সন্তানের অসদাচরণের জন্য মা-বাবাকে শাস্তি দেয়ার বিধান রেখে নতুন আইন প্রণয়ন করতে যাচ্ছে চীন। এরই মধ্যে আইনের খসড়াও তৈরি করেছে চীনা সরকার।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, চীনা পার্লামেন্টে নতুন একটি আইন বিবেচনাধীন। ছোট ছোট শিশুরা ‘খুব খারাপ আচরণ’ করলে কিংবা কোনো অপরাধ করলে মা-বাবাকে শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে বলে উল্লেখ আছে সম্ভাব্য আইনটিতে।
পারিবারিক শিক্ষার প্রচারবিষয়ক খসড়া আইনটিতে বলা হয়েছে, কোনো শিশুর আচরণ ‘খুব খারাপ’ কিংবা অপরাধমূলক বলে কৌঁসুলিরা প্রমাণ পেলে তার অভিভাবকদের আইনের আওতায় আনা হবে।
আইন অনুযায়ী তাদের তিরষ্কার করা হবে এবং পারিবারিক শিক্ষা সহায়তা কর্মসূচির অধীনে প্রশিক্ষণ নিতে বাধ্য করা হবে।
চীনের শীর্ষ রাষ্ট্রীয় পরিষদ ও জাতীয় আইনসভা ন্যাশনাল পিপল’স কংগ্রেসের (এনপিসি) অধীনে আইনবিষয়ক কমিশনের মুখপাত্র জ্যাং তিয়েবেই বলেন, ‘অপ্রাপ্তবয়স্করা অনেক কারণেই অসদাচরণ করতে পারে। কিন্তু পারিবারিক শিক্ষার অভাবটাই মুখ্য কারণ।’
চলতি সপ্তাহে এনপিসির স্থায়ী কমিটির অধিবেশনে পারিবারিক শিক্ষার প্রচারবিষয়ক খসড়া আইনটি পর্যালোচনা করা হবে।
এ আইনে বিশ্রাম, খেলাধুলা ও শরীরচর্চার জন্য সন্তানকে সময় দিতেও মা-বাবাদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।
শিশু-কিশোরদের বিকাশের স্বার্থে চলতি বছর অভিভাবককেন্দ্রিক বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ নিয়েছে বেইজিং।
গত মাসে জনপ্রিয় ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম টিকটকের চীনা সংস্করণ দুইনেতে দৈনিক সর্বোচ্চ ৪০ মিনিট সময় কাটানো যাবে বলে শিশুদের সময় বেঁধে দেয় চীনা সরকার। নতুন নিয়মে চীনে প্রতিদিন স্থানীয় সময় সকাল ৬টা থেকে রাত ১০টার মধ্যে যে কোনো সময় সর্বোচ্চ ৪০ মিনিট অ্যাপটি ব্যবহার করতে পারবে শিশুরা। ১৪ বছরের কমবয়সী ব্যবহারকারীদের জন্য প্রযোজ্য এ নিয়ম।
এর আগে আগস্টে অনলাইন ভিডিও গেমসেও শিশুদের দৈনিক সময়সীমা বেঁধে দেয় চীনা সরকার। ১৮ বছরের কমবয়সীদের জন্য সাপ্তাহিক কর্মদিবস, অর্থাৎ স্কুল খোলা থাকার দিনগুলোতে ভিডিও গেমসে সময় দেয়া নিষিদ্ধ করেছে বেইজিং। শুধু শুক্র, শনি ও রোববার সর্বোচ্চ এক ঘণ্টা করে ভিডিও গেমস খেলতে পারবে শিশুরা।
এর আগে ফেব্রুয়ারিতে স্কুলে মোবাইল ফোন নেয়া নিষিদ্ধ করে বেইজিং।
স্কুল থেকে বাড়িতে ফেরার পর এবং সাপ্তাহিক ও অন্যান্য ছুটির দিনে যেন খুব বেশি পড়াশোনা করতে না হয় শিশুদের, তা নিশ্চিতেও ব্যবস্থা নিয়েছে বেইজিং। শিক্ষার্থীদের ওপর পড়াশোনা বোঝা হয়ে চেপে বসছে- এমন উদ্বেগ থেকে নেয়া হয় এ পদক্ষেপ।
ইন্টারনেটে চীনের শিশু, কিশোর ও তরুণ প্রজন্ম প্রচুর বাড়তি সময় কাটাচ্ছে বলে গত তিন বছর ধরে সতর্ক করে আসছিল দেশটির রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম। বলা হচ্ছিল, বিষয়টি পরবর্তী প্রজন্মের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।