বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

সিআইএর মিশনে আফগান নারীর দেশ ত্যাগ

  • নিউজবাংলা ডেস্ক   
  • ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ২০:২৫

তালেবানরা কাবুল দখল করে নেওয়ার পর হুড়োহুড়ি করে আফগানিস্তান ছাড়ে হাজার হাজার মানুষ। কিন্তু আফগান নারী শাকাইক বিরাশকের ক্ষেত্রে ঘটনাটি ছিল সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। রহস্যময় এক ফোন কলের মধ্য দিয়ে শুরু হয় তার দেশ ছাড়ার মিশন। 

গত ১৪ আগস্ট তালেবানরা কাবুলে দখল করে নেওয়ার পাঁচ দিন পরও নিজের অ্যাপার্টমেন্টে ঘাপটি মেরে পড়েছিলেন শাকাইক বিরাশক। এ সময়ই তার সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করেন অপরিচিত এক ব্যক্তি। বিরাশককে নিরাপদে দেশ ত্যাগ করতে সহযোগিতার প্রস্তাব দেন তিনি।

নিজেকে মার্কিন নাগরিক পরিচয় দিয়ে সেই ব্যক্তি দাবি করেন, তিনি ইউএসএইড-এর একটি প্রকল্পে আফগানিস্তানে কাজ করছিলেন।

সেই রাতেই একটি আবায়ায় নিজেকে আপাদমস্তক ঢেকে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়েন ৩৭ বছর বয়সী বিরাশক। যদিও তার মধ্যে কাজ করছিল দ্বিধা আর ভয়। বাড়ির সামনেই ছিল তালেবান সেনাদের পাহারা। দুরুদুরু বুকে তাদের সামনে দিয়েই হেঁটে যান বিরাশক। তারপর একটি সবুজ রঙের টয়োটা করোলা গাড়িতে গিয়ে চড়ে বসেন।

আধুনিক আফগান নারী বিরাশক। বেড়ে ওঠেছেন যুক্তরাষ্ট্রে। কারণ ১৯৮৯ সালে গৃহযুদ্ধ শুরু হলে আফগানিস্তান থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পালিয়ে গিয়েছিল তার পরিবার। কয়েক বছর আগে তিনি দেশে ফিরে আসেন এবং বিদেশি বিভিন্ন প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত হয়ে আফগান নারীদের আধুনিকায়ন ও শিক্ষা নিয়ে কাজ করছিলেন।

তালেবানরা রাতারাতি কাবুল দখল করে নেওয়ার পর কী করণীয় বুঝে উঠতে পারছিলেন না বিরাশক। কাবুলের অভিজাত এলাকায় বহুতল এক ভবনের একটি ফ্ল্যাটে বাস করছিলেন। অন্যরা যেভাবে হুড়োহুড়ি করে কাবুল বিমানবন্দরের ভেতরে প্রবেশের চেষ্টা করছিল, তেমনটি করা অসম্ভব মনে হয়েছিল তার কাছে। এ অবস্থা সৃষ্টির বেশ কয়েকদিন আগেই তিনি যুক্তরাষ্ট্রগামী একটি বিমানের টিকিট বুকিং দিয়ে রেখেছিলেন। কিন্তু ১৪ আগস্ট প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি পালিয়ে যাওয়ার পর পরিস্থিতি সম্পূর্ণ বদলে যায়। নিজের পরিণতিকে নিয়তির উপর ছেড়ে দিয়েছিলেন। এর মধ্যেই যোগাযোগ করেন অপরিচিত সেই ব্যক্তি।

সেদিন রাত ১১টার সময় বাড়ি থেকে বের হন বিরাশক। বাড়ির সামনে থাকা করোলা গাড়িটিতে চড়ার পর সেটি ঝড়ের বেগে চলতে শুরু করে। ট্রাফিক আইন অমান্য করে গাড়িটি উল্টো দিক দিয়ে যাচ্ছিল। গাড়ির ভেতরে আরও দুজন ছিলেন যারা তার মতোই আফগানিস্তান ত্যাগ করতে যাচ্ছিলেন। গাড়িটি চালাচ্ছিলেন এক আফগান। চেকপোস্টগুলোতে তিনি পশতু ভাষায় তালেবানদের প্রশ্নের জবাব দিচ্ছিলেন। গাড়িতে থাকা অবস্থায় রহস্যময় সেই মার্কিন ব্যক্তিটির সঙ্গে একটি মেসেজিং প্ল্যাটফর্মে যুক্ত ছিলেন বিরাশক। অবাক করা ব্যপার হলো- অজানা কোন স্থান থেকে মেসেজের মাধ্যমেই সেই ব্যক্তিটি গাড়িটির গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ করছিলেন। কোনো ভুল পথ ধরলেই তিনি সংশোধন করে সঠিক পথে যাওয়ার নির্দেশনা দিচ্ছিলেন।

বিরাশক এক মেসেজে সেই ব্যক্তিটিকে জিজ্ঞেস করেন, ‘আমরা কখন আপনার কাছে পৌঁছাবো?’ এর উত্তরে ব্যক্তিটি লিখেন, ‘আমার বন্ধুদের সঙ্গে আপনার দেখা হবে প্রথম।’

কিছুক্ষন পর গাড়িটি এক জায়গায় গিয়ে থামে। সেখানেই দেখা মেলে এক দল আফগান সেনার। তারা বিরাশককে আরেকটি গাড়িতে নিয়ে তোলেন। সেই গাড়িতে করেই আনুমানিক এক মাইল দূরের একটি এলাকায় একটি ক্যাম্পে গিয়ে পৌঁছায় দলটি।

মার্কিন গণমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্টের এক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, সেই ক্যাম্পটি ছিল একদল মার্কিন গোয়েন্দার। সেখানে পৌঁছানোর পরই বিরাশকসহ অন্যদেরকে পরিবারের সঙ্গে কথা বলতে দেয়া হয়। তারপরই তাদের ফোন বাজেয়াপ্ত করা হয়। সেই রাতে তারা ওই ক্যাম্পেই অবস্থান করেন।

পরদিন বিকালে হেলিকপ্টারে করে তাদের কাবুল বিমানবন্দরের ভেতরে নিয়ে যাওয়া হয়। এই যাত্রায় শুধু বিরাশক আর অন্য দুজন ছিলেন না। তিনটি হেলিকপ্টার বোঝাই করে আরও বেশ কিছু মানুষকে বিমানবন্দরের ভেতরে নিয়ে যাওয়া হয়।

বিমানবন্দর থেকে হাঙ্গেরিয়ান সেনাদের সহায়তায় একটি বিমানে চড়ে প্রথমে উজবেকিস্তান যান বিরাশক। উজবেক বিমানবন্দরে তিন দিন অবস্থান করার পর আরেকটি বিমানে চড়ে তিনি হাঙ্গেরির বুদাপেস্টে যান। গত ২৬ আগস্ট যুক্তরাষ্ট্রের কলোরাডোতে পৌঁছে পরিবারের সঙ্গে মিলিত হন তিনি।

দীর্ঘ যাত্রাপথের পুরোটা সময়জুড়েই রহস্যময় সেই মার্কিন ব্যক্তিটির সঙ্গে মেসেজের মাধ্যমে যুক্ত ছিলেন বিরাশক।

ওয়াশিংটন পোস্ট জানিয়েছে, বিরাশক এখনও জানেন না মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ-এর মিশনেই তাকে আফগানিস্তান থেকে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। আফগানিস্তানে অবস্থান করা মার্কিন সেনারা ছাড়াও মানুষ সরিয়ে নেওয়ার কাজে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে মার্কিন গোয়েন্দারাও। বিরাশকের ঘটনার সূত্র ধরে টাম্মি থরপি নামে সিআইএ-এর মুখপাত্র এই ভূমিকার কথা স্বীকার করলেও তিনি বিস্তারিত কিছু জানাতে চাননি।

এ বিভাগের আরো খবর