চরম মানবিক বিপর্যয়ে থাকা আফগানিস্তানের অর্ধেকের বেশি মানুষ আসছে শীতে প্রকট খাদ্যসংকটে ভুগবে বলে সতর্ক করেছে জাতিসংঘের সংস্থা বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি)।
ডব্লিউএফপির পক্ষ থেকে সোমবার এ সতর্কবার্তা দেয়া হয় বলে বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
ডব্লিউএফপির নির্বাহী পরিচালক ডেভিড বিসলে বলেন, ‘আফগানিস্তানকে সহায়তায় আমরা যদি এখনই উদ্যোগ না নিই, তাহলে ২ কোটি ২০ লাখের বেশি আফগানকে এই শীতে হয় দেশ ছাড়তে হবে, নয়তো খাদ্যের অভাবে মরতে হবে।’
জাতিসংঘের কর্মকর্তারা এএফপিকে জানান, আফগানিস্তানে চলমান সংকটের মাত্রা এরই মধ্যে ইয়েমেন বা সিরিয়ার চেয়ে বেশি। এ ছাড়া দক্ষিণ এশিয়ার দেশটিতে খাদ্যসংকটের পরিস্থিতি ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিক অফ কঙ্গো ছাড়া জরুরি অবস্থার মধ্য দিয়ে যাওয়া অন্য যেকোনো দেশের চেয়ে খারাপ।
বিসলে এক বিবৃতিতে বলেন, ‘আফগানিস্তান এ মুহূর্তে চরম মানবিক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। দেশটির খাদ্যনিরাপত্তা ভেঙে পড়েছে।
‘আফগানিস্তান খুব দ্রুতই বিপর্যয়ের মুখে পড়বে। আমাদের এখনই পদক্ষেপ নেয়া উচিত, নয়তো অনেক দেরি হয়ে যাবে।’
ডব্লিউএফপি ও জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, দুজনের মধ্যে একজন আফগান তৃতীয় পর্যায়ের ‘সংকট’ বা চতুর্থ পর্যায়ের ‘জরুরি’ খাদ্য ঘাটতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। চতুর্থ পর্যায় দুর্ভিক্ষের এক ধাপ নিচে।
জাতিসংঘের কর্মকর্তারা জানান, এক দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ শীত এবার দেখতে যাচ্ছে আফগানরা।
১৫ আগস্ট যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে কট্টর ইসলামপন্থি তালেবান। এর কয়েক সপ্তাহ পর নিজেদের ৩৩ জন নেতা নিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করে গোষ্ঠীটি।
তবে তালেবান এখন পর্যন্ত কোনো দেশের স্বীকৃতি অর্জন করতে পারেনি। গোষ্ঠীটির ওপর আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞাও বলবত রয়েছে।
এ ছাড়া নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট (আইএস) সম্প্রতি আফগানিস্তানজুড়ে বেশ কয়েকটি হামলা চালিয়ে তালেবানকে আরও বেকায়দায় ফেলেছে। কারণ সরকার গঠনের সময় তারা দেশে স্থিতিশীলতার অঙ্গীকার করেছিল।
অন্যদিকে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আফগানিস্তানের খরা পরিস্থিতি ঘন ঘন ও তীব্র হচ্ছে।
আফগানিস্তানের মানবিকসংকটের বিষয়ে জানতে চাইলে তালেবানের মুখপাত্র জাবিহুল্লাহ মুজাহিদ বলেন, ‘আমরা দেশের মানুষকে চলমান পরিস্থিতি থেকে বের করার চেষ্টা করছি। বৈশ্বিক মানবিক সহায়তাও আমরা পেতে শুরু করেছি।
মুজাহিদ অঙ্গীকার করে বলেন, ‘জনগণকে পর্যাপ্ত পরিমাণে খাদ্য, কাপড়সহ অন্যান্য সহায়তা দেয়ার চেষ্টা হচ্ছে। সব উদ্বেগ দূর করা হবে।’
এদিকে জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা সতর্ক করে বলেছে, আফগানিস্তানে তাদের মানবিক সহায়তা প্রয়োজনের তুলনায় কেবল এক-তৃতীয়াংশ।
ডব্লিউএফপির নির্বাহী পরিচালক বিসলে বলেন, ‘আফগানিস্তানে খাদ্যসংকটে ভোগা মানুষের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। খাদ্যের অভাবে শিশুরা মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছে। কেবল প্রতিশ্রুতি মানুষের মুখে অন্ন জোগাবে না। আফগানদের নগদ অর্থের প্রয়োজন।
‘আফগানিস্তানের সংকট মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অবশ্যই এগিয়ে আসতে হবে।’