আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুল গত মাসে ঘিরে ফেলার একপর্যায়ে পুরো দেশের দখল নিয়ে নেয় তালেবান।
১৫ আগস্ট কাবুল পতনের কয়েক সপ্তাহ পর ৩৩ জনকে নিয়ে সংগঠনটি গঠন করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।
আফগানিস্তানের ক্ষমতা কুক্ষিগত করার পর বিভিন্ন সময়ে তালেবান নেতারা অন্তর্ভুক্তিমূলক বিশেষ করে নারী প্রতিনিধিসহ মন্ত্রিসভা গঠনের কথা বললেও আদতে তা হয়নি।
ওই ৩৩ জনের মধ্যে নারী বা জাতিগত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের কোনো প্রতিনিধিই নেই।
মন্ত্রিসভায় নারীর উপস্থিতি না দেখে কাবুলে বিক্ষোভও করেন আফগান নারীরা। পাশাপাশি নারী অধিকারের দাবিতে তারা রাস্তায়ও নামেন।
তালেবানের আগের শাসনামলে নারী অধিকার ব্যাপকভাবে খর্ব করা হয়। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি কর্মস্থলে যাওয়ার অনুমতি ওই শাসনামলে নারীদের ছিল না।
অধিকারের দাবিতে আফগান নারীদের সাম্প্রতিক বিক্ষোভ দমন করে তালেবান, ছোড়া হয় গুলি। এ ছাড়া বিক্ষোভের সংবাদ সংগ্রহের ‘অপরাধে’ নির্যাতনের শিকার হন সাংবাদিকরা।
কারাগারে বন্দি রেখে স্থানীয় দুই সাংবাদিককে নির্মমভাবে পেটানোর খবর প্রকাশ হয় আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে।
এমন পরিপ্রেক্ষিতে এক শিশুর ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বেশ ভাইরাল হয়েছে।
এতে দাবি করা হয়, ঝলমলে পোশাক পরিহিত নিষ্প্রাণ পড়ে থাকা আফগান শিশুটিকে তালেবানের যোদ্ধারা হত্যা করেছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একজন ছবিটি পোস্ট করে শিরোনামে লিখেছেন, ‘ছবিটি দেখে আমার হৃদয় ভেঙে গিয়েছে।
‘ছোট্ট এই পরীটি কী এমন কাজ করেছে, যার জন্য তাকে প্রাণ দিতে হলো? তালেবান ও তাদের সমর্থকদের ধিক্কার জানাই!’
ইন্ডিয়া টুডের অ্যান্টি ফেইক নিউজ ওয়ার রুম (এএফডব্লিউএ) ছবিটির দাবি নিয়ে অনুসন্ধানে নামে।
জানা যায়, ছবিটি ছয় বছর বয়সী লুবনার। ২০১৯ সালে পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশে সাপের কামড়ে তার মৃত্য হয়।
পাকিস্তানের বিভিন্ন স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে ২০১৯ সালের প্রতিবেদনে বলা হয়, খাইবার পাখতুনখোয়ার মোহমান্দ জেলার ইয়াক্কাঘুন্দ তেহসিল শহরের মেয়ে লুবনা।
সাপের কামড়ে অচেতন লুবনাকে স্থানীয় শাবকাদার হাসপাতালে নেয়া হয়।
তবে হাসপাতালে সাপের বিষ প্রতিরোধী ইঞ্জেকশন না থাকায় চিকিৎসকরা লুবনাকে পেশোয়ারের হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলেন।
পেশোয়ারে যাওয়ার পথেই মৃত্যু হয় লুবনার।
হাসপাতালে ওষুধপত্রের অভাবে মেয়ের মৃত্যু হয়, এ অভিযোগ করেছিলেন লুবনার বাবা।
পেশোয়ারে যেতে হাসপাতাল থেকে যে অ্যাম্বুলেন্স দেয়া হয়েছিল, তাতে অক্সিজেন কিট ছিল না বলেও অভিযোগ লুবনার বাবার।
লুবনার মৃত্যু ঘিরে পাকিস্তানজুড়ে ক্ষোভে ফেটে পড়ে মানুষ। জাস্টিস ফর লুবনা হ্যাশট্যাগ দিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আন্দোলন শুরু হয়।
পাকিস্তানের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়, আন্দোলনের মুখে খাইবার পাখতুনখোয়ার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের চার চিকিৎসককে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করে পাকিস্তান সরকার।
দীর্ঘ দুই দশক পর ক্ষমতায় ফের এসে তালেবান এরই মধ্যে দমনমূলক বিভিন্ন পদক্ষেপ নিলেও লুবনার মৃত্যুর জন্য সংগঠনটি দায়ী নয়।