পৃথিবী থেকে নির্মূল না হলেও ছোঁয়াচে করোনাভাইরাস আগামী বছরের মধ্যেই সাধারণ সর্দিজ্বরে রূপ নেবে বলে মনে করেন অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ও ভাইরাসবিশেষজ্ঞ ডেইম সারাহ গিলবার্ট। অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার করোনাভাইরাস প্রতিরোধী টিকা উদ্ভাবনের অন্যতম প্রধান গবেষক তিনি।
স্কাই নিউজের বৃহস্পতিবারের প্রতিবেদনে বলা হয়, করোনাভাইরাসের বিবর্তন ক্ষমতা খুব শিগগিরই সীমিত হয়ে আসবে বলে মনে করেন ড. সারাহ গিলবার্ট।
তিনি বলেন, ‘নতুন করে ভাইরাসটি ছড়ানোর জন্য তো আর কোনো জায়গা নেই। ভাইরাসটির যাওয়ার মতো জায়গা আর বেশি বাকি নেই বলে আরও বিবর্তনের মাধ্যমে টিকার কার্যক্ষমতাকে ফাঁকি দেয়ারও উপায় নেই তার। কারণ একটা পর্যায়ে যাওয়ার পর সময়ের সঙ্গে ভাইরাস দুর্বল হতে শুরু করে।’
রয়্যাল সোসাইটি অফ মেডিসিনের একটি ওয়েবিনারে অংশ নিয়ে বুধবার এসব কথা বলেন গিলবার্ট।
যুক্তরাজ্য মহামারির সবচেয়ে কঠিন ধাক্কা পেরিয়ে গেছে বলেও উল্লেখ করে তিনি জানান, করোনাভাইরাস আরও প্রাণঘাতী হয়ে উঠবে বলে যে শঙ্কা ছিল, তা ধীরে ধীরে স্তিমিত হয়ে আসছে।
গিলবার্ট বলেন, ‘সাধারণত ভাইরাস সহজে ছড়িয়ে পড়ে বলেই এর প্রকোপ এক সময় কমতে শুরু করে। সার্স-কভ-টুর এই সংস্করণের চেয়ে একই প্রজাতির আরও সংক্রামক বা শক্তিশালী ভাইরাস আসবে বলে মনে করার সময় পার করে এসেছি আমরা।’
এর আগে টিকা না নেয়া সব শিশু করোনায় আক্রান্ত হবে বলে ইংল্যান্ডের প্রধান চিকিৎসা কর্মকর্তা অধ্যাপক ক্রিস হুইটির মন্তব্য করেন। তার মতে, মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমছে বলে ভাইরাসটির ছড়ানো অব্যাহত থাকবে।
বিপরীতে সারাহ গিলবার্টের মতে, করোনাভাইরাসের উপসর্গ আস্তে আস্তে সাধারণ সর্দিজ্বরের মতোই মৃদু অসুস্থতা তৈরি করবে।
তিনি বলেন, ‘সাধারণত ভাইরাসের জিনগত পরিবর্তন ধীর গতির হতে থাকে। একই সঙ্গে মানুষের দেহে বিভিন্ন রোগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়তে থাকে। অন্য সব মৌসুমি করোনাভাইরাসের মতোই হয়ে আসবে সার্স-কভ-টুর বর্তমান রূপটিও।’
ড. গিলবার্ট আরও বলেন, ‘এখন প্রশ্ন হচ্ছে, বহুল প্রত্যাশিত সে সময়টা কবে আসবে। আর তার আগ পর্যন্ত ভাইরাসের কবল থেকে বেঁচে থাকতে আমাদের করণীয় কী।’
তবে ভবিষ্যৎ মহামারির জন্যও এখন থেকেই প্রস্তুতি নিতে হবে বলেও ওয়েবিনারে সতর্ক করেন গিলবার্ট। তার মতে, এ খাতে এখন অল্প বিনিয়োগও দীর্ঘমেয়াদে কয়েক শ কোটি পাউন্ড অর্থ সাশ্রয় করতে পারে।
একই কথা বলেছেন অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির আরেক অধ্যাপক স্যার জন বেল। তিনি বলেন, ‘আগামী বছর বসন্তেই করোনা সাধারণ সর্দিজ্বরে রূপ নিতে পারে। কারণ বেশিরভাগ মানুষ টিকা নেয়ায় কিংবা ভাইরাসের সংস্পর্শে চলে আসায় করোনার বিরুদ্ধে তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ছে।
শীত পেরিয়ে গেলে যুক্তরাজ্যের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যেতে পারে বলেও উল্লেখ করেন স্যার জন বেল। তিনি বলেন, ‘মহামারির গতিপ্রকৃতি লক্ষ্য করলে দেখবেন, ছয় মাস আগের চেয়ে এখন অনেক ভালো অবস্থায় আছে দেশ।’
এর আগে করোনার টিকা উদ্ভাবনকারী আরেক প্রতিষ্ঠান যুক্তরাষ্ট্রের মডার্নার প্রধান নির্বাহী স্তেফানে বানসেল বলেন, এক বছরের মধ্যে করোনা মহামারির ইতি ঘটবে। কারণ হিসেবে টিকা উৎপাদন বৃদ্ধি এবং প্রয়োজন অনুপাতে সরবরাহে সক্ষমতার কথা উল্লেখ করেন তিনি।