কানাডায় ক্যাথলিক গির্জা পরিচালিত আবাসিক স্কুলে শতবর্ষ ধরে আদিবাসী শিশু নির্যাতনের ঘটনায় অবশেষে ক্ষমা চেয়েছেন দেশটির বিশপ সম্প্রদায়।
অবশ্য ক্যাথলিক খ্রিষ্টানদের ধর্মগুরু পোপ ফ্রান্সিস এখনও ওই সব ঘটনায় কোনো ক্ষমা চাননি।
আল জাজিরার শনিবারের প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
শুক্রবার কানাডিয়ান কনফারেন্স অফ ক্যাথলিক বিশপস এক বিবৃতিতে জানায়, ‘আদিবাসী শিশুদের ওপর আমাদের সম্প্রদায়ের কয়েকজন সদস্য ভয়াবহ শারীরিক, মানসিক, আধ্যাত্মিক, সাংস্কৃতিক ও যৌন নির্যাতন চালিয়েছে।
‘আমরা ওই সব ঘটনার সত্যতা স্বীকার করছি।’
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘গির্জা পরিচালিত বিভিন্ন আবাসিক স্কুল কর্তৃপক্ষ এরই মধ্যে ওই সব নির্যাতনের ঘটনায় আন্তরিকভাবে ক্ষমা চেয়েছে।
‘তাদের পাশাপাশি আমরা, কানাডার ক্যাথলিক বিশপ সম্প্রদায় দ্ব্যর্থহীনভাবে আদিবাসী শিশুদের ওপর অত্যাচারের ঘটনায় অনুতাপ ও দুঃখ প্রকাশ করছি।’
কানাডা সরকারের নীতি অনুযায়ী ঊনবিংশ ও বিংশ শতাব্দীতে লাখখানেক আদিবাসী শিশুকে জোর করে পরিবার থেকে আলাদা করে ক্যাথলিক গির্জা পরিচালিত আবাসিক স্কুলে ভর্তি করানো হতো।
১৮৩১ সাল থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত বলবৎ থাকা ওই নীতির কারণে প্রায় দেড় লাখ আদিবাসী শিশু পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়।
মূলধারার সংস্কৃতি আত্মস্থ করাতে ক্যাথলিক গির্জা পরিচালিত ওই সব স্কুলে শিশুদের মাথার চুল কেটে দেয়া হতো।
স্কুলে নিজেদের ভাষায় কথা বলা নিষেধ ছিল ওই শিশুদের। নিজেদের সংস্কৃতিচর্চারও অনুমতি ছিল না তাদের।
ওই ঘটনাকে পরে ‘সাংস্কৃতিক গণহত্যা’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়।
চলতি বছরের মে মাসে রাডার জরিপের সময় কানাডার ব্রিটিশ কলাম্বিয়া অঙ্গরাজ্যে পরিত্যক্ত এক আবাসিক স্কুল থেকে ২১৫টি আদিবাসী শিশুর দেহাবশেষ উদ্ধার করা হয়।
ওই শিশুরা ক্যামলুপস ইন্ডিয়ান রেসিডেন্সিয়াল স্কুলের শিক্ষার্থী ছিল। ১৯৭৮ সালে স্কুলটি বন্ধ করা হয়।
সে সময় কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো বলেছিলেন, ‘ভয়াবহ এ আবিষ্কার আমার হৃদয় ভেঙে দিয়েছে। এটি আমাদের দেশের ইতিহাসের কালো ও লজ্জাজনক অধ্যায় স্মরণ করিয়ে দেয়।’
এ ছাড়া ওই ঘটনায় মনোবেদনা প্রকাশ করেন পোপ ফ্রান্সিস। তবে তিনি কোনো ক্ষমা চাননি।
এরপর গত কয়েক মাসে দেশটির বিভিন্ন আবাসিক স্কুল প্রাঙ্গণে আরও হাজারখানেকের মতো আদিবাসী শিশুর দেহাবশেষ মেলে। ক্যাথলিক গির্জা পরিচালিত আবাসিক স্কুলগুলো নিয়ে কয়েক বছর আগে তদন্ত করে কানাডিয়ান ট্রুথ অ্যান্ড রিকনসিলিয়েশন কমিশন (টিআরসি)।
২০১৫ সালে কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়, শিশুরা ওই সব স্কুলে অপুষ্টিতে ভুগত। নিয়মিত তাদের পেটানো ও গালাগাল দেয়া হতো।