বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

১৬৫ দেশের কাছে চীনের পাওনা ৩৮,৫০০ কোটি ডলার

  •    
  • ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ২২:৪৫

ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হতে পারে এমন দেশগুলোকে ঋণদান অব্যাহত রাখলেও পরিশোধের সময় কমিয়ে সুদের হার কয়েক গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে বেইজিং। যেমন অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও উন্নয়ন জোটের (ওইসিডি) কাছ থেকে ঋণের জন্য এক দশমিক এক শতাংশ সুদের হার; অথচ চীনের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে তিন দশমিক সাত-ছয় শতাংশ সুদ গুণতে হচ্ছে পাকিস্তানকে।

চীনের কাছে বিশ্বের ১৬৫টি দেশের দেনা কমপক্ষে ৩৮ হাজার ৫০০ কোটি ডলার। উচ্চাভিলাষী ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ’ (বিআরআই) প্রকল্পের মাধ্যমে চীনের উন্নয়নমূলক বিনিয়োগের নামে বিশাল অঙ্কের ঋণে জড়িয়েছে দেশগুলো।

বার্তা সংস্থা এএফপির বরাত দিয়ে দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়, এসব ঋণের অনেকটাই বিশ্ব ব্যাংকের মতো আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর কাছ থেকে পদ্ধতিগতভাবে গোপন করা হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা সংস্থা এইডডেটার চার বছরের গবেষণায় বেরিয়ে এসেছে এসব তথ্য।

জানা গেছে, বিশেষ উদ্দেশ্যে গৃহীত ও আধা-বেসরকারি ঋণ হিসেবে উল্লেখের মাধ্যমে দেনার এ বোঝা এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে সরকারি হিসাবের খতিয়ানে। অথচ দেশের অর্থনীতির গতিপ্রকৃতি পর্যবেক্ষণে দায়িত্বরত গবেষণা প্রতিষ্ঠান, ক্রেডিট রেটিং এজেন্সি বা আন্তঃসরকার সংস্থাগুলোর কাছে পৌঁছায়নি এসব অর্থ।

গবেষণায় দেখা গেছে, চীনের কাছে স্বল্প থেকে মধ্য আয়ের ৪২টি দেশের ঋণের পরিমাণ তাদের বার্ষিক প্রবৃদ্ধির ১০ শতাংশের বেশি। এসব দেশের তালিকায় লাওস, পাপুয়া নিউ গিনি, মালদ্বীপ, ব্রুনেই, ক্যাম্বোডিয়া ও মিয়ানমার অন্যতম।

এইডডেটার মতে, লাওসের ঋণের উল্লেখযোগ্য অংশ ‘গোপন’। ৫৯০ কোটি ডলারের চীন-লাওস রেলপথ প্রকল্পের পুরোটাই অলিখিত ঋণ, যা লাওসের জিডিপির প্রায় এক-তৃতীয়াংশ।

চীনের প্রেসিডেন্ট শি চিনপিংয়ের বহুল আলোচিত আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ কর্মসূচির অধীনে ২০১৩ সালে যাত্রা শুরু করে বিআরআই প্রকল্প। বিশ্ববাণিজ্যে নতুন পথ উন্মুক্ত করতে উচ্চাভিলাষী এ প্রকল্প, যার অন্যতম অংশ নিউ সিল্ক রোড। এর মাধ্যমে এশিয়া ও ইউরোপকে সড়ক, রেল ও নৌপথে যুক্ত হবে এবং বিশ্ব নেতৃত্বে চীনের প্রভাব জোরদার হবে বলে আশাবাদী বেইজিং।

বিশাল বিশাল অবকাঠামোগত প্রকল্পের জন্য চীনের কাছ থেকে ঋণ পেতে নাম লিখিয়েছে স্বল্প থেকে মধ্য আয়ের শতাধিক দেশ।

তবে এখন চীনের পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন বিশ্বের শীর্ষ অর্থনীতিক সাত দেশের জোট জি-সেভেন গৃহীত ‘উন্নততর বিশ্ব পুনর্গঠন’ শীর্ষক অবকাঠামোগত কর্মসূচি।

এইডডেটার গবেষণায় বিআরআইয়ের আওতাভুক্ত ১৩ হাজারের বেশি প্রকল্প পরীক্ষা করা হয়েছে। ২০০০ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত বিশ্বের ১৬৫টি দেশে এসব প্রকল্পের পেছনে চীনের ব্যয় ৮৪ হাজার ৩০০ কোটি ডলার।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বিআরআইপূর্ববর্তী সময়ে চীনের অন্য দেশকে ঋণদান কর্মসূচি ছিল দুই দেশের সরকার মধ্যে লেনদেনভিত্তিক। বিআরআইপরবর্তী সময়ে নাটকীয়ভাবে অবস্থান পাল্টেছে চীন। বিভিন্ন দেশকে বর্তমানে চীনের দেয়া ঋণের প্রায় ৭০ শতাংশ রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্যাংক, যৌথ উদ্যোগ, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও বিশেষ উদ্দেশ্যে পরিচালিত প্রতিষ্ঠানে যাচ্ছে।

এর ফলে এসব ঋণের বড় অংশ অপ্রকাশিত থেকে গেছে বা সরকারি হিসাব থেকে বাদ পড়েছে। কারণ প্রাথমিক ঋণগ্রহীতারা এখন আর কেন্দ্রীয় সরকারের অধিভুক্ত নয় এবং তাদের ওপর আগের মতো সরকারকে সব বিষয়ে অবহিত করার বাধ্যবাধকতাও নেই।

বিআইআইয়ের আওতায় বিভিন্ন দেশের সরকারি হিসাব থেকে বাদ পড়া এমন ঋণের পরিমাণ ৩৮ হাজার ৫০০ কোটি ডলার।

বিশ্ব ব্যাংক ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) প্রতিষ্ঠানগুলো এতদিন ভাসাভাসাভাবে এসব সমস্যার কথা জানত। তবে এইডডেটার প্রতিবেদন প্রকাশের পর সমস্যার গভীরতা দৃশ্যমান হয়েছে।

বিতর্ক বাড়তে থাকায় সম্প্রতি কিছু দেশ প্রকল্প নিয়ে নতুন করে আলোচনা এমনকি প্রকল্প থেকে বেরিয়ে যেতেও চেয়েছে। দেশগুলো নিজেদের গুটিয়ে নেয়ায় গত কয়েক বছরে বিআরআই প্রকল্পের আওতায় ঋণ দান কিছুটা কমেছে। কিন্তু আগের ঋণগুলোর বোঝা থেকে গেছে।

এ অবস্থায় ২০১৯ সালে বিআরআইয়ে স্বচ্ছতা ও আর্থিক স্থিরতা বৃদ্ধির আশ্বাস দেন শি চিনপিং। দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতিরও ঘোষণা দেন তিনি।

বিআরআইয়ে শতাধিক দেশ যুক্ত হলেও স্বচ্ছতা নিয়ে উদ্বেগ ছিলই। উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোতে বড় অঙ্কের ঋণদান কিছু অঞ্চলে ‘ঋণভিত্তিক কূটনীতির’ সূচনা ঘটাতে পারে বলেও সতর্ক করছিলেন বিশেষজ্ঞরা।

এ ধরনের কূটনীতির ফলে ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হলে দেশগুলো অনেক গুরুত্বপূর্ণ সম্পদের মালিকানা বা নিয়ন্ত্রণ বেইজিংয়ের হাতে ছেড়ে দিতে বাধ্য হবে।

অস্ট্রেলিয়াভিত্তিক লোয়ি ইনস্টিটিউটের গবেষক পিটার চাই বলেন, ‘ঋণ পরিশোধ করা অনেক দেশের জন্যই কঠিন হয়ে যাবে, বিশেষ করে যেসব দেশে আইনের শাসনের সংকট কিংবা অস্থিরতা রয়েছে।’

এ অবস্থায় ঋণের অর্থ ওঠাতে কিছুটা কৌশলী হয়েছে চীন।

এইডডেটার অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে, ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হতে পারে এমন দেশগুলোকে ঋণদান অব্যাহত রাখলেও পরিশোধের সময় কমিয়ে সুদের হার কয়েক গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে বেইজিং।

যেমন অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও উন্নয়ন জোটের (ওইসিডি) কাছ থেকে ঋণের জন্য এক দশমিক এক শতাংশ সুদের হার; অথচ চীনের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে তিন দশমিক সাত-ছয় শতাংশ সুদ গুণতে হচ্ছে পাকিস্তানকে।

এ বিভাগের আরো খবর