়েন্ট সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে। তবে অ্যান্টিবডির মাত্রা বেশি হলে এই সুবিধা সংকুচিত হয়ে পড়বে।
‘অতিরিক্ত বুস্টার ডোজ বা টিকার সংমিশ্রণ ঘটিয়ে মানবদেহে অ্যান্টিবডির মাত্রা বাড়ানো উচিত। এতে এ.৩০-এর বিরুদ্ধে শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তোলা সম্ভব হবে।’