ব্রাজিলের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় ফরতালেজা শহরের মেয়ে ছোট্ট নিকোল অলিভেইরা। বাবা কম্পিউটার বিজ্ঞানী।
তবে অলিভেইরার ঝোঁক কম্পিউটারের দিকে নয়, বরং আকাশের দিকে।
দুই বছর বয়সেই তারা ধরার জন্য আকাশের দিকে হাত বাড়াত সে। মার কাছে আবদার করে বলত, ‘ আমাকে একটা তারা দাও না।’
আকাশে ছড়িয়ে থাকা অসংখ্য তারা দেখতে দেখতে আট বছরে পা দিয়েছে অলিভেইরা। এরই মধ্যে বিশ্বের কনিষ্ঠতম জ্যোতির্বিদ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে সে।
বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়, নাসাসংশ্লিষ্ট কর্মসূচিতে যোগ দিয়ে অসীম উদ্দীপনার সঙ্গে গ্রহাণু খুঁজে বেড়ায় অলিভেইরা। অংশ নেয় আন্তর্জাতিক সেমিনারে। বৈঠক করে ব্রাজিলের নামকরা মহাকাশ বিজ্ঞানীদের সঙ্গে।
অলিভেইরার ঘরের দেয়ালজুড়ে সৌর জগৎ, ছোট রকেট ও স্টার ওয়ারের বিভিন্ন চরিত্রের পোস্টার।
নিজের কম্পিউটারের দুটি বড় স্ক্রিনে আকাশের ছবি দেখে পড়াশোনা করে অলিভেইরা। দেশের মানুষ আদর করে অলিভেইরার নাম দিয়েছে নিকোলিনহা।
অলিভেইরার জ্যোতির্বিজ্ঞানের শিক্ষক হেলিওমারজিও রডরিগেজ মোরেইরা বলেন, ‘তার দেখার ক্ষমতা অসাধারণ। গ্রহাণুর মতো দেখতে ছবির ছোট ছোট বিন্দু দ্রুতই শনাক্ত করতে পারে অলিভেইরা।
‘গ্রহাণু দেখতে পেলেই ক্লাসমেটদের জানায় সে, যেখানে তারা তখনো নিশ্চিত নয়, আদৌ কোনো গ্রহাণুর সন্ধান পেয়েছে কি না।’
তিনি বলেন, ‘সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে, অলিভেইরা তার জানাবোঝা অন্য শিশুদের জানায়। বিজ্ঞানের প্রচারে অবদান রাখছে সে।’
অলিভেইরার মা ৪৩ বছর বয়সী জিলমা জানাকা বলেন, ‘জ্যোতির্বিজ্ঞানের প্রতি মেয়ের সীমাহীন আগ্রহ। চতুর্থ জন্মদিনের উপহার হিসেবে আমাদের কাছে টেলিস্কোপ চায় অলিভেইরা।
‘টেলিস্কোপ কী, তা তখন আমি জানতামই না।’
তিনি বলেন, ‘টেলিস্কোপের দাম অনেক বেশি বলে জানাই মেয়েকে। তখন সে বলে, তার আগামী দিনের সব জন্মদিনের উপহারের বিনিময়ে টেলিস্কোপ চায় সে।
‘অবশেষে অলিভেইরার জেদের কাছে হার মেনে তার সপ্তম জন্মদিনে আমরা তাকে টেলিস্কোপ কিনে দিই।’ ব্রাজিলের বিজ্ঞান মন্ত্রণালয়ের অংশীদারত্বে নাগরিক বিজ্ঞান কর্মসূচি ‘ইন্টারন্যাশনাল অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সার্চ কলাবরেশন’ পরিচালিত প্রকল্প অ্যাস্টেরয়েড হান্টার্স। এর সঙ্গে যুক্ত রয়েছে নাসাও।
এ প্রকল্পের মাধ্যমে তরুণদের নিজেদের মহাকাশ আবিষ্কারের সুযোগ করে দেয়ার মাধ্যমে তাদের বিজ্ঞানের প্রতি আগ্রহী করা হয়।
গর্বের সঙ্গে এএফপিকে নিকোলিনহা জানান, এরই মধ্যে ১৮টি গ্রহাণুর দেখা পেয়েছে সে।
তিনি বলেন, ‘ওই গ্রহাণুদের ব্রাজিলের বিজ্ঞানী বা আমার মা-বাবাসহ পরিবারের অন্য সদস্যদের নাম দিয়েছি।’
অলিভেইরার অনুসন্ধান প্রত্যয়িত হলে (যাতে কয়েক বছর সময় লেগে যেতে পারে), একটি গ্রহাণু আনুষ্ঠানিকভাবে আবিষ্কার করায় সে হবে বিশ্বের কনিষ্ঠতম জ্যোতির্বিদ।
শুধু তাই নয়, ১৮ বছর বয়সী ইতালির নাগরিক লুইগি স্যানিনোর রেকর্ডও ভাঙবে সে।