উদ্যোগ আর অর্থের অভাবে ১৮ বছর আগে পূজার আয়োজন বন্ধ হয়ে যায় সম্প্রীতির শহর কলকাতার আলিমুদ্দিন স্ট্রিটে।
দীর্ঘ দেড় যুগ পরে এ বছর সেখানে দুর্গাপূজার দায়িত্ব নিয়েছেন স্থানীয় মুসলিম যুবকরা। শাকিল, তৌসিফ, ওয়াসিমসহ পাড়ার মুসলিম যুবকদের উদ্যোগে পালিত হচ্ছে দুর্গাপূজা। ফের বাজছে ঢাক, মিলছে ধুনোর গন্ধ, জাঁকজমক সাজে আলোকিত হয়ে উঠেছে আলিমুদ্দিন স্ট্রিট এলাকা।
বহুল পরিচিত আলিমুদ্দিন স্ট্রিট কলকাতা পুরসভার ৬২ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্যে পড়ে। রাজ্য সিপিএমের সদরদপ্তর এখানে। এখানে অবাঙালি মুসলিমদের বাসই বেশি। ১৮ বছর আগেও অল্প যে কয় ঘর হিন্দু পরিবার ছিল, তাদের উদ্যোগে মুসলিমদের সহযোগিতায় দুর্গা উৎসব হতো আলিমুদ্দিনে।
সমগ্র কলকাতার মতোই আলো ঝলমল করে উঠত আলিমুদ্দিন স্ট্রিট। উৎসবমুখর থাকত মহল্লা। কিন্তু সময়ের আবর্তে হিন্দু পরিবার কমে যাওয়ায় উদ্যোগ, লোকবল সর্বোপরি অর্থাভাবে বন্ধ হয়ে যায় আলিমুদ্দিনের দুর্গোৎসব।
এরপর থেকে প্রতিবছর শারদ উৎসবে কলকাতা যখন আলোর রোশনাইয়ে ভেসে যায়, তখন আলিমুদ্দিন স্ট্রিট এককোণে অন্ধকারে পড়ে থাকে। আগের ঝলমলে দুর্গোৎসবের কথা মনে করে দুঃখ বাড়ে পাড়ার যুবকদের, এলাকার মানুষের।
তাই এ বছর আলিমুদ্দিনে পূজার দায়িত্ব নিয়েছেন শাকিল, তৌসিফ, ওয়াসিমরা। তাদের উদ্যোগে সেখানে শুরু হয়েছে দুর্গাপূজা।
ছেলেরা দলবেঁধে পূজার প্রতিমা গড়া থেকে পুরোহিত ঠিক করা, লাইটের ব্যবস্থা, ডেকোরেশনের সবটাই নিজেদের হাতে করছেন। সমস্ত ব্যয় বহন করেছেন নিজেরাই। তবে তাদের এ উদ্যোগে খুশি হয়ে অনেকেই সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছেন।
পূজার রীতিনীতি নিয়ে অসুবিধা হলে স্থানীয় হিন্দু পরিবারের মানুষের পরামর্শ নিচ্ছেন তারা। পূজার চার দিন থাকছে ভোগের ব্যবস্থা। ষষ্ঠী থেকে বিসর্জন পর্যন্ত, সিঁদুর খেলাসহ সব আয়োজন থাকছে আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের সম্প্রীতির দুর্গোৎসবে।
কলেজের শিক্ষার্থী সাবিনার ভাষ্য, ‘আগে পূজার দিনগুলোতে খুব খারাপ লাগত। চারদিক আলোয় ভেসে যাচ্ছে অথচ আমরা অন্ধকারে ডুবে আছি। এ বছর এখানে আবার পূজা হওয়ায় আমরা খুব খুশি।’
স্থানীয় বৃদ্ধ পিনাকী সেন বলেন, ‘ভাবতেই পারিনি, ওরা পূজার আয়োজন করবে। তবে ওদের উদ্যোগে উৎসবের এই পরিবেশ ভীষণ ভালো লাগছে।’
উদ্যোক্তাদের অন্যতম তৌসিফ রহমান বলেন, ‘আমরা এখানে সব ধর্মের মানুষ মিলেমিশে থাকি। একে অপরের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করি। উৎসবের কোনো রং হয় না। এবার থেকে দুর্গাপূজাও করছি আমরা।’