যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ১৩ বছর আগে ছিলেন সিনেটর। সে সময় আফগানিস্তান সফরকালে বড় বিপদ থেকে রক্ষা পেয়েছিলেন তিনি। তার জীবন বাঁচানো আফগান কর্মীদের অন্যতম ছিলেন দোভাষী আমান খালিলি। তালেবান আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার দুই মাস পর পরিবার নিয়ে দেশ ছাড়ার সুযোগ পেয়েছেন সেই দোভাষী।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০০৮ সালে বাইডেনসহ তৎকালীন কয়েকজন আমেরিকান আইনপ্রণেতা আফগানিস্তানে সফরে গিয়েছিলেন। প্রবল ঝড়ের মুখে বরফে ঢাকা এক উপত্যকা অঞ্চলে অবতরণ করতে বাধ্য হয় তাদের বহনকারী হেলিকপ্টারটি। অঞ্চলটিতে তাদের ওপর হামলার ঝুঁকি ছিল।
সে সময় বাইডেন ও বাকি আমেরিকান আইনপ্রণেতাদের উদ্ধার করে নিরাপদ আশ্রয়ে পৌঁছে দিয়েছিলেন আমান খালিলিসহ যুক্তরাষ্ট্রের নিয়োগপ্রাপ্ত একদল আফগান কর্মী।
গত ১৫ আগস্ট তালেবান রাজধানী কাবুলের নিয়ন্ত্রণ নেয়। তার আগে থেকেই দেশ ছাড়ার পাঁয়তারা শুরু করেন খালিলি। কিন্তু ভিসা জটিলতার কারণে পেরে উঠছিলেন না কিছুতেই।
প্রায় দুই মাস চেষ্টার পর শেষ পর্যন্ত তালেবানের প্রতিহিংসার শিকার হওয়ার ভয়ে দেশ ছেড়ে পালানো লাখো আফগানের সঙ্গে শামিল হয়েছেন খালিলিও।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক প্রতিনিধি সোমবার বিবিসিকে জানান, খালিলি ও তার পরিবারের সদস্যরা নিরাপদে আফগানিস্তান থেকে বের হতে পেরেছেন। আপাতত তিনি প্রতিবেশী পাকিস্তানে আশ্রয় নিয়েছেন। এখন সেখান থেকে অন্য কোনো দেশে যাওয়ার চেষ্টা করছেন তিনি।
আমেরিকান ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের প্রত্যক্ষ সংশ্লিষ্টতায় খালিলিকে পরিবারসহ আফগানিস্তান থেকে সরানো সম্ভব হয়েছে। এ কাজে আরও অনেকেই আমাদের সহযোগিতা করেছেন। তাদের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ।’
ভবিষ্যৎ আমেরিকান প্রেসিডেন্টের সঙ্গে দৈবচক্রে দেখা হয়েছিল ১৩ বছর আগে। সেদিন সিনেটর চাক হ্যাগেল ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরিও ছিলেন বাইডেনের সঙ্গে।
ওই ঘটনার এক যুগ পর আফগানিস্তান ছাড়তে নিজের ও পরিবারের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ অভিবাসী ভিসা (এসআইভি) নিশ্চিতের চেষ্টায় মরিয়া খালিলি।
আগস্টে তুমুল অরাজকতার মধ্যে আফগানিস্তান থেকে যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ণাঙ্গ সেনা প্রত্যাহারের পর স্ত্রী, পাঁচ সন্তান ও নিজের প্রাণ বাঁচাতে সরাসরি বাইডেনের প্রতিই আহ্বান জানিয়েছিলেন খালিলি। সিএনএনকে বলেছিলেন, ‘আমি তাকে বিশ্বাস করি। আমি বিশ্বাস করি যে তার পক্ষে সব অসাধ্য সাধন করা সম্ভব।’
হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি জেন সাকির কাছে সেপ্টেম্বরে খালিলির খবর জানতে চেয়ে প্রশ্ন করেছিলেন সাংবাদিকরা। সে সময় ‘তুষারঝড়ে প্রিয় মানুষদের বাঁচানোর জন্য’ খালিলির প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে সাকি বলেন, ‘মিত্রদের নিরাপদ আশ্রয়ের ব্যবস্থা করতে যুক্তরাষ্ট্র দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।’
বর্তমানে পাকিস্তানে অবস্থানরত দুই শতাধিক আফগান নাগরিককে উদ্ধারে কাজ করছে হিউম্যান ফার্স্ট কোয়ালিশন নামের একটি সংগঠন। খালিলি ও তার পরিবারকে নিরাপদ আশ্রয়ে নিতে যুক্তরাষ্ট্র ও পাকিস্তান সহযোগিতা করেছে বলে জানিয়েছে সংগঠনটি।
যুদ্ধে আমেরিকান সেনাবাহিনীকে সহযোগিতা করা আফগান ও ইরাকি নাগরিকদের জন্য এসআইভি যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ কর্মসূচি। খালিলি সে ভিসা পেয়েছেন কি না কিংবা যুক্তরাষ্ট্রে যাচ্ছেন কি না, তা এখনও জানা যায়নি।
২০০৮ সাল থেকে এসআইভি কর্মসূচির আওতায় যুক্তরাষ্ট্রে পুনর্বাসিত হয়েছে প্রায় ৭০ হাজার আফগান।