স্পেনের বিলবাও শহরের বুক চিড়ে চলে গেছে নার্ভিয়ন নদী। আর এই নদীতেই ডুবে যাচ্ছে যুবতী এক মেয়ে! সহৃদয়বান কেউ এই দৃশ্যটি দেখলে নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়ে তাকে বাঁচাতে চাইবে- এটাই স্বাভাবিক।
কিন্তু ডুবন্ত এই মেয়ে আসলে রক্তমাংসের নয়, ফাইবার গ্লাসে তৈরি একটি ভাস্কর্য মাত্র। এক সপ্তাহ ধরেই পর্যটক আকর্ষণ আর কৌতূহলের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে গেছে এই ভাস্কর্য।
রয়টার্স জানিয়েছে, মেক্সিকান হাইপার রিয়ালিস্ট শিল্পী রুবেন ওরোজকো রহস্যময় এই ডুবন্ত কন্যাকে সৃষ্টি করেছেন। আর এর নাম দিয়েছেন ‘বিহার’। স্পেন ও ফ্রান্সের পিরেনিজ পর্বতাঞ্চলে বাস করা বাস্কু জনগোষ্ঠীর মধ্যে প্রচলিত ‘বিহার’ শব্দটির অর্থ ‘আগামীকাল’। মূলত এর মাধ্যমে পৃথিবীর ভবিষ্যৎ সম্পর্কে বার্তা দেয়া হয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বেড়ে যাচ্ছে পৃথিবীর উষ্ণতা। গলে যাচ্ছে বরফ, ডুবতে শুরু করেছে নিম্নাঞ্চল।
স্প্যানিশ দাতব্য সংস্থা ‘বিবিকে ফাউন্ডেশন’-এর একটি প্রচারণার অংশ হিসেবে এই ভাস্কর্যটি স্থাপন করা হয়েছে। ‘ডুবন্ত মেয়ে’ সম্পর্কে একটি স্প্যানিশ গণমাধ্যমকে শিল্পী রুবেন বলেন, 'সাধারণ মানুষকে পৃথিবীর ভবিষ্যৎ নিয়ে সতর্ক করাই এর উদ্দেশ্য। এর কাছ থেকে মানুষ যে শিক্ষাটি পাবে তা হলো জলবায়ু ইস্যুতে তাদের কর্মকাণ্ড আমাদের ডুবাতেও পারে আবার ভাসিয়েও রাখতে পারে।'
১২০ কেজি ওজনের বিশাল আকৃতির ওই মেয়েটির মুখমণ্ডলে খেলা করছে পানির উত্থান-পতন। আসলে জোয়ার-ভাটার সঙ্গে সম্পর্ক আছে নদীটির। তাই নদীতে জোয়ার এলে পানি বেড়ে যাওয়ার কারণে প্রায় ডুবতে শুরু করে মেয়েটির মুখ। আর ভাটার সময় পানি নেমে গেলে ভেসে ওঠে মুখখানি।
নদীতে জোয়ার এলে পানি বেড়ে যাওয়ার কারণে প্রায় ডুবতে শুরু করে মেয়েটির মুখ
ডুবন্ত মেয়ের মুখ দেখে যাদের হৃদয় কেঁপে ওঠে, জলবায়ু ইস্যুতে তাদের অবশ্যই সচেতন হওয়া উচিত।
নার্ভিয়ন নদীর পার দিয়ে নিয়মিত হেঁটে বেড়ান বিলবাওয়ের বাসিন্দা ট্রিয়ানা গিল। ডুবন্ত মেয়েকে দেখে তার মনের মধ্যে দুঃখবোধ জেগে উঠেছিল বলে জানিয়েছেন।
আরেকজন বলেন, ‘ডুবে যাওয়ার মুহূর্তে মেয়েটির মুখে ভয়ার্ত কোনো অভিব্যক্তি নেই। যেন স্বেচ্ছায় সে ডুবে যাচ্ছে!’
আরেকজন বললেন, ‘ডুবন্ত এই মুখটির অন্তর্নিহিত বক্তব্য সম্পর্কে আজই জানলাম। তবে এটি দেখে প্রত্যেকেই নিজস্ব অর্থ দাঁড় করাতে পারে।’