ইরাকে এবারের সংসদীয় নির্বাচনে শিয়া মুসলমান ধর্মীয় নেতা মুক্তাদা আল-সদরের দল সদরিস্ট মুভমেন্ট জয় পেতে যাচ্ছে। আর ইরানপন্থি দলগুলোর হয়েছে ভরাডুবি।
স্থানীয় সময় রোববার অনুষ্ঠিত নির্বাচনের প্রাথমিক ফল, নির্বাচন কর্মকর্তা ও সদরিস্ট মুভমেন্টের মুখপাত্র এসব তথ্য জানান বলে আল-জাজিরা ও আরব নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
সোমবার ইরাকের সংসদীয় নির্বাচনের প্রাথমিক ফলে দেখা যায়, সদরিস্ট মুভমেন্টের পর নির্বাচনি প্রতিযোগিতায় এগিয়ে আছে দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী নাউরি আল-মালিকির দল ইসলামিক দাওয়া পার্টি।
এ ছাড়া সদরিস্ট মুভমেন্টের প্রার্থীরা ইরানপন্থি ফাতাহ জোটকে হারিয়েছেন। আধা সামরিক নেতা হাদি আল-আমেরির নেতৃত্বাধীন ওই জোটে বেশ কয়েকটি দল রয়েছে।
২০০৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন মিত্র বাহিনী ইরাকে সামরিক অভিযান চালিয়ে সুন্নি শাসক সাদ্দাম হোসেনকে ক্ষমতাচ্যুত করে। ওই ঘটনার পর ইরাকের শিয়া সংখ্যাগরিষ্ঠ দল ও কুর্দিদের দেশটির সরকারে আধিপত্য বিস্তার করতে দেখা যায়।
ক্ষমতাসীন নেতাদের দুর্নীতির অভিযোগে ও রাজনৈতিক সংস্কারের দাবিতে ২০১৯ সালে ইরাকজুড়ে সরকারবিরোধী আন্দোলন শুরু হয়।
গণবিক্ষোভের চাপে একপর্যায়ে ইরাকের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী আদিল আব্দুল-মাহদি পদত্যাগে বাধ্য হন। এরপর দেশটির প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মুস্তাফা আল-কাধিমিকে নিয়োগ দেয়া হয়।
তেলসমৃদ্ধ অথচ দারিদ্র্যপীড়িত ইরাকে ২০২২ সালে সংসদীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। তবে ওই আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় নির্ধারিত সময়ের কয়েক মাস আগে নির্বাচনের ঘোষণা দেয়া হয়।
রোববারে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে মাত্র ৪১ শতাংশ ইরাকি ভোট দেন। এই প্রথম ইরাকে এত কম মানুষ নির্বাচনে অংশ নেন।
প্রাথমিক ফল বলছে, রাজধানী বাগদাদসহ ইরাকের বেশ কয়েকটি প্রদেশে সদরিস্ট মুভমেন্ট ৭০টির বেশি আসন জিতেছে।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যম ও সদরিস্ট মুভমেন্টের কার্যালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়, সংসদের ৩২৯ আসনের মধ্যে ধর্মীয় নেতা আল-সদরের দল ৭৩টি আসন জিতেছে।
ইরাকের নির্বাচন কমিশনের এক কর্মকর্তা জানান, নির্বাচনে আল-সদর এগিয়ে।
তবে আল-সদরের দল ঠিক কতটি আসন জিতেছে, তা নিশ্চিত করেননি তিনি।
প্রাথমিক ফলে আরও দেখা যায়, ২০১৯ সালের গণ-আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়া সংস্কারপন্থি প্রার্থীরা নির্বাচনে বেশ কয়েকটি আসনে জিতেছেন।
ইরাকে গণবিক্ষোভ চলাকালে ইরান সমর্থিত রাজনৈতিক দলগুলোর বিরুদ্ধে প্রায় ৬০০ মানুষ হত্যার অভিযোগ রয়েছে। প্রাথমিক ফল ও স্থানীয় কর্মকর্তাদের ভাষ্য, ওই দলগুলো ২০১৮ সালের নির্বাচনের চেয়েও এবার কম ভোট পেয়েছে।
২০১৮ সালের সংসদীয় নির্বাচনে প্রথম অংশ নেয়ার মধ্য দিয়ে ক্ষমতা বিস্তার করেন আল-সদর। ওই নির্বাচনে তার জোট ৫৪টি আসন পেয়েছিল।
যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক অভিযানের পর ইরাকের রাজনীতিতে নিজেকে গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় নিয়ে যান আল-সদর। ওই অভিযানের পর যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সশস্ত্র অভ্যুত্থানেরও নেতৃত্ব দেন তিনি।
যুক্তরাষ্ট্র, প্রতিবেশী দেশ ইরানসহ সব ধরনের বিদেশি হস্তক্ষেপের বিরোধী পপুলিস্ট নেতা আল-সদর। ইরাকের রাজনীতিতে ইরানের নাক গলানো নীতির বরাবরই সমালোচনা করেন তিনি।