দুর্গাপূজার মণ্ডপে বায়না না পেয়ে হতাশ হয়ে ফিরে গেলেন পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বাজারে আসা অনেক ঢাকি।
ফলে উৎসবের মধ্যেও অর্থাভাবে আনন্দ ঢাকা পড়েছে ঢাকি পরিবারগুলোতে।
পূজার সঙ্গে ঢাকের শব্দ জড়িত গভীরভাবে। ঢাক ছাড়া পূজার কথা ভাবাই যায় না। কিন্তু কোভিড সংক্রমণের কারণে বর্তমানে অনেক জায়গায় পূজার আয়োজন বন্ধ হয়ে গেছে। আবার অনেক পূজা কমিটি তাদের বাজেট কমিয়ে আয়োজন ছোট করে দিয়েছে।
এতেই কোপ পড়েছে ঢাকি দলের বাজেটে। পূজার চার দিন ঢাকিরা ঢাক বাজিয়ে মানুষকে আনন্দ দেন। সেই আনন্দ দিতে কলকাতার পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, বর্ধমান ও বীরভূমসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে অনেক ঢাকি বায়নার জন্য জড়ো হন হাওড়া, শিয়ালদা ও খড়ুয়া বাজারে। কিন্তু চতুর্থী, পঞ্চমী, সপ্তমী এমনকি অষ্টমী পেরিয়ে গেলেও এখনও অনেকেই বায়না পাননি। তাই হতাশ হয়ে খালি হাতেই ফিরতে হচ্ছে অনেক ঢাকিকে।
বর্ধমান থেকে এসেছেন তপন দাস। শিয়ালদা ঢাকিবাজারে সারারাত মশার কামড় খেয়ে পড়ে থেকেও বায়না পাননি তিনি। পরিবারের ছোটদের আবদারের কথা ভেবে এখন চিন্তায় পড়েছেন তপন দাস।
জামালপুর থেকে আসা অতুল জানান, ‘সারা বছর অন্যের জমিতে কাজ করে কোনো রকম আধপেট খেয়ে সংসার চলে। পূজার কয়দিন ঢাক বাজিয়ে যা রোজগার হয় তা দিয়ে কয়েকটা দিন স্ত্রী-সন্তান নিয়ে পেট ভরে খেতে পাই। এবার তাও হলো না।’
পেশায় দিনমজুর। তবে সখের বসে শুধু পূজার সময় ঢাক বাজান সুনীল মণ্ডল। স্ত্রীকে বলে এসেছেন, নতুন শাড়ি কিনে বাড়ি ফিরবেন। কিন্তু এখন কী জবাব দেবেন ভেবে পাচ্ছেন না। প্রায় চার দিন হতে চলল, শুকনা মুড়ি খেয়ে বায়নার জন্য ঢাক বাজিয়ে যাচ্ছেন। যদি বাজনা শুনে কেউ আসে।
খড়ুয়া বাজারের বায়না না পাওয়া ঢাকি রুইদাস বলেন, ‘এই বাজারে প্রতিবছরই আসি। বায়নার জন্য বারোয়ারি পূজা কমিটিগুলো এখান থেকেই নিজেদের মণ্ডপে ঢাক বাজানোর জন্য নিয়ে যান। কিন্তু এ বছর আর হলো না।’
রুইদাসের মতো দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করেও বায়না না পেয়ে এভাবেই বাড়ি ফিরতে হয়েছে বহু ঢাকিকে।