চীনকে রাগান্বিত করার ঝুঁকি নিয়ে কমপক্ষে এক বছর থেকে তাইওয়ানের সামরিক বাহিনীকে গোপনে প্রশিক্ষণ দিয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ বাহিনী।
অসমর্থিত সূত্রের বরাতে স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার এ তথ্য জানিয়েছে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল।
সংবাদমাধ্যমটির প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘অন্তত এক বছর ধরে তাইওয়ানের সেনাবাহিনী ও নৌবাহিনীকে যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ বাহিনীর প্রায় দুই ডজন সদস্য প্রশিক্ষণ দিয়ে যাচ্ছে।
‘প্রশিক্ষণ চলাকালীন স্বশাসিত দ্বীপ রাষ্ট্রটির বিরুদ্ধে চীনের সামরিক কর্মকাণ্ড ও রাজনৈতিক হুমকি বৃদ্ধি পায়।’
ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের প্রতিবেদনটি প্রকাশের পর বার্তা সংস্থা রয়টার্স সংশ্লিষ্ট দুটি সূত্রের বরাতে জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের প্রশিক্ষকরা তাইওয়ানে অস্থায়ী ভিত্তিতে রয়েছেন।
তাইওয়ানে ঠিক কত দিন ধরে যুক্তরাষ্ট্রের বাহিনী প্রশিক্ষণ দিচ্ছে তা জানাতে অস্বীকৃতি জানায় নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো।
তবে তাদের ভাষ্য, চলতি বছরের জানুয়ারিতে জো বাইডেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হওয়ার আগে থেকে অর্থাৎ দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমল থেকে তাইওয়ানের সামরিক বাহিনীর প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু হয়।
তাইওয়ানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী চিউ কুও-চেং ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের প্রতিবেদনে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে রয়টার্সকে তিনি বলেন, ‘বার্ষিক পরিকল্পনা অনুযায়ী সব ধরনের সামরিক কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয়।’
জার্নালের প্রতিবেদন নিশ্চিত বা অস্বীকার করেনি পেন্টাগন। এর মুখপাত্র জন সাপল জানান, তাইওয়ানের প্রতিরক্ষার স্বার্থে দেশটির সামরিক বাহিনীকে সহযোগিতা করে যুক্তরাষ্ট্র।
সাপল এক বিবৃতিতে বলেন, ‘তাইওয়ানকে দেয়া চীনের সাম্প্রতিক হুমকির সঙ্গে দ্বীপটির প্রতি আমাদের প্রতিরক্ষা সহযোগিতা একসূত্রে গাঁথা।
‘ওই অঞ্চলে শান্তিপূর্ণ অবস্থানের অঙ্গীকার করেছিল চীন। আমরা দেশটিকে আহ্বান জানাই, তারা যেন তাদের অঙ্গীকার মতো কাজ করে।’
তাইওয়ানকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রশিক্ষণ দেয়ার বিষয়ে ইন্দো-প্যাসিফিক নিরাপত্তা কর্মসূচির ফেলো জ্যাকব স্ট্রোকস বলেন, ‘এটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এর মাধ্যমে তাইওয়ানের সামরিক বাহিনীর প্রতিরক্ষা সক্ষমতা উন্নত হবে।’
এদিকে তাইওয়ানকে সামরিক সহযোগিতা দেয়া বন্ধে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘নিজেদের সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষায় প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নেবে চীন।’
শুক্রবার থেকে শুরু করে পরের তিন দিনে তাইওয়ানের আকাশ প্রতিরক্ষা অঞ্চলে প্রায় দেড় শটি যুদ্ধবিমান পাঠায় চীন।
এ নিয়ে চীন ও তাইওয়ানের মধ্যে উত্তেজনা আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। কারণ এত বেশিসংখ্যক যুদ্ধবিমান এর আগে কখনো তাইওয়ানের আকাশে পাঠায়নি চীন।
চীন ও তাইয়ানের সাম্প্রতিক উত্তেজনা গত ৪০ বছরে দেখা যায়নি বলেও মন্তব্য করেন তাইওয়ানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী চিউ।
পাশাপাশি ২০২৫ সালের ভেতর চীন তাইওয়ানে সর্বাত্মক আক্রমণ চালাতে পারে বলে মনে করেন তিনি।
তাইওয়ানকে নিজেদের প্রদেশ দাবি করা চীন ফের এটি দখলে বিভিন্ন সময়ে অঙ্গীকার করে। এ ছাড়া তাইওয়ানের নির্বাচিত সরকারকে শুরু থেকেই ‘বিচ্ছিন্নতাবাদী’ বলে আসছে চীন।
অন্যদিকে নিজেদের সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে দেখে তাইওয়ান।