জাতিসংঘে তালেবান সরকারের কাউকে যাতে আসন দেয়া না হয় এ জন্য আন্তর্জাতিক সংস্থাটির প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন কয়েকজন আফগান নারী। বরং আফগানিস্তানকে সঠিকভাবে প্রতিনিধিত্ব করতে পারে, এমন যোগ্য কোনো ব্যক্তিকে জাতিসংঘে আফগান রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগ দেয়া উচিত বলে মনে করেন তারা।
যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘের সদর দপ্তরে স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার আফগান ওই নারীরা এসব আহ্বান জানান বলে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের বাইরে আফগানিস্তানের সাবেক রাজনীতিক ও শান্তি আলোচনাকারী ফৌজিয়া কুফি সাংবাদিকদের বলেন, ‘এটি খুবই সহজ বিষয়। আফগান জনগণের অধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ব্যক্তি আফগানিস্তানের হয়ে জাতিসংঘে বসার যোগ্য।’
তিনি বলেন, ‘আমরা আফগান নারীরা গত কয়েক মাস ধরে আমাদের অধিকার নিয়ে অনেক কথা বলেছি। কিন্তু আমাদের কোনো কথাই শোনা হয়নি।
‘আফগান নারীসহ সব নাগরিককে প্রাপ্য অধিকার দেয়া, অন্তর্ভুক্তিমূলক সরকার গঠন করা- এসব তালেবান সরকার নিশ্চিত করলে পরে তাদের স্বীকৃতি ও অর্থসহায়তা বিশ্বের দেয়া উচিত, এর আগে নয়।’
ফৌজিয়া কুফি ছাড়াও আফগানিস্তানের সাবেক রাজনীতিক নাহিদ ফরিদ, সাবেক কূটনীতিক আসিলা ওয়ারদাক ও সাংবাদিক আনিসা শহীদ সাংবাদিকদের সঙ্গে আফগান বিষয়ে কথা বলেন।
ফরিদ বলেন, ‘তালেবান আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখলের পর অঙ্গীকার করেছিল, নারীদের ঘরের বাইরে কাজ করার অনুমতি দেয়া হবে, মেয়েরা স্কুলে তাদের পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারবে। এসব অঙ্গীকারের কোনোটিই রাখেনি তালেবান।’
নারী অধিকারের বিষয়ে প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কাজ করতে তালেবানকে চাপ দিতে বিশ্বকে আহ্বান জানিয়েছেন কূটনীতিক ওয়ারদাক।
জাতিসংঘের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘তালেবানের কাউকে জাতিসংঘে আফগান রাষ্ট্রদূত হিসেবে বেছে নেয়া হলে সে ক্ষেত্রে অবশ্যই তা শর্তভিত্তিক হতে হবে।’
তালেবানের আগের শাসনামলে ঘরের বাইরে আফগান নারীদের কাজ করা বা মেয়েদের স্কুলে যাওয়ার অনুমতি ছিল না। ঘরের বাইরে পুরুষ অভিভাবক ছাড়া নারীদের বের হতেও নিষেধ করা হয়েছিল।
দীর্ঘ দুই দশক পর তালেবান এবার ক্ষমতায় আসার আগে ও পরে অনেকবার অঙ্গীকার করে বলেছিল, শরিয়া আইন অনুযায়ী আফগান নারীদের অধিকার দেয়া হবে।
তবে আফগান নারী ইস্যুতে এখন পর্যন্ত কোনো অঙ্গীকারই বাস্তবায়ন করেনি আফগানিস্তানে তালেবানের অন্তর্বর্তী সরকার।
এ মুহূর্তে জাতিসংঘে আফগানিস্তানকে প্রতিনিধিত্ব করছেন দেশটির ক্ষমতাচ্যুত সরকারের কর্মকর্তা গুলাম ইসাকজাই। আগস্টে ক্ষমতায় আসার পর জাতিসংঘের রাষ্ট্রদূত হিসেবে তালেবানের দোহাভিত্তিক মুখপাত্র সুহেইল শাহীনকে মনোনয়ন দেয় ইসলামপন্থি গোষ্ঠীটি।
জাতিসংঘে শেষ পর্যন্ত আফগানিস্তানের হয়ে কে প্রতিনিধিত্ব করবে, এ সিদ্ধান্ত চলতি বছরের শেষে আন্তর্জাতিক সংস্থাটির সদস্য রাষ্ট্রগুলোর নেয়ার কথা।