বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

প্রতিশোধের আগুনে জ্বলছে তালেবান

  •    
  • ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ১৯:২৩

তালেবান সরকারের প্রতিরক্ষামন্ত্রী মোল্লা মোহাম্মদ ইয়াকুব গত সপ্তাহে যোদ্ধাদের সতর্ক করে একটি নির্দেশনা দেন। ওই নির্দেশনায় তালেবানের বিজয়ের পর কিছু সদস্যদের অসংযত আচরণের সমালোচনা করা হয়। তিনি বলেছিলেন, ‘আপনারা জানেন যে আফগানিস্তানে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করা হয়েছে। কারও ওপর প্রতিশোধ নেয়ার অধিকার কোনো তালেবান সদস্যের নেই।’ কিন্তু এ বিষয়ে নির্দেশনায় সুনির্দিষ্টভাবে কোনো ঘটনা বা শাস্তির উল্লেখ ছিল না।

গত মাসে আফগানিস্তানের পূর্বাঞ্চলীয় নানগড়হর প্রদেশের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার পরই পুরোনো শত্রুর সঙ্গে বোঝাপড়ায় নামে তালেবান।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে জানানো হয়, সে সময় স্থানীয় খ্যাতনামা রাজনীতিবিদ আজমল ওমরকে খুঁজতে শুরু করে তালেবান সদস্যরা। এক বছর আগে এই আজমল ওমরের কারণেই নানগড়হর থেকে তালেবানকে পিছু হঠতে হয়েছিল। তালেবানে যোগ দেয়া থেকে বিরত থাকতে স্থানীয় আফগান তরুণদের বোঝাতেন তিনি।

আজমল ওমরের উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া বাড়িতে বোমা বিস্ফোরণ ঘটায় তালেবান সদস্যরা। স্বর্ণালংকার ও গাড়ি ছিনতাই করে নেয়। ওমরের সন্ধান পেতে তার স্বজনদের জন্য চাবুক দিয়ে পেটানোও হয়।

ওমরের দুই স্বজন বার্তা সংস্থা রয়টার্সের কাছে সেসব ঘটনা তুলে ধরে জানান, তালেবানের প্রতিহিংসার শিকার হয়েছিলেন তারা। ১০ জন স্থানীয় সরকারি কর্মকর্তা ও বাসিন্দা আর একজন সাবেক আফগান গোয়েন্দা কর্মকর্তাও ওমরের বিরুদ্ধে তালেবানের ক্ষোভের সাক্ষী।

এসব সূত্রের কাছ থেকে ওমরের বাড়িতে চালানো ধ্বংসযজ্ঞ আর তালেবানের পিটুনিতে আহত স্বজনদের ছবি পেয়েছে রয়টার্স। যদিও ছবিগুলোর সত্যতা যাচাই করতে পারেনি সংবাদ সংস্থাটি।

রয়টার্স জানায়, ৩৭ বছর বয়সী ওমর বর্তমানে আত্মগোপনে আছেন। প্রতিবেদনটি তৈরির জন্য তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও নিরাপত্তাজনিত কারণে কথা বলতে রাজি হননি তিনি।

১৫ আগস্ট আফগানিস্তানের বেসামরিক সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে রাজধানী কাবুলের নিয়ন্ত্রণ নেয় তালেবান। এর দুই দিন পর এক সংবাদ সম্মেলনে কট্টর ইসলামপন্থি গোষ্ঠীটি বিশ্ব সম্প্রদায়কে আশ্বস্ত করে এই বলে যে সাবেক প্রতিদ্বন্দ্বীদের বিরুদ্ধে কোনো প্রতিশোধ নেবে না তারা।

ওমরের পরিবারের সদস্যরা জানান, যে অভিজ্ঞতার শিকার তারা হয়েছেন, তা তালেবানের আশ্বাসের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক স্বজন বলেন, ‘আমরা কেউ কল্পনাও করিনি যে এভাবে আমাদের ওপর হামলা করা হবে। তালেবান বলেছিল যে সাবেক সরকারের সঙ্গে কাজ করার কারণে কাউকে তারা শাস্তি দেবে না। কিন্তু আমাদের ক্ষেত্রে এর উল্টো ঘটেছে।’

ওমরের পরিবারের সঙ্গে ঘটে যাওয়া এ ঘটনার বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে মুখ খোলেননি তালেবানের কোনো মুখপাত্র।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, আফগানিস্তানের পার্বত্য পূর্বাঞ্চলে আপেল আর লেবুর বাগানে ঘেরা উপত্যকার একটি প্রত্যন্ত গ্রাম কোদি খেল। দীর্ঘদিন ধরেই গ্রামটির দিকে নজর ছিল তালেবানের।

২০০১ সালে আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা বিশ্বের সামরিক আগ্রাসনে যখন প্রথম দফার শাসন থেকে উৎখাত হয়, সে সময় কোদি খেল গ্রাম ও একে ঘিরে থাকা শেরজাদ জেলায় তীব্র রকেট হামলা হয়েছিল। প্রতিবেশী পাকিস্তানসংলগ্ন কৌশলগত রুটের নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখার চেষ্টায় রকেট হামলাগুলো চালিয়েছিল তালেবানই।

ওমর ছিলেন ওই গ্রামেরই জনপ্রিয় এক জমিদার। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ২২ কক্ষের একটি সুরক্ষিত বাড়িতে থাকতেন তিনি।

প্রাদেশিক পরিষদের উপপ্রধান হিসেবে তালেবানকে শেরজাদ জেলা থেকে দূরে রাখতে গত বছর কৌশলগত বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছিলেন ওমর। তখনই জেলাটিতে সংঘাতে আহত হয়েছিল বেশ কয়েকজন তালেবান যোদ্ধা ও আফগান সেনা।

তারও অনেক আগে ২০১৪ সালের নির্বাচনে জয়ের পর থেকেই গ্রামে গ্রামে ঘুরে তরুণদের যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন জোটের তালেবানবিরোধী অভিযানে যোগ দেয়ার আহ্বান জানাতেন তিনি। এ কাজেই ব্যয় করতেন বেশির ভাগ সময়।

দীর্ঘ সময় তালেবানের আধিপত্যে থাকা একটি প্রদেশে বিপদ মাথায় নিয়েই এ কাজ করতেন ওমর। গত পাঁচ বছরে কয়েকটি সন্ত্রাসী হামলায় নিহত হন নানগড়হরের প্রাদেশিক পরিষদের কমপক্ষে তিন সদস্য।

প্রাদেশিক পরিষদের সাবেক এক সদস্য জানান, গত বছর আফগান সেনাবাহিনীর স্থানীয় বিজয় উদযাপনের একটি সমাবেশে যোগ দিতে যাওয়ার পথে ওমরের গাড়িবহরেও হামলা চালায় তালেবান। ওই হামলায় দুজন নিহত হলেও বেঁচে যান ওমর।

২০ বছরের ব্যবধানে গত ১৩ আগস্ট ফের কোদি খেলের নিয়ন্ত্রণ নেয় তালেবান। গ্রামবাসী জানান, তখনই তাদের ঘরের বাইরে বের না হওয়ার নির্দেশ দেয় যোদ্ধারা; ওমরের খোঁজ পেতে শুরু করে অভিযান।

কিন্তু ওমরের বাড়িতে সে সময় কয়েকজন গৃহকর্মী ছাড়া আর কেউ ছিল না। তাদেরও বাড়িটি ত্যাগের নির্দেশ দেয় তালেবান যোদ্ধারা। এরপর গাড়ি ও অন্যান্য দামি জিনিসপত্র লুট করে নেয় এবং কয়েকটি বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে বাড়ির বিভিন্ন অংশ ধসিয়ে দেয়। ঘরগুলোকে পরিণত করে ধ্বংসস্তূপে।

ওমরের পরিবারের সদস্যরা ছাড়াও এ ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় অনেকের সাক্ষাৎকার নিয়েও একই তথ্য জেনেছে রয়টার্স।

ঘটনার সময় নানগড়হরের রাজধানী জালালাবাদে প্রাদেশিক পরিষদের জরুরি একটি বৈঠকে ছিলেন ওমর। তালেবানের অগ্রসর কীভাবে ঠেকানো যায়, সেটাই ছিল ওই বৈঠকের আলোচ্য।

নিজ বাড়িতে তালেবানের অভিযানের খবর দ্রুতই ওমরের কানে পৌঁছায় এবং তিনি রাজধানী কাবুলে পালিয়ে যান। সে সময় পর্যন্ত নির্বাচিত সরকারের নিয়ন্ত্রণে ছিল কাবুল। ওমরের দুই স্বজন জানান, তখন থেকেই আত্মগোপনে আছেন ওমর।

এর কয়েক দিন পর নানগড়হর প্রদেশের নিয়ন্ত্রণ নেয় তালেবান।

এরপর গত ৩ সেপ্টেম্বর জালালাবাদে ওমরের সরকারি বাসভবনে অভিযান চালায় তালেবান যোদ্ধারা। সেখান থেকে ওমরের তিন ছেলে, পাঁচ ভাতিজা আর এক ভাইকে গ্রেপ্তার করে; জব্দ করে স্বর্ণালংকার, নগদ অর্থ, গাড়ি, একটি সাঁজোয়া যান ও ওমরের সুরক্ষায় ব্যবহৃত কয়েকটি আগ্নেয়াস্ত্র।

পরে ওমরের সব স্বজনকেই ছেড়ে দেয় তালেবান। এক স্বজন জানান, তিনিসহ বাকিদের চাবুক দিয়ে পেটানো হয়েছিল। জানালাবিহীন একটি ঘরে বন্দি করে রাখা হয়েছিল তাদের। আহতদের দেহে বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গে গুরুতর ক্ষতের ছবিও দেখান তিনি।

আরেক স্বজন জানান, তিন দিন একঘরে বন্দি রেখে নির্যাতন চালানো হয় তার ওপর। তালেবানশাসিত আফগানিস্তানে নিজের ও পরিবারের ভবিষ্যৎ নিয়েও শঙ্কা জানান তিনি।

ওমরের স্ত্রী-সন্তান, চার ভাই, পাঁচ বোন ও পরিবারের অন্য সদস্যরা সবাই আফগানিস্তানেই থাকেন। কিন্তু তারা কেউই রাজনীতিতে পরিচিত মুখ নন।

ওমরের স্বজনদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে পলাতক ওমর গা ঢাকা দিয়ে থাকতে নিজের চুল-দাড়ি বড় করছেন। তালেবানের হাতে পড়া থেকে বাঁচতে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন, একেক দিন একেক বাড়িতে থাকছেন। আফগানিস্তান ছাড়ার সুযোগ খুঁজছেন তিনি।

তালেবানের অন্তর্বর্তী সরকারের এক মন্ত্রী রয়টার্সকে জানিয়েছেন, দেশজুড়ে যোদ্ধারা সাবেক সরকারি কর্মকর্তাদের বাড়িঘর ও কর্মক্ষেত্রে অভিযান চালিয়ে কেবল অস্ত্র ও সাঁজোয়া যান জব্দ করেছে। ওমরের পরিবারের সদস্যদের শাস্তি দেয়ার বিষয়ে কিছু জানা নেই বলে দাবি করেন তিনি।

তালেবান সরকারের প্রতিরক্ষামন্ত্রী মোল্লা মোহাম্মদ ইয়াকুব গত সপ্তাহে যোদ্ধাদের সতর্ক করে একটি নির্দেশনা দেন। ওই নির্দেশনায় তালেবানের বিজয়ের পর কিছু সদস্যদের অসংযত আচরণের সমালোচনা করা হয়।

তিনি বলেছিলেন, ‘কুখ্যাত ও দুর্বৃত্ত গোছের সাবেক কিছু সেনা তালেবানের বিভিন্ন পদে যোগ দিয়েছে। তারা মন্ত্রণালয় ও সরকারি অফিস-আদালত দখল থেকে শুরু করে দু-তিনজনকে হত্যাসহ বেশ কিছু অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত।’

তিনি আরও বলেন, ‘আপনারা জানেন যে আফগানিস্তানে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করা হয়েছে। কারও ওপর প্রতিশোধ নেয়ার অধিকার কোনো তালেবান সদস্যের নেই।’

কিন্তু এ বিষয়ে নির্দেশনায় সুনির্দিষ্টভাবে কোনো ঘটনা বা শাস্তির উল্লেখ ছিল না।

এ বিভাগের আরো খবর