বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়লেও পাল্লা ভারী ট্রুডোর

  •    
  • ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ১৮:০৩

ভ্যানকুভারভিত্তিক নির্বাচনবিষয়ক সংস্থা আনগুস রেইড ইনস্টিটিউটের প্রধান শাচি কার্ল বলেন, ‘একজন রাজনীতিবিদ যত জনপ্রিয়ই হন না কেন, যত বেশি সময় তিনি ক্ষমতায় থাকবেন, তত বেশি ইস্যু তৈরি হবে, তত বেশি ভাটা পড়বে তার জনপ্রিয়তায়। বেশ কয়েকটি আলোচিত কেলেঙ্কারির কেন্দ্রে ছিলেন ট্রুডো। তাই যে তুমুল জনসমর্থন নিয়ে তিনি প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, এখন আর তার প্রতি ভোটারদের সেই মুগ্ধতা নেই। তবে এটাও অস্বীকার করার উপায় নেই যে, একটি বড় সমর্থকগোষ্ঠী এখনও তার প্রতি বিশ্বস্ত।’

৪৪তম সাধারণ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ চলছে কানাডায়। পার্লামেন্টের ৩৩৮টি আসনে ভোটারসংখ্যা দুই কোটি ৭০ লাখ। একক সরকার গঠনে যেকোনো দলকে কমপক্ষে ১৭০টি আসনে জয় নিশ্চিত করতে হবে।

সময়ের ভিন্নতার কারণে কানাডার ছয়টি টাইম জোনের মধ্যে আটলান্টিক আইল্যান্ড প্রদেশের নিউফাউন্ডল্যান্ডে স্থানীয় সময় রোববার সকাল ৭টায় ভোট শুরু হয়। ভোট শেষ হবে ব্রিটিশ কলাম্বিয়া প্রদেশের পশ্চিম প্রান্তে সেখানকার স্থানীয় সময় রাত ১০টায়।

করোনাভাইরাস মহামারির কারণে রেকর্ড ১২ লাখ পর্যন্ত ভোট ডাকের মাধ্যমে পাঠানো হতে পারে বলে মনে করছে প্রশাসন।

সব মিলিয়ে ভোটের ফল জানা যেতে পারে স্থানীয় সময় সোমবার সন্ধ্যায়।

এবারের নির্বাচনে তৃতীয় মেয়াদে প্রধানমন্ত্রিত্বের জন্য লড়ছেন উদারপন্থি জাস্টিন ট্রুডো। দ্বিতীয় মেয়াদে ২০২৩ সাল পর্যন্ত তার সরকারের দায়িত্ব পালনের কথা থাকলেও মেয়াদ শেষ হওয়ার দুই বছর আগেই হচ্ছে নির্বাচন।

৪৯ বছর বয়সী ট্রুডো করোনাভাইরাস মহামারি নিয়ন্ত্রণ প্রশ্নে বিতর্কের মুখে পড়েন। বিতর্কের অবসানে আত্মবিশ্বাসী প্রধানমন্ত্রীর আগাম নির্বাচনের সিদ্ধান্ত আত্মঘাতী হতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়, ট্রুডোর আগাম নির্বাচনের সিদ্ধান্ত জুয়া খেলার শামিল। নিজ সিদ্ধান্তে বিপাকে পড়া সংখ্যালঘু সরকারের প্রধানমন্ত্রী এবার একক সরকার গঠন করতে পারবেন, নাকি উল্টো আরও আসন হারিয়ে পার্লামেন্টে বিরোধীদের শক্তিশালী হয়ে ওঠার সুযোগ দেবেন, সেটাই দেখার অপেক্ষা।

জনমত জরিপে ক্ষমতাসীন লিবারেলরা এগিয়ে থাকলেও ব্যবধান এত সামান্য যে, রক্ষণশীল নেতা এরিন ও’টুলের জয়ের সম্ভাবনাও দেখছেন অনেকে।

১৮৬৭ সাল থেকে ধারাবাহিকভাবে কানাডা শাসন করে আসছে লিবারেল আর কনজারভেটিভরা। এবারের নির্বাচনপূর্ব জরিপে দল দুটি আধিপত্য ধরে রেখেছে সমানে সমানে। চারটি ছোট দলের সমর্থন কিছুটা বাড়লেও সরকার গঠনের পর্যায়ে নেই তারা।

কেন আগাম নির্বাচন

করোনাভাইরাস প্রতিরোধী টিকা কার্যক্রম পরিচালনায় বিশ্বে কানাডা সেরা বলে দাবি ট্রুডো সরকারের। দেশকে মহামারি থেকে বের করে আনার দায়িত্ব পূর্ণ করতে তৃতীয় দফায় সরকার গঠন করতে চান প্রধানমন্ত্রী। পার্লামেন্টে বিরোধীদের ওপর নির্ভর করা ছাড়াই এ লক্ষ্য অর্জনে আগাম নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তিনি।

ট্রুডোর ভবিষ্যৎ কী

মহামারির চতুর্থ ধাক্কা আসন্ন পরিস্থিতির মধ্যে আগাম নির্বাচনের দরকার ছিল কি না, সে প্রশ্নে তোপের মুখে ট্রুডোর ভাগ্য। এ সুযোগে গ্রহণযোগ্যতা বেড়েছে প্রধান বিরোধী দলের।

খোদ প্রধান বিরোধী দলের নেতা এরিন ও’টুলই বলেন, ‘মহামারির এই সময়ে নির্বাচনের সিদ্ধান্ত অনর্থক, ঝুঁকিপূর্ণ ও স্বার্থপর। কানাডিয়ান নাগরিকের মতো আচরণ করেননি ট্রুডো।’

এমন অবস্থায় প্রধানমন্ত্রিত্ব বাঁচাতেই মরিয়া কানাডার রাজনীতিতে এককালের ‘সোনার ছেলে’ খ্যাত ট্রুডো।

ভ্যানকুভারভিত্তিক নির্বাচনবিষয়ক সংস্থা আনগুস রেইড ইনস্টিটিউটের প্রধান শাচি কার্ল বলেন, ‘একজন রাজনীতিবিদ যত জনপ্রিয়ই হন না কেন, যত বেশি সময় তিনি ক্ষমতায় থাকবেন, তত বেশি ইস্যু তৈরি হবে, তত বেশি ভাটা পড়বে তার জনপ্রিয়তায়।

‘বেশ কয়েকটি আলোচিত কেলেঙ্কারির কেন্দ্রে ছিলেন ট্রুডো। তাই যে তুমুল জনসমর্থন নিয়ে তিনি প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, এখন আর তার প্রতি ভোটারদের সেই মুগ্ধতা নেই। তবে এটাও অস্বীকার করার উপায় নেই যে, একটি বড় সমর্থকগোষ্ঠী এখনও তার প্রতি বিশ্বস্ত।’

নির্বাচনি প্রচারের শেষ দিকে রূপ পরিবর্তিত ভিন্ন বৈশিষ্ট্যের করোনাভাইরাসের ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের প্রকোপ হঠাৎ বাড়তে শুরু করে কানাডায়। এর আগেই গ্রীষ্মের শুরুতে অধিকাংশ স্বাস্থ্যবিধি শিথিল করা হয় দেশটিতে।

এ পরিস্থিতিতে পাঁচ সপ্তাহের নির্বাচনি প্রচার শেষে জরিপে আভাস, ২০১৯ সালের পুনরাবৃত্তি ঘটতে পারে এবারও। অর্থাৎ একক সংখ্যাগরিষ্ঠতার আশা ক্ষীণ। ভোটে জিতলেও আবার সংখ্যালঘু সরকার গঠন করতে হতে পারে ট্রুডোর দলকে। বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকারের সঙ্গে জোটে রয়েছে বামঘেঁষা জগমিৎ সিংয়ের নেতৃত্বাধীন নিউ ডেমোক্রেটিক পার্টি (এনডিপি)।

টার্কিশ রেডিও অ্যান্ড টেলিভিশনের (টিআরটি) প্রতিবেদনে বলা হয়, ছয় বছর দেশ শাসনের পর ট্রুডো প্রশাসনে ক্লান্তি স্পষ্ট বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। ২০১৫ সালে নিরঙ্কুশ জয়ের উচ্চাশা ২০১৯ সালের নির্বাচনে পূরণ হয়নি দলটির। এবারও ভোটারদের সমর্থন ম্লান উদারপন্থিদের প্রতি।

মন্ট্রিয়লের ম্যাকগিল ইউনিভার্সিটির রাজনীতির অধ্যাপক ড্যানিয়েল বেল্যান্ড বলেন, ‘ভোটকে ঘিরে নির্বাচনি প্রচারের শুরু থেকেই যে প্রশ্নটি ভোটারদের মনে ছিল, তা হলো সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন লিবারেল পার্টির প্রাপ্য কি না। প্রচারের শেষ প্রশ্নটি এসে ঠেকেছে, লিবারেল পার্টির আদৌ ক্ষমতায় থাকারই যোগ্যতা আছে কি না।’

নির্বাচন পর্যবেক্ষক ও সাবেক রাজনৈতিক কৌশলবিদ টিম পাওয়ার্স অবশ্য ট্রুডোর প্রধানমন্ত্রিত্ব হারানোর শঙ্কা দেখছেন না।

তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয় ট্রুডোকে বাতিলের খাতায় ফেলার কোনো কারণ নেই। সংখ্যালঘু সরকার গঠনের আশা এখনও আছে তার।’

ট্রুডোর প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন প্রতিবেশী দেশ যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনও।

এ বিভাগের আরো খবর