সংক্রামক রোগ যক্ষ্মায় (টিউবারকিউলোসিস বা সংক্ষেপে টিবি) বিগত ১০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে ২০২০ সালে। গত বছর বিশ্বজুড়ে রোগটিতে প্রাণহানি ১৫ লাখ, আক্রান্ত হয়েছে এক কোটির বেশি মানুষ।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) বরাত দিয়ে দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে জানানো হয়, যক্ষ্মা প্রতিরোধে টিকা গবেষণার জন্য প্রতি বছর ১০০ বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো। এ তহবিল সংগ্রহে বিশ্বের শীর্ষ ২০ অর্থনীতির জোট জি-টোয়েন্টিভুক্ত দেশগুলোর সহযোগিতা চেয়েছে তারা।
যক্ষ্মা প্রতিরোধী সংগঠনগুলোর নতুন জোট টিবি ভ্যাকসিন অ্যাডভোকেসি রোডম্যাপ গ্রুপ জানিয়েছে, দুয়েকদিনের মধ্যেই জি-টোয়েন্টির অর্থমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক হবে। সে বৈঠক থেকেই যক্ষ্মা প্রতিরোধ কর্মসূচি সফল করতে অনুদান ১০ গুণ বাড়ানোর ঘোষণা আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।
বছরে যক্ষ্মা প্রতিরোধে বৈশ্বিক তহবিলের পরিমাণ কখনোই ১২ কোটি ডলার ছাড়ায়নি। গত বছর থেকে চলমান বৈশ্বিক মহামারির কারণে করোনাভাইরাসের টিকা নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার নিচে চাপা পড়েছে যক্ষ্মার টিকা আধুনিকায়নের কার্যক্রম।
জি-টোয়েন্টিভুক্ত দেশগুলোর উদ্দেশ্যে একটি খোলা চিঠিতে যক্ষ্মায় আক্রান্ত হয়ে সেরে ওঠা ব্যক্তিরা লিখেছেন, ‘কয়েক দশক ধরে ‘উপেক্ষিত রোগটি’ নিরসনে অপর্যাপ্ত বিনিয়োগের দৃশ্যপট পাল্টানোর সময় এসেছে।
‘যক্ষ্মা শনাক্তে এবং আক্রান্তদের চিকিৎসায় যে পরিমাণ অর্থ দরকার, কখনোই তা পাননি যক্ষ্মা রোগীরা। করোনার কারণে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ রূপ নিয়েছে।
‘গত ৫০ বছরে যক্ষ্মার বিরুদ্ধে কার্যকর নতুন ওষুধের সংখ্যা হাতেগোণ। চিকিৎসায় সেরে উঠতেও কয়েক মাস, এমনকি বছরও লেগে যায়। ফলে যারা সুস্থ হন, তাদের শরীরেও অনেক ক্ষতিকর ও প্রাণঘাতী পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছেড়ে যায় রোগটি।’
বিজ্ঞানীদের মতে, যক্ষ্মা প্রতিরোধে আগের চেয়েও বেশি কার্যকর ছয়টি টিকা বেশ সম্ভাবনাময়। কিন্তু টিকাগুলো নিয়ে অবিলম্বে আরও অনেক গবেষণা দরকার।
ট্রিটমেন্ট অ্যাকশন গ্রুপের টিবি প্রজেক্টের সহকারী পরিচালক মাইক ফ্রিক বলেন, ‘করোনার টিকা আর চিকিৎসা আবিষ্কারে গবেষণা ও উন্নয়নের জন্য মহামারির প্রথম ১১ মাসে বিভিন্ন দেশ সম্মিলিতভাবে ১০ হাজার ৪০০ কোটি ডলার খরচ করেছে। এ অর্থ ২০০৫ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ১১ বছরে যক্ষ্মার টিকা গবেষণায় ব্যবহৃত অর্থের ৭৫ গুণ বেশি।’
করোনা পরিস্থিতিতে যক্ষ্মা প্রতিরোধে বিশ্ব পিছিয়েছে বলে চলতি মাসের শুরুতে সতর্ক করে ডব্লিউএইচও।
২০১৯ সালের তুলনায় ২০২০ সালে যক্ষ্মা প্রতিরোধ কর্মসূচিতে বৈশ্বিক বিনিয়োগ ছিল ৫০ কোটি পাউন্ড। বিশ্বজুড়ে এ সময় শনাক্তের সংখ্যাও কমে গিয়েছিল। ২০১৯ সালে ৭১ লাখ মানুষের দেহে যক্ষা শনাক্ত হয়েছিল, ২০২০ সালে এ সংখ্যা ছিল ৫৮ লাখ।
করোনায় বিপর্যস্ত বিশ্বের দ্বিতীয় শীর্ষ দেশ ভারতে গত বছর যক্ষ্মা রোগী শনাক্ত হয়েছে অন্যান্য বছরের তুলনায় ৪০ শতাংশ কম, যা বিশ্বে সবচেয়ে বেশি।
ডব্লিউএইচও’র শঙ্কা, ২০২০ সালে নতুন করে যক্ষ্মায় সংক্রমিতদের মধ্যে ৪১ লাখেরই রোগ শনাক্ত হয়নি, যা আগের বছরের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ।