ভারতে করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যেই নতুন করে দেখা দিয়েছে ‘অতি ভয়ঙ্কর’ মশাবাহিত ডেঙ্গু রোগের প্রকোপ। সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ইতোমধ্যে ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে দেশের ১১টি রাজ্যে।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে নড়েচড়ে বসেছে ভারত সরকার। দ্রুত রোগী চিহ্নিত করা, জ্বরের রোগীদের জন্য বিশেষ হেল্পলাইন তৈরি এবং পর্যাপ্ত পরিমাণ টেস্টিং কিট, ওষুধ ও ব্লাড ব্যাঙ্কে পর্যাপ্ত রক্ত সংগ্রহে রাখতে রাজ্যগুলোকে পরামর্শ দিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
করোনাভাইরাস সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে কেন্দ্রের পক্ষ থেকে যে উচ্চ পর্যায়ের রুটিন বৈঠক হয়, তাতে ডেঙ্গু নিয়ে তৈরি হওয়া উদ্বেগজনক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। যে রাজ্যগুলোতে দ্রুত সংক্রমণ বাড়ছে, সেখানে আসন্ন উৎসবের মৌসুমে যাতে জমায়েত না করা হয়, সেই নির্দেশও দেয়া হয়েছে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, পশ্চিমবঙ্গ, উত্তর প্রদেশ, হরিয়ানা, দিল্লিসহ একাধিক রাজ্যে ডেঙ্গু সংক্রমণ ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। ভারত সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে উদ্বেগ জানিয়ে বলা হয়েছে, সেরোটাইপ-২ ডেঙ্গু ছড়াচ্ছে।
এই সংক্রমণ অত্যন্ত জটিল। রাজ্যে সংক্রমণের হার নিয়ন্ত্রণে রাখতে ব়্যাপিড রেসপন্স টিম পাঠানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি হেল্পলাইন চালু, মশা মারার নানা প্রক্রিয়া ও বাড়ি বাড়ি গিয়ে ডেঙ্গু রোগী চিহ্নিত করার কাজ শুরু করতে বলা হয়েছে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, অন্ধ্র প্রদেশ, গুজরাট, কর্নাটক, কেরালা, মধ্যপ্রদেশ, উত্তরপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, ওড়িশা, রাজস্থান, তামিলনাড়ু ও তেলঙ্গনায় সেরোটাইপ-২ ডেঙ্গু ধরা পড়ছে।
এর আগে আগস্ট মাসেও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এই রাজ্যগুলোতে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে নির্দেশিকা জারি করা হয়েছিল। এরপর গত ১০ সেপ্টেম্বরও নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে।
প্রায় এক মাস ধরেই অজানা জ্বরের প্রকোপ দেখা দিয়েছে উত্তরপ্রদেশ জুড়ে। ফিরোজাবাদ জেলায় গত দুই সপ্তাহেই রেকর্ড সংখ্যক মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্তদের মধ্যে অধিকাংশই শিশু।
অজানা জ্বরে শিশু মৃত্যুর কারণ জানতেই কেন্দ্রীয় দল পাঠানো হয়েছিল। তাদের রিপোর্টের ভিত্তিতেই জানা গেছে, ‘ডেঙ্গু হেমারোজিক ফিভার’ রোগে আক্রান্ত হচ্ছে অধিকাংশ। এছাড়াও ম্যালেরিয়া ও স্ক্রাব টাইফাসের কারণেও জ্বর আসছে।
পাশাপাশি দিল্লিতেও স্ক্রাব টাইফাসের প্রকোপ দেখা দিয়েছে। আপাতত চাচা নেহেরু শিশু চিকিৎসালয় ও দ্বারকার আকাশ হেলথকেয়ারে শিশুদের স্ক্রাব টাইফাসের চিকিৎসা করা হচ্ছে।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, আক্রান্তদের মধ্যে ৯০ শতাংশই শিশু। এখনও পর্যন্ত সংক্রমণ গুরুতর হা হওয়ায় অল্প ওষুধ দিয়েই চিকিৎসা হচ্ছে। সুস্থ হয়ে গেলে দুই-তিন দিনের মধ্যেই ছেড়ে দেয়া হচ্ছে।
করোনা সংক্রমণ নিয়েও স্বাস্থ্য সচিব রাজেশ ভূষণ সংক্রমণের হার সবচেয়ে বেশি থাকা ১৫টি রাজ্যে অতিরিক্ত সতর্কতা মানতে বলেছেন।
ইতোমধ্যে ১৫টি রাজ্যের সাতটি জেলাকে ‘উদ্বেগের কারণ’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এসব রাজ্যে সংক্রমণের হার পাঁচ শতাংশের বেশি।
দেশের ৩৪টি জেলায় সংক্রমণের হার ১০ শতাংশের বেশি রয়েছে বলেও জানানো হয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে।