বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ভিনেগার শুঁকলে করোনার উপসর্গ সারে না

  •    
  • ১৩ অক্টোবর, ২০২১ ১৭:৫৬

পান্তাই হসপিটাল কুয়ালালামপুরের রেস্পিরেটরি মেডিসিন বিভাগের বিশেষজ্ঞ ড. হেলমি হাজা মাইদিন বলেন, ‘বরং এমন পথ্য প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অসুস্থতা আরও বাড়িয়ে দিতে পারে। ভিনেগারে অ্যাসিটিক অ্যাসিড থাকে। এটি শুঁকলে শ্বাসতন্ত্রের ক্ষয় হতে পারে, মুখে গেলে দাঁত ক্ষয় হতে পারে, পরিপাকতন্ত্র এমনকি চোখেরও ক্ষতি হতে পারে। এগুলো প্রত্যক্ষ ক্ষতি। অন্যদিকে পরোক্ষ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে চিকিৎসা গ্রহণের ক্ষমতা কমে আসা। সবমিলিয়ে এটি জীবনকে হুমকির দিকে ঠেলে দেয়া একটি পথ্য।’

ফেসবুক, টিকটকসহ বেশ কিছু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল পোস্টে দাবি করা হয়েছে, ভিনেগার শুঁকে করোনাভাইরাসের উপসর্গ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। চলতি বছরের ২১ আগস্ট ফেসবুকে মালয়েশীয় ভাষায় এমন একটি পোস্ট প্রকাশিত হয়।

বার্তা সংস্থা এএফপির ফ্যাক্ট চেক প্রতিবেদনে বলা হয়, পোস্টটি এমনভাবে লেখা হয়েছে যে মনে হচ্ছে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে সেরে ওঠা কোনো ব্যক্তি সাক্ষ্য দিচ্ছে। পোস্টটি শেয়ার হয়েছে ১৫০ বারের বেশি।

মালয়েশীয় ভাষায় লেখা পোস্টটির অংশবিশেষের বাংলা অনুবাদ করলে অর্থ দাঁড়ায়, ‘বন্ধুদের বলতে চাই, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলেই আগে হাসপাতালে চলে যাবেন না। বরং সম্ভব হলে বাড়িতে বসে ঘরোয়া পথ্যে এটি সারানোর চেষ্টা করুন।

‘আমি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গুরুতর অসুস্থতায় ভুগেছি। নিজের গাড়িতে চড়ে হাসপাতালে গিয়েছি, আমাকে অক্সিজেনও নিতে হয়েছে। পরিবারের সবাই সে সময় অসুস্থ ছিল বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে বাড়িতে ফেরার অনুমতি নিই। সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছায় তারা আমাকে বাড়িতে ফিরতে দেয়। কিন্তু পরদিন আমি আরও মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়ি…

‘আমার মনে আছে, রান্নাঘরে ভিনেগার রাখা ছিল। একটি তোয়ালেতে আমি কিছুটা ভিনেগার ঢালি এবং তা দিয়ে নাক চেপে ধরি। ওই অবস্থায় বারবার শ্বাস নিচ্ছিলাম, কষ্টও হচ্ছিল। এরপর মুখের ওপর তোয়ালে রাখি আমি, নাকও ঢাকা ছিল… আমি মুখ দিয়ে শ্বাস নিচ্ছিলাম। তিনবার এভাবে শ্বাস নেয়ার পর আমি আগের চেয়ে ভালো অনুভব করতে শুরু করি।

ভিনেগার শুঁকে করোনার উপসর্গ দূর করার বিষয়ে ভাইরাল পোস্টটি মিথ্যা বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। ছবি: এএফপি

‘আপনাদের অনেকের এতে কাশি হতে পারে, ফুসফুসে অস্বস্তিও হতে পারে। কিন্তু তাও ধৈর্য্য ধরে এটি চর্চা করুন। এতে কফ পুরোপুরি বেরিয়ে যায় এবং শ্বাসপ্রশ্বাস স্বাভাবিক হয়ে আসে… মুখে ভিনেগার প্রবেশ করতে দিন… এতে কিছুটা গরম বোধ হবে, টক অনুভূত হবে, কিন্তু তারপর কাশির সঙ্গে কফ বেরিয়ে আসবে।

‘সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছায় আমার ফুসফুস ও গলা থেকে প্রচুর কফ বেরিয়ে এসেছিল এবং ভেতরটা পরিষ্কার হয়ে গেছে… এরপর থেকে অনেক সুস্থ বোধ করছি। শ্বাস নিতে পারছি… ভেতর থেকে বেরিয়ে আসা কফে করোনাভাইরাস ছিল। আমাদের ফুসফুসে বাতাস ঢোকার পথ আটকে রেখেছিল সেগুলো।

‘সৌভাগ্যক্রমে এখন আর কিছু আটকে আছে বলে অনুভব করছি না আমি। শ্বাসপ্রশ্বাসও স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। ক্লান্ত লাগছে না।’

ফেসবুকে পরবর্তীতে একই দাবি সম্বলিত দুটি পোস্ট ১৩০ বারের বেশি শেয়ার হয়েছে। ভিডিওতে এক ব্যক্তি কাছাকাছি দাবি করেও একটি পোস্ট করেছেন ফেসবুকে ও টিকটকে।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ দাবি মিথ্যা।

পান্তাই হসপিটাল কুয়ালালামপুরের রেস্পিরেটরি মেডিসিন বিভাগের বিশেষজ্ঞ ড. হেলমি হাজা মাইদিন বলেন, ‘বরং এমন পথ্য প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অসুস্থতা আরও বাড়িয়ে দিতে পারে।

‘ভিনেগারে অ্যাসিটিক অ্যাসিড থাকে। এটি শুঁকলে শ্বাসতন্ত্রের ক্ষয় হতে পারে, মুখে গেলে দাঁত ক্ষয় হতে পারে, পরিপাকতন্ত্র এমনকি চোখেরও ক্ষতি হতে পারে। এগুলো প্রত্যক্ষ ক্ষতি। অন্যদিকে পরোক্ষ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে চিকিৎসা গ্রহণের ক্ষমতা কমে আসা। সবমিলিয়ে এটি জীবনকে হুমকির দিকে ঠেলে দেয়া একটি পথ্য।’

মালয়েশিয়ার সেলায়াং হাসপাতালের সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ ড. অনুরাধা পি. রাধাকৃষ্ণান বলেন, ‘করোনা সারাতে কিংবা প্রতিরোধে ভিনেগারের সাহায্য নেয়ার এ দাবি একেবারেই ভিত্তিহীন। এ দাবির পক্ষে গ্রহণযোগ্য কোনো প্রমাণ নেই।’

অলাভজনক সংস্থা মেডানের করোনাভাইরাসবিষয়ক প্রমাণভিত্তিক গবেষণার বৈশ্বিক কেন্দ্র হেলথ ডেস্ক। প্রতিষ্ঠানটি ভিনেগার শুঁকে করোনাভাইরাসের উপসর্গ দূর করার বিষয়ে এক প্রতিক্রিয়ায় বলেছে, ‘ভিনেগার হলো অ্যাসিটিক অ্যাসিড ও পানির মিশ্রণ। এটি মৃদু অ্যাসিডিক। বিভিন্ন ধরনের ভিনেগারে রং ও ঘ্রাণের জন্য অন্যান্য উপকরণও মেশানো হয়।

‘চিকিৎসাবিদরা সবসময়েই যে কোনো প্রয়োজনে নাক, মুখ ও গলায় সরাসরি সংস্পর্শ এড়িয়ে ভিনেগার ব্যবহারের পরামর্শ দেন।

‘ভিনেগারের মতো ক্ষারীয় উপাদান ব্যবহারে বা বেশি ব্যবহারে স্বাস্থ্যের উপকারের চেয়ে অপকারিতাই বেশি। নাকে ব্যবহারযোগ্য ভিনেগার আর মাউথওয়াশও চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ব্যবহার করা উচিত।’

এ বিভাগের আরো খবর