বিশ্বের সাত কোটির বেশি মানুষ তোতলায় বলে ধারণা করা হয়। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও মাঝেমধ্যে ভাষণে তোতলান। কেন মানুষ তোতলায় এ নিয়ে বিশেষজ্ঞরা এখনও গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন।
তবে সাম্প্রতিক এক গবেষণায় তোতলামির সম্ভাব্য কারণ খুঁজে পেয়েছেন গবেষকরা। এর মাধ্যমে তোতলামির চিকিৎসা করা যাবে বলেও মনে করছেন তারা।
সাম্প্রতিক ওই গবেষণায় বিশেষজ্ঞরা জানতে পারেন, প্রাপ্তবয়স্করা যদি মনে করেন, তাদের কথা কেউ শুনছে না, তাহলে তাদের তোতলামি আপনা-আপনি বন্ধ হয়ে যায়।
সায়েন্স এলার্টের প্রতিবেদনে বলা হয়, গবেষণাটির একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে, এতে অংশগ্রহণকারীরা বিশ্বাস করেন, কথা বলার সময় তাদের চারপাশে কেউ ছিল না। তারা কী বলছেন, তা কেউ শোনেনি। ভিন্ন এই পরিস্থিতি সৃষ্টির ফলে তোতলামো থাকা ব্যক্তিদের কথাবার্তায় পরিবর্তন এ গবেষণার মাধ্যমে জানা যায়।
নিউ ইয়র্ক ইউনিভার্সিটির স্পিচ-ল্যাঙ্গুয়েজ প্যাথোলজিস্ট ও গবেষক এরিক জ্যাকসন বলেন, ‘বলা হয়, একা থাকলে তোতলামি থাকা ব্যক্তিরা তোতলান না।
‘তবে ল্যাবে পরীক্ষার মাধ্যমে এটি নিশ্চিত হওয়া যায়নি। কারণ তোতলানো ব্যক্তিরা ল্যাবে একা রয়েছেন, চারপাশে কেউ নেই, এটি তাদের আশ্বস্ত করা বেশ কঠিন।’
গবেষকরা ২৩ জন অংশগ্রহণকারীকে এ গবেষণায় যুক্ত করেন। পাঁচটি ভিন্ন পরিবেশে তাদের কথা বলা পরীক্ষা করা হয়। পরীক্ষার অংশ হিসেবে ভলান্টিয়ারদের জোরে জোরে পড়তে বলা হয়। কখনো বা তাদের নিজে নিজে কথা বলতে বলা হয়, যেখানে তাদের বোঝানো হয় তাদের কথা কেউ শুনছে না। দুজন শ্রোতাকে একা একা বলা ওই কথাগুলো শোনানোর পাশাপাশি অংশগ্রহণকারীদের গবেষকদের সঙ্গে আলাদা দুটি বাক্যালাপ করতে বলা হয়।
নিজে নিজে কথা বলার ক্ষেত্রে অংশগ্রহণকারীদের তিনটি কম্পিউটার কোডিং টাস্ক সম্পূর্ণ করতে বলা হয়।
অংশগ্রহণকারীদের গবেষকরা মিথ্যা বলেন যে কম্পিউটার টাস্ক করার সময় তাদের কথা কেউ শুনছে না। তাদের কথা মনোযোগ দিয়ে শোনার পাশাপাশি সেসব রেকর্ডও করেন গবেষকরা।
বিশেষজ্ঞদের ভাষ্য, একমাত্র ওই পরিবেশেই সব অংশগ্রহণকারীর তোতলামো একেবারে ছিল না বললেই চলে।
গবেষক জ্যাকসন বলেন, ‘ওই পরিবেশে অংশগ্রহণকারীরা একা রয়েছেন, এটা তাদের বিশ্বাস করাতে আমরা অভিনব পদ্ধতির আশ্রয় নিই। এতে দেখা যায়, অংশগ্রহণকারীরা ওই পরিবেশে তোতলান না।’
পরীক্ষা চলাকালে অংশগ্রহণকারীদের সঙ্গে যে মিথ্যা বলা হয়, তা পরে তাদের জানানো হয়। জানার পর সব অংশগ্রহণকারী ওইভাবে পরীক্ষা চালিয়ে যেতে সম্মত হন।
কোনো শ্রোতা না থাকায় কেন অংশগ্রহণকারীদের তোতলামি বন্ধ হয়ে যায়, এ সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু বলতে পারেননি গবেষকরা।
তবে গবেষকরা মনে করছেন, কথা বলার সময় মানুষজন থাকলে তারা তাদের মূল্যায়ন করবে- এমন অনুভূতি অংশগ্রহণকারীদের কথাবার্তার সাবলীলতায় প্রভাব ফেলতে পারে।
জেনেটিক্স ও নিউরোফিজিক্স মিলে তোতলামিতে ভূমিকা রাখতে পারে বলে ধারণা করা হয়। তবে সামাজিক কোনো বাস্তবতায় শিশুরাও তোতলায়, তা এখনো জানতে পারেননি বিজ্ঞানীরা।
জ্যাকসন বলেন, ‘আমি মনে করি, তোতলামি শুধু স্পিচ সমস্যা নয়। শক্তিশালী সামাজিক কারণ এতে ভূমিকা রাখতে পারে বলে আমার ধারণা।’