বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বিয়েতে জৌলুশ কমানোর পর সংসারে শান্তি

  •    
  • ১২ অক্টোবর, ২০২১ ১৮:৪৯

ইকরা আলতাফ বলেন, ‘ইসলাম ধর্ম আমাদের এই নতুন নিয়মের পেছনে উৎসাহ হিসেবে কাজ করেছে। যৌতুক ও ব্যয়বহুল বিয়ের প্রথা নারীর জীবন কঠিন করে তোলে। এটি নারীর প্রতি সহিংসতা ও বৈষম্য তৈরি করে। এসব প্রথার কারণে অনেক বাবা-মা কন্যাসন্তান নিতে চান না।’

ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে সিন্ধু নদীর ধারে বাবাওয়াইল গ্রাম। নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধে নতুন এক রাস্তা খুঁজে বের করেছেন গ্রামটির বাসিন্দারা। এ জন্য বিয়ের অনুষ্ঠানের খরচ কমিয়ে যৌতুক নিষিদ্ধ করেছেন তারা। বাসিন্দারা বলছেন, বিয়ের অনুষ্ঠানে অতিরিক্ত খরচের বদলে সেই টাকা ছেলেমেয়েদের শিক্ষার পেছনে ব্যয় করা উচিত।

জাবারওয়ান পর্বতের পাদদেশের গ্রামটির বাসিন্দাদের বেশির ভাগই পাশমিনা শাল তৈরির সঙ্গে জড়িত। এ ছাড়া অনেকে কৃষিকাজও করেন।

যুক্তরাজ্যের সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাবাওয়াইল গ্রাম দক্ষিণ এশিয়ার সেই দুর্লভ জায়গা, যেখানে যৌতুক ও ব্যয়বহুল বিয়ের অনুষ্ঠান বন্ধ করা সম্ভব হয়েছে। পৃথিবীর এই অঞ্চলটিতে বিয়েতে অনেক খরচ হয়। এতে কোনো কোনো পরিবারের সারা জীবনের সঞ্চয় শেষ হয়ে যায়। টাকার বড় অংশই খরচ হয় বিয়ে উপলক্ষে অতিথি, আত্মীয়স্বজন ও প্রতিবেশীদের খাওয়াতে।

এ ছাড়া যৌতুক হিসেবে বরকে বড় অঙ্কের টাকার উপহার দিতে হয়। এর মধ্যে বিভিন্ন আসবাবপত্র থেকে শুরু করে স্বর্ণালংকার, নগদ টাকা এমনকি গাড়ি পর্যন্ত রয়েছে। কখনও কখনও যৌতুক ঠিক না হলে বিয়েও আটকে থাকে।

প্রায় ৬০ বছর আগে থেকে ভারতে যৌতুক নিষিদ্ধ। তবে দেশটিতে যৌতুকের সংস্কৃতির শিকড় অনেক গভীরে। যৌতুকের কারণে ভারতে প্রতিদিন গড়ে ২০ জন নারী প্রাণ হারান। এ প্রথার শিকার হয়ে প্রতিবছর মারা যান প্রায় আট হাজার নারী।

বাবাওয়াইল গ্রামের ইমাম বশির আহমেদ বলেন, ‘যৌতুক ও ব্যয়বহুল বিয়ে নিয়ে যেসব ঘটনা আমাদের কানে আসত সেগুলো খুবই বেদনাদায়ক ছিল। আমি ভাবতাম, কীভাবে এই প্রথাগুলো ছাড়াই আমাদের সন্তানদের বিয়ের ব্যবস্থা করা যায়।’

২০০৪ সালের শীতকালে গ্রামের প্রায় ২০ মুরব্বিকে নিয়ে আলোচনায় বসেন বশির। কয়েক দিনের আলোচনার পর গ্রামবাসীর কাছে নিজেদের প্রস্তাব তুলে ধরেন তারা।

এতে বলা হয়, বিয়েতে কনের পরিবার কোনো টাকা দিতে পারবে না। তবে ইসলামের নিয়ম অনুযায়ী, মোহরানা হিসেবে কনেকে ৯০০ ভারতীয় রুপি দেবেন বর। কনের পরিবারকে দিতে হবে আরও ১৫ হাজার রুপি।

প্রস্তাবে আরও বলা হয়, বিয়েতে অতিথিদের খাওয়াতে ৫০ কেজি মাংস ও ৪০ কেজি চাল দিয়ে রান্না করবে কনের পরিবার।

এর আগে ওয়াজওয়ান নামের বিয়ের অনুষ্ঠানে অন্তত ১০০ অতিথিকে খাওয়াত কনের পরিবার। কয়েক পদের খাবারের আয়োজন করতে খরচ হতো লাখ লাখ রুপি।

কাশ্মীরের বাবাওয়াইল গ্রামের একটি রাস্তা। ছবি: কাশ্মীর নিউজ অবজারভার

গ্রামের বাসিন্দারা খুব দ্রুতই এই নতুন নিয়ম মেনে নেন। এরপর থেকে বাবাওয়াইল গ্রামে যৌতুক দিয়ে বা অতিরিক্ত খরচ করে কোনো বিয়ে হয়নি। কেউ এই নিয়ম ভঙ্গ করলে তাকে সামাজিকভাবে প্রত্যাখ্যান করার শাস্তিও রাখা হয়েছে।

তবে মুদ্রাস্ফীতির কারণে গত বছর নিয়মে কিছুটা বদল এনেছেন বাসিন্দারা। এতে দেনমোহরের পরিমাণ ঠিক হয়েছে ২০ হাজার রুপি। একই সঙ্গে কনের পরিবারকে দিতে হবে ৩০ হাজার রুপি। এ ছাড়া বিয়ে উপলক্ষে কোনো ভোজন অনুষ্ঠান আয়োজন করা যাবে না। আপ্যায়নের জন্য পরিবেশিত হবে শুধু খেজুর ও চা। কনের বাড়িতে যাওয়ার সময় বরকে সঙ্গ দিতে পারবেন মাত্র তিনজন স্বজন।

গ্রামবাসী জানিয়েছেন, বিয়ের এমন নিয়ম করার পর থেকে সেখানে নারীর প্রতি সহিংসতার কোনো ঘটনা ঘটেনি। একই সঙ্গে কোনো দম্পতির বিবাহবিচ্ছেদও হয়নি।

সম্প্রতি বিয়ে করেছেন ২৫ বছর বয়সী ইকরা আলতাফ।

স্নাতকোত্তর ডিগ্রি পাওয়া এই বাসিন্দা বলেন, ‘ইসলাম ধর্ম আমাদের এই নতুন নিয়মের পেছনে উৎসাহ হিসেবে কাজ করেছে। যৌতুক ও ব্যয়বহুল বিয়ের প্রথা নারীর জীবন কঠিন করে তোলে। এটি নারীর প্রতি সহিংসতা ও বৈষম্য তৈরি করে। এসব প্রথার কারণে অনেক বাবা-মা কন্যাসন্তান নিতে চান না।’

যৌতুক বন্ধ হওয়ার পর সংসারে শান্তি আসায় গ্রামের বাসিন্দারাও খুশি।

গ্রামটির বাসিন্দা গুলাম নবী শাহ সাবেক সরকারি কর্মকর্তা।

তিনি বলেন, ‘আমাদের মেয়েরা কোনো লাঞ্ছনার শিকার হচ্ছে না দেখে আমরা খুব সন্তুষ্ট। আগে বিয়েতে যে বিপুল টাকা খরচ হতো, সেটি আমরা এখন ছেলেমেয়েদের শিক্ষার মতো আরও ভালো কাজে খরচ করতে পারছি।’

গুলাম বলেন, ‘বিয়ের অনুষ্ঠানকে অনাড়ম্বর রাখতে আমি এখন অন্য গ্রামের স্বজনদেরও বোঝানোর চেষ্টা করছি। আমি মরার আগে দেখে যেতে চাই, কাশ্মীর বদলাচ্ছে।’

এ বিভাগের আরো খবর