আফগানিস্তানের ব্যাংকিংব্যবস্থা প্রায় ভেঙে পড়েছে বলে মন্তব্য করেছেন ইসলামিক ব্যাংক অফ আফগানিস্তানের প্রধান নির্বাহী সৈয়দ মুসা কলিম আল-ফালাহি।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, মুসা কলিম জানান, গ্রাহকদের উদ্বেগ আফগানিস্তানের ব্যাংকিংব্যবস্থাকে ‘অস্তিত্ব সংকটে’ ফেলেছে।
আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির কারণে এ মুহূর্তে দুবাইয়ে অবস্থান করছেন মুসা কলিম।
তিনি বলেন, ‘ব্যাংকগুলো থেকে বিপুল পরিমাণে অর্থ তোলা এ সংকটের অন্যতম কারণ।
‘গ্রাহকরা কেবল টাকা তুলছেন। বেশির ভাগ ব্যাংক কাজ করছে না। গ্রাহকদের পুরোপুরি সেবা দিতে পারছেন না ব্যাংক কর্মকর্তারা।’
তালেবান আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখলের আগে থেকেই দেশটির অর্থনীতি সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিল।
বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বিদেশি সহায়তার ওপর নির্ভরশীল আফগানিস্তান। দেশটির জিডিপির প্রায় ৪০ শতাংশ বিদেশি অর্থসহায়তা থেকে আসে।
গত মাসে কাবুল পতনের মধ্য দিয়ে আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ তালেবানের হাতে চলে যায়।
এরপরই পশ্চিমা বিশ্বের কয়েকটি দেশ ও সংস্থা আফগানিস্তানের আন্তর্জাতিক তহবিলের প্রবেশাধিকারের ওপর স্থগিতাদেশ দেয়।
মুসা কলিম বলেন, ‘আর্থিক সহায়তার জন্য তালেবান ভিন্ন পথ খুঁজছে, এটি উৎসাহব্যঞ্জক।
‘আর্থিকসংকট কাটাতে চীন, রাশিয়াসহ অন্যান্য দেশের সহায়তা চাইছে তালেবান।’
তিনি বলেন, ‘ওই দেশগুলোর সঙ্গে আলোচনায় তালেবান সফল হবে বলে মনে হচ্ছে।’
যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তান পুনর্গঠনে এরই মধ্যে সহায়তার কথা জানিয়েছে চীন। এ ছাড়া তালেবান সরকারের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী দেশটি।
চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম গ্লোবাল টাইমসের সম্পাদকীয়তে সম্প্রতি বলা হয়েছে, ‘আফগানিস্তান পুনর্নির্মাণে চীনের সহযোগিতার বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে।’
খাদ্যসহায়তা, করোনাভাইরাস প্রতিরোধী টিকাসহ ২০০ মিলিয়ন ইউয়ান মূল্যের অর্থসহায়তার অঙ্গীকার এরই মধ্যে করেছে চীন।
তা সত্ত্বেও আফগানিস্তানের অর্থনৈতিকসংকট দূর করতে হিমশিম খাচ্ছে তালেবান সরকার।
দেশটিতে মুদ্রাস্ফীতি ক্রমাগত বাড়ছে, আফগান মুদ্রার পতন হচ্ছে এবং চাকরি হারানোয় অনেকের হাতে নগদ অর্থও নেই।
জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) সম্প্রতি সতর্ক করে বলেছে, আফগানিস্তানের মাত্র পাঁচ শতাংশ পরিবার প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে খাবার খেতে পারছে।
আফগানিস্তান রাষ্ট্রটিকে টিকে থাকতে হলে তাই আন্তর্জাতিক তহবিল ও বিদেশি সহায়তার বিকল্প নেই।
এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ভাষ্য, তালেবান সরকারের সঙ্গে তারা কাজ করতে আগ্রহী। তবে তার আগে ইসলামপন্থি গোষ্ঠীটিকে নারী ও জাতিগত সম্প্রদায়ভুক্ত মানুষের অধিকারের প্রতি সম্মান জানাতে হবে।
মুসা কলিম জোর দিয়ে জানান, ‘কিছুদিন’ আফগান নারীদের ঘরের বাইরে কাজ করার বিষয়ে তালেবান নিষেধাজ্ঞা দিলেও তার ব্যাংকে নারী কর্মকর্তারা কাজে ফিরেছেন।