ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট উৎপাদিত করোনাভাইরাস প্রতিরোধী কোভিশিল্ডকে স্বীকৃতি দিয়ে অনুমোদিত টিকার তালিকা সংশোধন করেছে যুক্তরাজ্য। তবে তাতেও কোয়ারেন্টিনবিহীন ভ্রমণের পথ খুলছে না ভারতীয়দের জন্য।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, স্থানীয় সময় বুধবার সকালে বিদেশিদের জন্য ভ্রমণ নীতিমালার সংশোধিত তালিকা প্রকাশ করে লন্ডন। এতে কোভিশিল্ডকে করোনার অনুমোদিত টিকা হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
বিদেশিদের জন্য যুক্তরাজ্যের ভ্রমণ নীতিমালায় প্রাথমিকভাবে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা, ফাইজার-বায়োএনটেক, মডার্না ও জনসন অ্যান্ড জনসনের গবেষণালব্ধ করোনা টিকায় অনুমোদন দেয়া হয়েছিল।
বলা হয়েছিল, অস্ট্রেলিয়া, অ্যান্টিগুয়া ও বারবুডা, বারবাডোজ, বাহরাইন, ব্রুনেই, কানাডা, ডোমিনিকা, ইসরায়েল, জাপান, কুয়েত, মালয়েশিয়া, নিউজিল্যান্ড, কাতার, সৌদি আরব, সিঙ্গাপুর, সাউথ কোরিয়া, তাইওয়ান বা সংযুক্ত আরব আমিরাতের সংশ্লিষ্ট সরকারি স্বাস্থ্যবিষয়ক সংস্থা সরবরাহকৃত চারটি টিকার যেকোনোটির দুই ডোজ নেয়া ব্যক্তিরা কোয়ারেন্টিন বা আইসোলেশনের শর্ত ছাড়াই যুক্তরাজ্যে প্রবেশ করতে পারবেন।
আগামী ৪ অক্টোবর যুক্তরাজ্যে স্থানীয় সময় ভোর ৪টা থেকে এ নীতিমালা কার্যকর হবে।
বিদেশিদের জন্য অনুমোদিত টিকার প্রাথমিক তালিকায় অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার গবেষণালব্ধ টিকা থাকলেও স্বীকৃতি ছিল না কোভিশিল্ডের; নাম ছিল না ভারতের। অথচ বিশ্বের সর্ববৃহৎ টিকা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট নিজ দেশে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার গবেষণালব্ধ টিকাই উৎপাদন করছে কোভিশিল্ড নামে।
এমন পরিস্থিতিতে বিষয়টি নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানায় ভারত। দেশটিতে এ পর্যন্ত ৭১ কোটির বেশি মানুষ করোনার টিকা নিয়েছেন। এদের বেশিরভাগই পেয়েছেন কোভিশিল্ড।
বিষয়টি নিয়ে দুই দেশের কূটনীতিতেও উত্তাপ ছড়ায়। কোভিশিল্ডে অনুমোদন না দিলে লন্ডনের বিরুদ্ধে পাল্টা ব্যবস্থা নেয়ারও হুমকি দেয় নয়া দিল্লি। এর প্রেক্ষিতে তালিকা সংশোধন করে যুক্তরাজ্য; স্বীকৃতি দেয় কোভিশিল্ডে।
কিন্তু লন্ডন জানিয়েছে, কোভিশিল্ডে অনুমোদন দেয়া হলেও যুক্তরাজ্যগামী ভারতীয় নাগরিকদের জন্য কোয়ারেন্টিনের জটিলতা কাটছে না। ব্রিটিশ ভূখণ্ডে পৌঁছে ১০ দিন সেলফ আইসোলেশনে তাদের থাকতে হচ্ছেই। কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয় ভারতের টিকা সনদ জটিলতার কথা।
বর্তমানে ভারতে যেসব টিকা অনুমোদিত, নাগরিকরা সেগুলোর যে কোনোটির দুই ডোজ নিলেও একে টিকাগ্রহণ সম্পন্ন বলে এখনও আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিচ্ছে না ভারত সরকার।
এর ফলে দুই ডোজ টিকা নেয়ার পরও ভারতীয় নাগরিকদের যুক্তরাজ্যে পৌঁছে কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে।
ভারতে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে দুই ডোজ টিকা নেয়া ব্যক্তিদের সনদ দেয়া হয় কেন্দ্রীয় সরকার পরিচালিত কোউইন অ্যাপ ও পোর্টাল থেকে।
এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রতিক্রিয়ায় ‘ভারতের টিকা সনদ নিয়ে জটিলতা’র অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন দিল্লির এক শীর্ষ স্বাস্থ্য কর্মকর্তা।
জাতীয় স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের প্রধান নির্বাহী ড. আরএস শর্মা বলেন, ‘কোউইন অ্যাপ বা করোনার টিকাবিষয়ক সনদ নিয়ে কোনো জটিলতা নেই। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনার সঙ্গে সম্পূর্ণ সঙ্গতিপূর্ণ এ ব্যবস্থা।’
ব্রিটিশ হাই কমিশনের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘ভারতের সংশ্লিষ্ট সরকারি স্বাস্থ্য সংস্থা অনুমোদিত টিকাগ্রহীতাদের টিকা সনদে কিভাবে যুক্তরাজ্যের স্বীকৃতি মিলতে পারে, সে বিষয়ে নয়া দিল্লির সঙ্গে আলোচনা চলছে লন্ডনের।’