বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

পোলিও নির্মূলের সূচনা পাকিস্তানে

  •    
  • ১৭ অক্টোবর, ২০২১ ২০:১৫

পাকিস্তানে অনেক পরিবারেই টিকার কার্যকারিতা ও টিকাদানের আসল উদ্দেশ্য নিয়ে সন্দেহ বিদ্যমান। অনেক পাকিস্তানি বিশ্বাস করেন যে ‘টিকা কর্মসূচির আড়ালে দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করে বহিঃশত্রুরা।’ বিশেষ করে আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন আল-কায়েদার প্রতিষ্ঠাতা ওসামা বিন লাদেন পাকিস্তানের অ্যাবোটাবাদ শহরে যুক্তরাষ্ট্রের গোপন অভিযানে নিহত হওয়ার পর বিপুলসংখ্যক পাকিস্তানি টিকা নিতে অস্বীকৃতি জানায়।

পোলিও নির্মূলের চূড়ান্ত লক্ষ্য অর্জন করতে যাচ্ছে পাকিস্তান। চলতি বছর সংক্রামক এ রোগে আক্রান্ত হয়েছে মাত্র একজন, দেশটির ইতিহাসে যা নজিরবিহীন।

টার্কিশ রেডিও অ্যান্ড টেলিভিশনের (টিআরটি) প্রতিবেদনে বলা হয়, পোলিওভাইরাসের বিস্তার রোধে ২৬ বছর আগে বিশাল পরিসরে কর্মসূচি শুরু করে পাকিস্তান সরকার।

দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে চেষ্টার পর দেশটিতে এ রোগের প্রকোপ এতটাই দুর্বল হয়েছে যে নতুন রোগীর সংখ্যা একজনে এসে ঠেকেছে।

বৈশ্বিকভাবে পোলিও নির্মূলের পথে বাধা হয়ে আছে কেবল পাকিস্তান ও আফগানিস্তান। দক্ষিণ এশিয়ার এ দুটি দেশেই পোলিওর সংক্রমণ মহামারি পর্যায়ে।

পাকিস্তানের পোলিও প্রতিরোধ কর্মসূচির প্রধান ড. শাহজাদ বাইগ বলেন, ‘এর আগে ২০১৭ সালে পোলিও নির্মূলের সবচেয়ে কাছাকাছি পৌঁছেছিলাম আমরা। ওই বছর পাকিস্তানে এ রোগে আক্রান্ত হয়েছিল আটজন। এ সংখ্যা একজনে পৌঁছেছে এবারই প্রথম।’

পোলিওমুক্ত হিসেবে ঘোষিত শেষ দেশ নাইজেরিয়া। সারা জীবনের জন্য শরীরকে অবশ করে ফেলতে সক্ষম এ রোগের শেষ সংক্রমণের খবর ২০১৬ সালে জানিয়েছিল আবুজা। এরপর আর দেশটিতে পোলিও সংক্রমণের খবর শোনা যায়নি।

চলতি বছরের আগে পাকিস্তান ২০১৭ সালে রেকর্ড নিম্ন পোলিও রোগী পেলেও ২০১৯ ও ২০২০ সালে সংখ্যাটি লাফিয়ে ১৪৭ ও ৮৪ জনে পৌঁছেছিল।

চলতি বছর দেশটিতে যে একজন পোলিওতে আক্রান্ত হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে, তা প্রত্যন্ত বেলুচিস্তান প্রদেশে। সংঘাতপ্রবণ ও সহজ সড়ক যোগাযোগবিহীন দুর্গম অঞ্চলটিতে টিকা কর্মসূচি পরিচালনা ছিল অত্যন্ত কঠিন। চলতি বছরের ২৭ জানুয়ারি শেষ পোলিও সংক্রমণের খবর মেলে অঞ্চলটিতে।

পোলিও সংক্রমণের সংখ্যা তাৎপর্যপূর্ণরকম কমে আসায় স্থানীয় প্রশাসনের মধ্যে স্বস্তির সুবাতাস বইছে।

কিন্তু গোটা পাকিস্তানকে পোলিওমুক্ত ঘোষণায় ইসলামাবাদকে অপেক্ষা করতে হবে কমপক্ষে আরও তিন বছর এবং এই সময় যেন একটি শিশুও নতুন করে এ রোগে আক্রান্ত না হয়, তাও নিশ্চিত করতে হবে।

সন্ত্রাসী হামলার কারণেও পাকিস্তানের পোলিওবিরোধী কর্মসূচি চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছে। দুই মাস আগে আফগানিস্তান সীমান্তবর্তী খাইবার পখতুনখোয়া প্রদেশে টিকাকর্মীদের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা এক পুলিশ সদস্যকে গুলি করে হত্যা করা হয়।

ড. শাহজাদ বাইগ বলেন, ‘দেশের কিছু অঞ্চলের মানুষ নারীদের কাজ করতে দেখতে চায় না। ওইসব অঞ্চলে আমাদের নারী কর্মীরা গোপনে এবং ওড়নার নিচে লুকিয়ে টিকা সরবরাহ করেন।’

পাকিস্তানে পোলিও নির্মূল কর্মসূচির অধীনে দুই লাখ ৮০ হাজারের বেশি চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী কর্মরত। তাদের দুই-তৃতীয়াংশই নারী।

রক্ষণশীল দেশটিতে শিশুদের পোলিও টিকা খাওয়াতে বাড়িতে বাড়িতে গিয়েও তাদের মাদের রাজি করাতে হয়, যে কারণে টিকা কর্মসূচিতে নারীদের এ আধিক্য।

পাকিস্তানে অনেক পরিবারেই টিকার কার্যকারিতা ও টিকাদানের আসল উদ্দেশ্য নিয়ে সন্দেহ বিদ্যমান। অনেক পাকিস্তানি বিশ্বাস করেন যে ‘টিকা কর্মসূচির আড়ালে দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করে বহিঃশত্রুরা।’

বিশেষ করে আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন আল-কায়েদার প্রতিষ্ঠাতা ওসামা বিন লাদেন পাকিস্তানের অ্যাবোটাবাদ শহরে যুক্তরাষ্ট্রের গোপন অভিযানে নিহত হওয়ার পর বিপুলসংখ্যক পাকিস্তানি টিকা নিতে অস্বীকৃতি জানায়।

আত্মগোপনে থাকা লাদেনের সন্ধান পেতে আমেরিকান গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ ভুয়া টিকা কর্মসূচি চালাতে পাকিস্তানি চিকিৎসক শাকিল আফ্রিদিকে কাজে লাগিয়েছিল বলে খবর প্রকাশ হলে টিকাবিরোধী মনোভাব জোরদার হয় দেশটিতে।

এ ছাড়া টিকা ইসলাম ধর্মসম্মত বা হালাল কি না, মেয়াদোত্তীর্ণ কি না, শিশুদের নপুংসক করে দেবে কি না, টিকার গুণগত মান কেমন- এমন নানা প্রশ্ন রয়েছে সাধারণ পাকিস্তানিদের মনে। করোনাভাইরাস মহামারির কারণেও গত দেড় বছরে স্বাস্থ্যকর্মীদের সংস্পর্শ এড়াতে টিকা নিতে অস্বীকৃতি জানায় অনেকে।

এ অবস্থায় পোলিও টিকা নিয়ে পাকিস্তানিদের অস্বস্তি দূর করতে রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, ইউনিসেফসহ বিভিন্ন সংগঠন।

এ বিভাগের আরো খবর