আর্থিক নথির কাগজপত্র ফাঁস হওয়ায় বিশ্বনেতা, রাজনীতিক ও ধনকুবেরদের গোপন সম্পদ ও লেনদেন উন্মোচিত হয়েছে। এসব নথিতে বেরিয়ে আসছে চোখ ছানাবড়া হওয়ার মতো তথ্য।
‘প্যান্ডোরা পেপার্স’ নাম দেয়া অফশোর কোম্পানির এসব নথিতে প্রায় ৩৫ জন বর্তমান ও সাবেক নেতা এবং তিন শর বেশি সরকারি কর্মকর্তার নাম পাওয়া গেছে।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, গোপন নথিতে জানা যায়, জর্ডানের রাজা দ্বিতীয় আব্দুল্লাহ যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রে ৭০ মিলিয়ন পাউন্ড মূল্যের সম্পদের মালিক হয়েছেন।
এ ছাড়া কীভাবে যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার ও তার স্ত্রী লন্ডনে একটি অফিস কেনার সময় ৩ লাখ ১২ হাজার পাউন্ডের স্ট্যাম্প ডিউটি (বৈধ নথিতে সরকারি কর) ফাঁকি দিয়েছিলেন, তাও নথিতে উল্লেখ রয়েছে।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মোনাকোতে গোপনে সম্পদ কেনার তথ্যও ফাঁস হয়েছে।
গত সাত বছরে ফিনসেন ফাইলস, প্যারাডাইজ পেপার্স, পানামা পেপার্স ও লাক্সলিকসের মতো আর্থিক লেনদেনবিষয়ক নথি ফাঁসের পর প্যান্ডোরা পেপার্স বিশ্বের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের আর্থিক কেলেঙ্কারি ফাঁস করল।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল কনসোরটিয়াম অফ ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্টস (আইসিআইজে) গোপন নথিগুলো পরীক্ষা করে। সাড়ে ছয় শর বেশি সাংবাদিক এতে অংশ নেন।
বিবিসি প্যানোরামা, গার্ডিয়ানসহ আরও কয়েকটি সংবাদমাধ্যম প্রায় ১২ মিলিয়ন নথি ও ১৪টি আর্থিক সেবা প্রতিষ্ঠানের ফাইল দেখার সুযোগ পায়।
ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডস, পানামা, বেলিজ, সাইপ্রাস, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সিঙ্গাপুর, সুইজারল্যান্ডসহ অন্যান্য দেশে ওই প্রতিষ্ঠানগুলো রয়েছে।
দুর্নীতি, অর্থ পাচার ও বৈশ্বিক কর না দেয়ার অভিযোগ রয়েছে কয়েকজন প্রভাবশালীর বিরুদ্ধে।
যুক্তরাজ্যে গোপনে সম্পদ কিনতে আলোচিত ও সম্পদশালী ব্যক্তিরা কীভাবে বৈধ উপায়ে প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেছেন, এটাই প্যান্ডোরা পেপার্সের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিক।
ওই সব ক্রয়ের পেছনে ৯৫ হাজার অফশোর প্রতিষ্ঠানের মালিকের নামও প্রকাশ করে প্যান্ডোরা পেপার্স।
সম্পত্তি ক্রেতারা অর্থ পাচার কার্যক্রম গোপন করতে পারে- এ উদ্বেগের জায়গা থেকে যুক্তরাজ্য সরকার অফশোর সম্পদের মালিকদের নিবন্ধনের অঙ্গীকার বারবার করে আসছিল।
অঙ্গীকার মতো নিবন্ধনের কাজটি যুক্তরাজ্য সরকারের করতে না পারার ব্যর্থতাও গোপন নথি ফাঁসের মাধ্যমে উঠে আসে।
উদাহরণ হিসেবে দেশের সম্পদ লুটের অভিযোগ থাকা আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভ ও তার পরিবারের কথা বলা যায়।
সাংবাদিকদের অনুসন্ধানে জানা যায়, আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট আলিয়েভ ও তার নিকট সহযোগীরা যুক্তরাজ্যে ৪০০ মিলিয়ন পাউন্ডের বেশি মূল্যের গোপন অর্থ লেনদেনের সঙ্গে জড়িত।