বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ইয়াজিদি যৌনদাসীদের নিয়ে সিনেমায় বিতর্ক

  •    
  • ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ১৮:৪০

ইয়াজিদি নারীদের অভিযোগের কারণেই পশ্চিমা দেশগুলোতে ‘সাবায়া’ সিনেমাটিকে নিয়ে এখন বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। এর পরিচালক সুইডিশ নাগরিক হলেও একসময় তিনি ইরাকের কুর্দিশ শরণার্থী ছিলেন।

আইএস জঙ্গিদের যৌনদাসীতে পরিণত হওয়া ইয়াজিদি নারীদের নিয়েই নির্মিত হয়েছে তথ্যচিত্রভিত্তিক সুইডিশ সিনেমা ‘সাবায়া’। সিরিয়া ও ইরাকে আইএসের পতনের পর এই নারীরা জঙ্গিদের ডেরা থেকে মুক্ত হন।

সিনেমাটি সম্প্রতি বেশ আলোচিত ও প্রশংসিত হয়েছে। জিতেছে কয়েকটি আন্তর্জাতিক পুরস্কারও। মর্যাদাপূর্ণ ‘সানড্যান্স ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল’-এ সেরার পুরস্কার জিতেছেন সিনেমাটির পরিচালক। এ ছাড়া গত সপ্তাহে জার্মানির বার্লিনে অনুষ্ঠিত ‘হিউম্যান রাইটস ওয়াচ’-এর ফিল্ম ফেস্টিভ্যালেও সিনেমাটিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। মর্মস্পর্শী ঘটনার বিবরণ ছাড়াও এতে এমন কিছু বাস্তব চিত্রের ফুটেজ রয়েছে, যা একটি থ্রিলার মুভিকেও হার মানায়।

কিন্তু যাদের নিয়ে নির্মিত সেই ইয়াজিদি নারীরাই এবার সিনেমাটির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। শুধু তাই নয়, সিনেমার পরিচালকের বিরুদ্ধে তারা প্রতারণার অভিযোগ এনেছেন। তাদের আইনজীবী বলছেন, এই সিনেমাটি নারী অধিকারকে ক্ষুণ্ন করেছে। অনুমতি না নিয়েই তাদের অভিজ্ঞতা ও বক্তব্যকে পর্দায় দেখানো হয়েছে।

সিনেমাটিতে যেসব নারীকে বক্তব্য দিতে দেখা গেছে তাদের বেশ কয়েকজনের সঙ্গে সম্প্রতি যোগাযোগ করেছে মার্কিন গণমাধ্যম নিউ ইয়র্ক টাইমস। তাদের মধ্যে অন্তত তিনজন দাবি করেছেন, বক্তব্য ধারণ করার সময় সিনেমাটির পরিচালক হগির হিরোরি এগুলো দিয়ে কী করতে যাচ্ছেন, তা ছিল তাদের ধারণারও বাইরে। পরিচালক তাদের এমন কথাও বলেছেন যে, এই ভিডিও ফুটেজগুলো কখনোই ইরাক কিংবা সিরিয়া থেকে দেখা যাবে না।

চতুর্থ আরেক নারী জানান, তিনি জানতেন যে পরিচালক একটি সিনেমা বানাতে চলেছেন। কিন্তু সিনেমায় সশরীরে তাকেও দেখানো হবে, এ বিষয়টি তার কাছ থেকে গোপন করা হয়েছে। এ ছাড়া ইয়াজিদি নারীদের নিয়ে কাজ করা এক কুর্দিশ বংশোদ্ভূত সুইডিশ চিকিৎসকও স্পষ্ট জানিয়েছেন, এই তথ্যচিত্রে তাকেও দেখানো হোক, এমনটা তিনি চাননি।

ভুক্তভোগী আরেক ইয়াজিদি নারী বলেন, ‘আমি তাদের বলেছিলাম যে, আমাকে যেন ভিডিও করা না হয়। এটা আমার জন্য ভালো হয়নি। এটা বিপজ্জনক।’

সিনেমাটিতে যাদের দেখানো হয়েছে তারা নিজ সম্প্রদায়ে বর্তমানে নানা ধরনের সামাজিক প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হচ্ছেন বলে অভিযোগ করছেন।

‘সানড্যান্স ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল’-এ সাবায়া সিনেমার পোস্টারসহ পরিচালক হগির হিরোরি

ইয়াজিদি নারীদের অভিযোগের কারণেই পশ্চিমা দেশগুলোতে ‘সাবায়া’ সিনেমাটিকে নিয়ে এখন বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। এর পরিচালক সুইডিশ নাগরিক হলেও একসময় তিনি ইরাকের কুর্দিশ শরণার্থী শরণার্থী ছিলেন। ২০১৯ ও ২০২০ সালজুড়ে ইরাক ও সিরিয়ার বিভিন্ন ক্যাম্পে ঘুরে ঘুরে সিনেমাটি তিনি বানিয়েছেন। দাবি করছেন, যেসব নারীকে পর্দায় দেখানো হয়েছে, তাদের কাছ থেকে তিনি মৌখিক, লিখিত কিংবা কারও কারও কাছ থেকে ভিডিও বক্তব্যের মাধ্যমে সম্মতি নিয়েছিলেন। তবে তিনি সবার কাছ থেকেই লিখিত সম্মতি নিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু করোনাভাইরাস মাহামারির জন্য তার এ কাজে কিছুটা বাধা পড়েছে। তাই অনেকের সঙ্গে যথাসময়ে তিনি যোগাযোগ করতে পারেননি। তবে সম্মতির জন্য সবার কাছেই তিনি একটি লিখিত ফরম পাঠিয়েছিলেন বলে দাবি করেছেন।

ইয়াজিদি নারীদের অনেকেই এ ধরনের ফরম পাওয়ার কথা স্বীকারও করেছেন। তবে ইংরেজিতে লেখা সেই ফরমে কী আছে তা ছিল তাদের বোধগম্যের বাইরে। এ ছাড়া ফরমটি হাতে পৌঁছায় তাদের ভিডিও ধারণ করার দুই বছর পরে। এমনকি সিনেমাটির প্রদর্শন শুরু করারও পরে।

সিনেমাটিতে মূলত ২০১৪ সালে আইএস বাহিনী সিরিয়া ও ইরাকে ইয়াজিদি সম্প্রদায়ের ওপর গণহত্যা চালানোর পরের পরিস্থিতি দেখানো হয়েছে। আইএসরা সে সময় অন্তত ৩ হাজার ইয়াজিদিকে হত্যা করে। আর বন্দি করে অন্তত ৬ হাজার জনকে। বন্দিদের বেশির ভাগই ছিলেন নারী ও কন্যাশিশু। পরে তাদের যৌনদাসত্বে বাধ্য করা হয়।

আইএস-এর পতনের পর তাদের নিয়ন্ত্রিত অঞ্চল থেকে প্রায় ৬০ হাজার নারী ও শিশুকে উদ্ধার করা হয়। এর মধ্যে কয়েক হাজার ইয়াজিদিও ছিলেন। আইএস যোদ্ধাদের ঔরসে যেসব নারী সন্তান জন্ম দিয়েছিলেন, সেসব শিশুকে গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানায় ইয়াজিদি সম্প্রদায়।

২০১৪ সালে আইএস-এর পতনে পর ইরাকে ফিরছেন ইয়াজিদি নারীরা

সন্তানদের কাছ থেকে ইয়াজিদি নারীদের বিচ্ছেদের গল্পও ফুটে ওঠেছে ‘সাবায়া’ সিনেমায়। সমাজের চাপে এসব নারীর মধ্যে কেউ কেউ তাদের সন্তানকে ত্যাগ করতে সম্মত হলেও অনেকেই তা পারছিলেন না। সিনেমাটির একটি অংশে দেখা যায়, এক ইয়াজিদি নেতা যৌনদাসত্বের শিকার বিক্ষিপ্ত এক ইয়াজিদি নারীকে তার এক বছর বয়সী সন্তানকে ত্যাগ করার জন্য জোরাজুরি করছেন। সেই নারীকে শর্ত দেওয়া হয় ইরাকে ফিরতে হলে অবশ্যই তার সন্তানকে সিরিয়ায় ফেলে আসতে হবে।

‘সাবায়া’ সিনেমায় দেখানো নিজের পরিস্থিতি সম্পর্কে সেই নারী বলেন, ‘আমি তাকে কিছু ভিডিও করতে দেখেছিলাম। কিন্তু জানতাম না এসব কিসের জন্য।’

ওই নারীর সম্মতির জন্য পরিচালক কোনো ফরম পাঠাননি বলেও দাবি করেন তিনি।

‘সাবায়া’ সিনেমায় দেখানো হয়েছে এমন আরেক ইয়াজিদি নারী জানান, পরিচালক হিরোরি তাকে বলেছিলেন, ব্যক্তিগত কাজের জন্য তিনি ভিডিও করছেন।

এত এত অভিযোগের প্রসঙ্গে সিনেমাটিতে যে সুইডিশ চিকিৎসককে দেখানো হয়েছিল তার বোন বলেন, ‘এটা নিছক কোনো গল্প নয়। এইসব নারীদের জীবনে সত্যি সত্যিই ঘটেছিল।’

সমালোকরা বলছেন, নারীদের সম্মতিকে সিনেমাটির পরিচালক কৌশলে এড়িয়ে গেছেন।

এ বিভাগের আরো খবর